সই, পলাশ-বনে রঙ্ ছড়ালো কে (soi, polash bone rong chhoralo ke)
সই, পলাশ-বনে রঙ ছড়ালো কে?
সেই রঙে রঙিন মানুষটিরে কাছে ডেকে দে, লো।
সে ফাগুন জাগায় আগুন লাগায়,
স্বপন ভাঙায় হৃদয় রাঙায় রে,
তা'রে ধরতে গেলে পালিয়ে সে যায় রঙ ছুঁড়ে চোখে॥
সে ভোরের বেলায় ভ্রমর হয়ে পদ্মবনে কাঁদে
তার বাঁকা ধনুক যায় দেখা ঐ সাঁঝ-আকাশের চাঁদে।
সেই গভীর রাতে আবির হাতে
রঙ খেলে ফুল-পরীর সাথে লো
তার রঙিন সিঁথি দেখি প্রজাপতির পালকে॥
- ভাবার্থ: বর্ণাঢ্য বসন্তের অপরূপ বর্ণনা অপরূপ রূপকতার মধ্য দিয়ে উপস্থাপিত হয়েছে এই গানে। কবি কল্পলোকের রঙিন চোখে প্রকৃতিকে দেখেছেন এক অপার্থিব সৌন্দর্যের বিহার। যার নেপথ্যে রয়েছে রঙিন মানুষ তথা বিমূর্ত ঋতুরাজ বসন্ত। তারই বর্ণিল ছোঁয়ায় প্রকৃতি বরণে বর্ণে মূর্তমান হয়ে ওঠে। সে পলাশ-বনকে রক্তিম করে তোলে, শীতের সুপ্ত দশা থেকে বসন্তের যৌবনরাগে ফাগুন মাসকে জাগিয়ে তোলে। সে ঘুম ভাঙানিয়া ছোঁয়ায় প্রকৃতির সাথে সাথে কবি-মন জেগে উঠে কল্পলোকের রঙিন জগতে।
সে স্বপনের কল্পলোক ভেঙে হৃদিরঞ্জন রূপে যৌবনকে মূর্তমান করে তোলে। সে নিজে অধরা থেকে রঙের পরশ লাগিয়ে দেয় দৃষ্টিতে। সে ভোরের সোনালি আলোয় ভ্রমর হয়ে পুষ্পবিহীন পদ্মবনে পুষ্পরাণীর বিরহে কাঁদে। তার বঙ্কিম ভুরু যেন সাঁঝ-আকাশের চাঁদ হয়ে বিরাজ করে। গভীর রাতে সে যেন ফুল-পরীদের সাথে ফুলে ফুলে রক্তিম আবির ছড়িয়ে দেয়। তার রক্তিম সিঁথির প্রণয় রঙিন ছোঁয়া লেগে থাকে কল্পলোকের প্রজাপতির পালকে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় ১৩৪৭) এইচএমভি গানটির একটি রেকর্ড প্রকাশ করেছিল। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৪১ বৎসর ১ মাস।
- রেকর্ড: এইচএমভি। [জুন ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় ১৩৪৭)। নম্বর এন ১৭৪৬৯। শিল্পী: পারুল সেন। সুর: নজরুল ইসলাম। শ্রেণি- ঝুমুর।] [শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: সুধীন দাশ। নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি তৃতীয় খণ্ড (নজরুল ইন্সটিটিউট)। প্রথম প্রকাশ, দ্বিতীয় মুদ্রণ [নজরুল ইন্সটিটিউট। বৈশাখ ১৪০২। এপ্রিল ১৯৯৬। ২৪ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ১১৩-১১৫] [নমুনা]
- পর্যায়: