হে মায়াবী বলে যাও
হে মায়াবী বলে যাও।
কেন দখিন হাওয়ার মত ফুল ফুটিয়ে চলে যাও॥
কেন ফাল্গুন এনে আনো বৈশাখী ঝড়,
কেন মন নিয়ে মনে রাখ না মনোহর;
কেন মালা গেঁথে বুকে তুলে পায়ে দলে যাও॥
কেন সাগরের তৃষ্ণা এনে দাও নাকো জল,
তুমি প্রেমময় নাকি মায়া-মরীচিকা ছল?
কেন হৃদয়-আকাশে এনে গোধূলি-লগন
অসীম শূন্যে গলে যাও॥
- ভাবসন্ধান: প্রপঞ্চময় জগতে জুড়ে প্রতিনিয়ত চলেছে রহস্যময় মায়ার খেলা। কবি এই খেলায় যেন শুধু দর্শক মাত্র। তিনি খেলার কারণ ও লক্ষ্য জানেন না। যাঁর অদৃশ্য ইচ্ছায় ঘটে চলেছে এই লীলা। কবি তাঁকে সম্বোধন করেছেন 'মায়াবী' নামে।
এই মায়াবীই হলেন পরমসত্তা। যাঁর ইচ্ছার বাইরে কিছু ঘটে না। বিশ্বজগত জুড়ে চলেছে যে বৈপরিত্যের দ্বন্দ্ব, এই মায়াবী রচনা করে চলেছেন সেই দ্বন্দ্বের খেলা। যেন বসন্তের দখিনা হাওয়ার মতো মানব চিত্তে সৌন্দর্য-পূষ্প ফুটিয়ে এই মায়াবী হারিয়ে যান অদৃশ্যলোকে।
এই মায়াবী ফাগুন প্রকৃতিতে আনেন যৌবন, আনেন মনোবনে বর্ণাঢ্য বসন্ত, আনেন সৌন্দর্য-লীলা, আবার বৈশাখী প্রলয়ঙ্গকরী ঝড়ে আনেন বিনাশিনী রুদ্র রূপ। কখনো মন দেওয়া-নেওয়ার পালায় মন হয়ে ওঠে মনোহর, আবার মনের মানুষের প্রেমার্ঘ পায়ে দলে চলে যাওয়ার লীলাও আনেন এই মায়াবী।
সাগরতূল্য পাওয়ার তৃষ্ণায় জাগিয়ে তোলেন তিনি মনে, কিন্তু তৃষ্ণা নিবারণের জল দেন না। তাই কবির মনে প্রশ্ন জাগে- এই মায়াবী কি প্রেমময়, নাকি প্রেমের মায়া-মরীচিকা। কেন হৃদয় আকাশে ব্যর্থ জীবনের গোধুলি লগন এনে মিলিয়ে যান তিনি। কবি কোনো কিছুরই উত্তর পান না। শুধু এই গানের মধ্য দিয়ে রেখে গেছেন- এই মায়াবীকে চেনার চিরন্তুন জিজ্ঞাসা।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ২১৫৫। পৃষ্ঠা: ৬৪৯]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। পরমসত্তা। জিজ্ঞাসা