হংস-মিথুন ওগো যাও ক'য়ে যাও। (hongsho mithun ogo jao)

হংস-মিথুন ওগো যাও ক'য়ে যাও।
বৈশাখী তৃষ্ণার জল কোথা পাও॥
কোন্ মানস-সরোবর জলে
পদ্মপাতার ছায়া-তলে,
পাখায় বাঁধিয়া পাখা দু’জনে প্রখর বিরহ দাহন জুড়াও॥
অলস দুপুর মোর কাটে না একা,
ঝ’রে যায় চন্দন-পত্রলেখা।
কখন আসিবে মেঘ নভে
মিটিবে আমার তৃষ্ণা কবে,
তৃষায় মূর্চ্ছিতা চাতকী কোথায় তাহার ঘনশ্যাম, ব’লে দাও॥

  •  ভাবসন্ধান: এটি সারঙ্গ-রঙ্গ গীতি-আলেখ্যের প্রথম প্রচারের তৃতীয় গান। এটি প্রকৃতি ও প্রেম পর্যায়ের গান। এই গানে কবি বৈশাখের জলহীন রুক্ষ প্রকৃতি এবং সঙ্গীহীনতার হাহাকারকে তুলে ধরেছেন।

    বৈশাখের তপ্ত দাবদাহে ধরিত্রী তৃষ্ণাতুর। কবি পরিযায়ী হংসমিথুনের কাছে পরম কৌতুহলে জানতে চান যে, কোথায় গিয়ে তারা তৃষ্ণার জল পায়। কোন্ পদ্ম-পাতায় ছাওয়া মানস-সরোবরের জলে পাখায় পাখায় ঝাপটি ধরে বিরহের দহন জ্বালা জুড়ায়।

    প্রেমিকার বিরহদগ্ধ সঙ্গীবিহীন অসহ প্রহর বয়ে যায়। প্রকৃতির চন্দনপত্রের মতো তার মনোলোকের পত্রলেখা ঝরে যায়। প্রকৃতি প্রতীক্ষায় থাকে, কখন তার আকাশ জুড়ে মেঘের সঞ্চার হবে, বর্ষার জলধারা তার তৃষ্ণা মেটাবে। গ্রীষ্মের দাবদাহে মূর্চ্ছিতা প্রায় চাতকী। কোথায় বা তার সজল মেঘ, শ্যামল প্রকৃতি। প্রেমিকার মনেও এমনই হাহাকার ওঠে, কখন মিটবে তারও প্রেমের তৃষ্ণা। প্রেমের চাতকী হয়ে প্রেমিকা মূর্চ্ছিতা চাতকীর মতো অপেক্ষা করে তার ঘনশ্যামরূপী প্রেমিকার জন্য। কিন্তু তার প্রেমের সন্ধান মেলে না, তাই না জানার ব্যকুলতায় প্রেমিকার মনে হাহাকর ওঠে- বলে দাও- কোথায় সে।

     
  • রচনাকাল ও স্থান:   গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু যায় নি। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ৬ এপ্রিল  (শনিবার ২৪ চৈত্র ১৩৪৬), গানটি প্রথম সারঙ্গ রঙ্গ গীতি আলেখ্যের সাথে প্রচারিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ১০ মাস।
     
  • গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১৭৯৫। রাগ: বড় হংস সারং। তাল: ত্রিতাল। পৃষ্ঠা: ৫৩২-৫৩৩]
     
  • বেতার: 
    • সারঙ্গ রঙ্গ (গীতি আলেখ্য. সারঙ্গ অঙ্গের রাগভিত্তিক অনুষ্ঠান)                
      • প্রথম প্রচার: কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ৬ এপ্রিল ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ২৪ চৈত্র ১৩৪৬), সান্ধ্য অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৭.১৫-৭.৫০ মিনিট। শিল্পী: শৈল দেবী [পাণ্ডুলিপি]
              [সূত্র: বেতার জগৎ-এর ১১শ বর্ষ, ৭ম সংখ্যা অনুষ্ঠান সূচী। পৃষ্ঠা: ৩৪০, ৩৬৯]
      • দ্বিতীয় প্রচার: কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ২৩ নভেম্বর ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ৭ অগ্রহায়ণ ১৩৪৭)। তৃতীয় অধিবেশন। ৮.০০-৮.৩৯।
               [সূত্র: বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ ২২ সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ১২৮৬]
      • তৃতীয় প্রচার: ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দ (রবিবার, ৩ ফাল্গুন ১৩৪৮)। কলকাতা বেতার কেন্দ্র-১। তৃতীয় অধিবেশন। ৭.৪৫-৮.২৯।
                [সূত্র:  The Indian listener. Vol VII. No 3, page 79]
  • স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: জগৎ ঘটক। (নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা। সেপ্টেম্বর, ২০০৫)। গান সংখ্যা ১৯। বড়-হংস সারং-ত্রিতাল। পৃষ্ঠা-৪৬-৪৮। [নমুনা]

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।