শুভ্র সমুজ্জ্বল, হে চির-নির্মল শান্ত অচঞ্চল ধ্রুব-জ্যোতি (shubhro shomujjol he chiro nirmol)
শুভ্র সমুজ্জ্বল, হে চির-নির্মল শান্ত অচঞ্চল ধ্রুব-জ্যোতি
অশান্ত এ চিত কর হে সমাহিত সদা আনন্দিত রাখ মতি॥
দুঃখ-শোক সহি অসীম সাহসে
অটল রহি যেন সম্মানে যশে
তোমার ধ্যানের আনন্দ-রসে
নিমগ্ন রহি হে বিশ্বপতি॥
মন যেন না টলে খল কোলাহলে, হে রাজ-রাজ!
অন্তরে তুমি নাথ সতত বিরাজ, হে রাজ-রাজ!
বহে তব ত্রিলোক ব্যাপিয়া, হে গুণী,
ওঙ্কার-সঙ্গীত-সুর-সুরধুনী,
হে মহামৌনী, যেন সদা শুনি
সে সুরে তোমার নীরব আরতি॥
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। 'ভারতবর্ষ' পত্রিকার 'জ্যৈষ্ঠ ১৩৪১' সংখ্যায় গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। ধারণা করা হয়, গানটি রচিত হয়েছিল বৈশাখ মাসের শেষের দিকে। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৪ বৎসর ১১ মাস।
- ভাবসন্ধান: আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নিজেকে সদা কলুষমুক্ত রাখার জন্য পরমস্রষ্টার প্রতি কবির প্রার্থনা ও নিবেদন, এই গানে উপস্থাপিত হয়েছে। গানের শুরুতে স্রষ্টাকে কবি সম্বোধন করেছেন পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে শুভ্র সমুজ্জ্বল এবং চির নির্মল বিশেষণে। তারপরে স্রষ্টার শান্ত, অবিচল, চিরন্তন জ্যোতির্ময় নামে অভিহিত করেছেন। মূলত গানটির প্রথম পংক্তিতে কবি বন্দনা করেছেন স্রষ্টার চিরন্ত রূপের। আর এর পরের পংক্তিতেই তিনি স্রষ্টার কাছে তাঁর আত্মশুদ্ধির প্রার্থনা রেখেছেন, যেন কবি তাঁর চিত্তের সকল অস্থিরতাকে দূরে সরিয়ে, সদা আনন্দে ঈশ্বরে নিমগ্ন থাকতে পারেন।
এই প্রার্থনার ধারাবাহিকতা পাওয়া যায় গানটির অন্তরাতে। এখানে কবি স্রষ্টার কাছে এই সদয় করুণা চান, যেন তিনি অসীম সাহসিকতার সাথে সকল দুঃখ-শোককে জয় করতে পারেন। যেন যশ এবং সম্মানের গৌরবে তিনি আত্মহারা না হন। আনন্দ-বেদনার প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির উত্থান-পতনের ভিতরে তিনি যেন খুঁজে পান স্রষ্টার অসীম লীলার আনন্দ-রস। স্রষ্টার কাছে কবির একান্ত নিবেদন, যেন তিনি এই পরম আনন্দ রসে নিমগ্ন থাকার সৌভাগ্য লাভ করেন।
সঞ্চারীতে এই প্রার্থনারই আভাষ পাওয়া যায়। কবি প্রার্থনা করেন যেন মিথ্যা সংসার কোলাহলে আদর্শচ্যুত না হন, যেন তাঁর অন্তরে চিরন্তন স্রষ্টা সদা বিরাজ করেন।
সঞ্চারী স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করতে চেয়েছেন নৈশব্দের অপার মহিমার ভিতর দিয়ে। কবি অনুভব করেছেন জগৎজুড়ে প্লাবিত পরমস্রষ্টার সঙ্গীতের ওঙ্কাররূপী অনাহত নাদের অপার মহিমা। অনাহত নাদের নৈশব্দ সুরলহরী ধারণ করে স্রষ্টা আহত নাদের জগতে নির্বাক। তাই তিনি মহামৌনী। নৈশব্দ হলো ঈশ্বরের ভাষা। তাই কবি নৈশব্দ-ধ্যানের মধ্য দিয়ে স্রষ্টার কাছে নিজেকে নিবেদন করতে চেয়েছে অনাহত নাদের নৈশব্দ মহিমায়।
- গ্রন্থ:
- গানের মালা।
- প্রথম সংস্করণ। আশ্বিন ১৩৪১ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৩৪)। [গানের মালা-৩৯]। লাচ্ছাশাখ- ত্রিতালী
- নজরুল রচনাবলী। জন্মশতবর্ষ সংকলন ষষ্ঠ খণ্ড। বাংলা একাডেমী, ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯, জুন ২০১২। গানের মালা। ৩৯। লাচ্ছাশাখ- ত্রিতালী। পৃষ্ঠা: ২১৫-২১৬।
- সুরলিপি। আগষ্ট ১৯৩৪ (শ্রাবণ ১৩৪১)। জগৎঘটক-কৃত স্বরলিপি গ্রন্থ। প্রকাশক: কাজী নজরুল ইসলাম
- গানের মালা।
- পত্রিকা: ভারতবর্ষ [জ্যৈষ্ঠ ১৩৪১ (মে-জুন ১৯৩৪)। স্বরলিপিকার: জগৎ ঘটক] [নমুনা]
- রেকর্ড: এইচএমভি [অক্টোবর ১৯৩৪ (আশ্বিন-কার্তিক ১৩৪১)। শিল্পী: আঙ্গুরবালা ও ধীরেন দাস। নম্বর এন ৭২৯০] [শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:
- জগৎ ঘটক। ভারতবর্ষ [জ্যৈষ্ঠ ১৩৪১ (মে-জুন ১৯৩৪)। [নমুনা]
- জগৎ ঘটক। সুরলিপি। নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা। ১৪১০ বঙ্গাব্দ আগষ্ট, ২০০৩। [নমুনা]
- আহসান মুর্শেদ। নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (ঊনবিংশ খণ্ড)। ২১ সংখ্যক গান] [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ভক্তি [সাধারণ]
- সুরাঙ্গ: খেয়ালাঙ্গ
- গ্রহস্বর:
- গা [জগৎ ঘটক-কৃত স্বরলিপি]
- সগা [আহসান মুর্শেদ-কৃত স্বরলিপি]