সন্ধ্যামালতী যবে ফুলবনে ঝুরে রুদ্র-বিহঙ্গে (sondhyamaloti jobe fulbone)
সন্ধ্যামালতী যবে ফুলবনে ঝুরে
কে আসি' বাজালে বাঁশি ভৈরবী সুরে॥
সাঁঝের পূর্ণ চাঁদে অরুণ ভাবিয়া
পাপিয়া প্রভাতী সুরে উঠিল গাহিয়া
ভোরের কমল ভেবে সাঁঝের শাপ্লা ফুলে
গুঞ্জরে ভ্রমর ঘুরে' ঘুরে' ॥
বিকালের বিষাদে ঢাকা ছিল বনভূমি
সকালের মল্লিকা ফুটাইলে তুমি'
রাঙিয়া ঊষার রঙে গোধূলি-লগন
শোনালে আশার বাণী বিরহ-বিধুরে॥
- ভাবার্থ: ধানশ্রী রাগে নিবদ্ধ এই গানে প্রকৃতি এবং রাগের ভাবগত রূপের যুগপৎ প্রকাশ। যদিও অধিকাংশ শাস্ত্রমতে ধানশ্রী পরিবেশনের সময় দিবা তৃতীয় প্রহর। কিন্তু এই রাগটি দিবারাত্রির সন্ধিকালীন রাগ হিসেবে পরিবেশিত হয়ে থাকে। ধানশ্রী ঠাটের বিচারে কাফির অন্তর্গত হলেও এর চলনে ভৈরবী অঙ্গের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। এই কারণে একে অনেক সময় সন্ধ্যার ভৈরবী বলা হয়। কবি এই গানকে উপস্থাপন করেছেন সন্ধ্যাবেলার ভৈরবী হিসেবেই। অর্থাৎ ধানশ্রীর প্রভাবে সন্ধ্যার প্রকৃতি হয়ে ওঠে প্রভাতের প্রকৃতি, কবি তাঁর এই গানে এই বিষয়টিকে নানা উদাহরণে তুলে ধরেছেন।
দিবা তৃতীয় প্রহরের শেষে সন্ধ্যামালতী ধীরে ধীরে পাঁপড়ি মেলে, সন্ধ্যাবেলায় এর ফুলগুলো ধীরে ধীরে ঝরে পড়ে। কবি সন্ধ্যামালতীর এই ঝরে পড়াকে প্রকৃতির বিদায়ী অশ্রুর সাথে তুলনা করেছেন। প্রকৃতিতে বিদায়ী করুণ সুর বেজে উঠে সন্ধ্যার ভৈরবী তথ্যা ধানশ্রীর সুরে সুরে। প্রকৃতিও যেন সাড়া দেয় সেই সুরে।
ধানশ্রীর সুরে ভৈরবীর মায়া থাকে, তাই সন্ধ্যার পূর্ণ চাঁদকে পাপিয়া প্রভাতের সূর্য ভেবে ডেকে ওঠে। ভোরের প্রস্ফুটিত পদ্ম-শাপলা ভেবে, ভ্রমর ফুলের উপর গুঞ্জন করতে থাকে। এই রাগ প্রকৃতির উপর এতটাই প্রভাব বিস্তার করে যে- পাপিয়া, ভ্রমর বিভ্রান্ত হয়।
গোধুলীলগনে প্রকৃতিতে যে বিষণ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে, ধানশ্রী সেখানে প্রভাতের প্রসন্নতা ছড়িয়ে দেয়। তার প্রভাবে মল্লিকা ফুল ফুটে ওঠে, গোধূলি-লগন হয়ে ওঠে সূর্যোদয়ের রঙে রঞ্জিত। তাই শেষ বিকেলের বিদায়ী করুণ মুহুর্তে ধ্বনিত হয় নতুন দিনের আশার বাণী।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ভারতবর্ষ পত্রিকার [মাঘ ১৩৪৫ বঙ্গাব্দ (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯) সংখ্যায় গানটি জগৎ ঘটক-কৃত স্বরলিপি-সহ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৯ বৎসর ৮ মাস।
- বেতার। হারামণি-৮। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। রবিবার, ৩০ জুন ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ। ১৬ আষাঢ় ১৩৪৭)। ৮.০০-৮.১৯। মিনিট। বিষয়: রাগ 'ধানেশ্রী'।
- সূত্র: বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ, ১২শ সংখ্যার অনুষ্ঠানসূচী [পৃষ্ঠা: ৬৭১]
- সূত্র: বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ, ১২শ সংখ্যার অনুষ্ঠানসূচী [পৃষ্ঠা: ৬৭১]
- পত্রিকা: ভারতবর্ষ ।মাঘ ১৩৪৫ বঙ্গাব্দ (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯)। স্বরলিপি: জগৎ ঘটক। [নমুনা]
- রেকর্ড: এইচএমভি [মার্চ ১৯৪৪ (ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৪৬)] এন. ২৭৪৩৯। শিল্পী: ধীরেন্দ্রচন্দ্র মিত্র।
- সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:
- জগৎ ঘটক। ভারতবর্ষ [মাঘ ১৩৪৫ বঙ্গাব্দ (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯)। [নমুনা]
- সুধীন দাশ। নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (নবম খণ্ড)। প্রথম প্রকাশ, তৃতীয় মুদ্রণ [কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। ২ পৌষ, ১৩৯৯ বঙ্গাব্দ/ ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দ। ২৩ সংখ্যক গান] [নমুনা]
- পর্যায়