স্নিগ্ধ শ্যাম-বেণী-বর্ণা এসো মালবিকা (snigdho shyam-beni-borna)

স্নিগ্ধ-শ্যাম-বেণী-বর্ণা এসো মালবিকা
অর্জুন-মঞ্জরি-কর্ণে গলে নীপ-মালিকা, মালবিকা॥
         ক্ষীণা তন্বী জল-ভার-নমিতা
         শ্যাম জম্বু-বনে এসো অমিতা
আনো কুন্দ মালতী যুঁই ভরি থালিকা, মালবিকা॥
        ঘন নীল বাসে অঙ্গ ঘিরে
        এসো অঞ্জনা রেবা-নদীর তীরে
        পরি' হংস-মিথুন আঁকা শাড়ি ঝিল্‌মিল্
        এসো ডাগর চোখে মাখি সাগরের নীল
ডাকে বিদ্যুৎ ইঙ্গিতে দিগ্‌-বালিকা, মালবিকা॥

  • ভাবসন্ধান: কালিদাসের মালবিকাগ্নিমিত্র নাটকের অপরূপা নায়িকা মালবিকা। তবে এই গানের মালবিকা কবির স্বপ্ননায়িকা। কবি কল্পনায় মালবিকাগ্নিমিত্রের নায়িকা আর কবির স্বপ্ন নায়িকা একাকার হয়ে গেছে এই গানে।

    কালিদাসের কাব্যে শ্যামবর্ণা হলো গৌরবর্ণা। আর বেণী হলো দুটি রূপের সংমিশ্রিত রূপ। কবি  'স্নিগ্ধ-শ্যাম-বেণী-বর্ণা' সমাসবদ্ধ পদের মধ্য দিয়ে আহবান করেছেন সেই স্বপলোকের মালবিকাকে, যার রূপ স্নিগ্ধ এবং গৌরবর্ণের সংমিশ্রণে সৃষ্ট। কবি মালবিকাকে দেখতে চেয়েছেন, প্রকৃতির অলঙ্কার ও আভরণের সুসজ্জিতা হিসেবে। তাই কবির মালবিকা এই গানে আহুত হয়েছেন- অর্জুন পুষ্পমঞ্জরী (মৃদুহলুদ বর্ণ) শোভিত কর্ণ এবং কদম ফুলের মালা ধারণকারিণী নায়িকা হিসেবে। মেঘদূতের বিরহিণী নায়িকার মতো সে ক্ষীণা-তন্বী, জলের ঘড়ার ভারে আনতা। এই অমিতা (অসীম রূপধারণী) মালবিকাকে তিনি শ্যামল জম্বুবনে (জামবাগান) আহ্বান করেছেন। কবির প্রত্যাশা, তাঁর স্বপ্নলোকের মালবিকা- কুন্দ, মালতি, যুঁই ফুলের ডালা নিয়ে কবিকে প্রেমের অর্ঘ্য নিবেদন করবেন।

    কবি কামনা করেন অঞ্জনা বা রেবা নদীর তীরে মালবিকা তার অতুলনীয় সৌন্দর্য নিয়ে উপস্থিত হবে। তার পরনে থাকবে ঝলমলে ঘন-নীল বর্ণের হংসমিথুনে অলঙ্কৃত শাড়ি। তার বিকশিত নীলাভ সাগরের চোখে থাকবে দিগ্‌বালিকার প্রেম-তড়িৎ ইঙ্গিত। কবির কল্পলোকের বাসনার ভিতর দিয়েই গানটির সমাপ্তি ঘটেছে।

  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। বুলবুল পত্রিকার পৌষ-চৈত্র ১৩৪০ (ডিসেম্বর ১৯৩৩- এপ্রিল ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ) সংখ্যায় গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।  এই সময় নজরুলের বয়স ৩৪ বৎসর ছিল ৭-৯ মাস।

  • গ্রন্থ: গানের মালা প্রথম সংস্করণ [আশ্বিন ১৩৪১ বঙ্গাব্দ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ)। ৩০। মিয়াকি মল্লার-তেতালা]
  • পত্রিকা: বুলবুল [পৌষ-চৈত্র ১৩৪০ (ডিসেম্বর ১৯৩৩- এপ্রিল ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ)]
  • রেকর্ড:
    • এইচএমভি।  [১৯৩৪ (১৩৪০)। শিল্পী: যুথিকা রায়। প্রশিক্ষক ধীরেন দাস। রেকর্ডটি বাতিল হয়ে যায়]
    • এইচএমভি।  [আগষ্ট ১৯৩৫ (শ্রাবণ-ভাদ্র ১৩৪২)। শিল্পী: দেবেন বিশ্বাস।  রেকর্ডটি বাতিল হয়ে যায়]
    • এইচএমভি। [মে ১৯৩৬ (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৩)। এন ৯৭২৭। শিল্পী: আব্বাসউদ্দীন।][শ্রবণ নমুনা]
  • স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: সুধীন দাশ। [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, ষষ্ঠ খণ্ড (নজরুল ইন্সটিটিউট, ফাল্গুন ১৪০৩। ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭)-এর ২৪ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ১০৭-১০৯।]  [নমুনা]
  • পর্যায়

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।