ঐ সর্ষে ফুলে লুটালো কার হলুদ-রাঙা উত্তরী (oi sorshe fule lutalo kar)

ঐ      সর্ষে ফুলে লুটালো কার হলুদ-রাঙা উত্তরী।
        উত্তরী-বায় গো -
ঐ      আকাশ-গাঙে পাল তুলে যায় নীল সে পরীর দূর-তরী॥
তা'র   অবুঝ বীণার সবুজ সুরে
         মাঠের নাটে পুলক পুরে,
ঐ       গহন ব
নের পথটি ঘু'রে - আসছে দূরে কচিপাতা দূত্ ওরি॥
         মাঠ-ঘাট তার উদাস চাওয়ায় হুতাশ কাঁদে গগন মগন
         বেণুর বনে কাঁপ্‌চে গো তার দীঘল শ্বাসের রেশটি সঘন॥
তার    বেতস-লতায় লুটায় তনু
         দিগ্বিলয়ে ভুরুর ধনু,
সে      পাকা ধানের হীরক-রেণু
         নীল নলিনীর নীলিম-অণু -মেখেছে মুখ-বুক্-ভরি॥

  • ভাবার্থ: ঘটনাক্রমে মানসিক অস্থিরতা নিয়ে নজরুল রেলপথে কুমিল্লায় যাচ্ছিলেন। চলমান রেলগাড়িতে বসা কবির কাছে গ্রামবাংলার রূপ ধরা দিয়েছে জীবন্ত চলচ্চিত্রের পট-পরিবর্তনের লীলায়। তাই চলমান পথের দৃশ্যান্তের রূপ ফুটে উঠেছে পঙ্‌ক্তিতে পঙক্তিতে। এই পটপরিবর্তের লীলায় তিনি অনুভব করেছেন কোনো অদৃশ্য সৌন্দর্যরূপিণীর বিলাসী-লীলা। তাই এই গানে ফুটে উঠেছে প্রকতি-প্রেমিক কবির চোখে দেখা চিরন্তন গ্রাম-বাংলা চলমান চিত্র। তিনি এই গানে তা তুলে ধরেছেন তাঁর কল্পবাস্তবে গাঁথা শৈল্পিক অনুভবে।
     
    এই চলচ্চিত্রের প্রথম দৃশ্যে উপস্থাপিত হয়েছে অবারিত সর্ষেক্ষেতের প্রস্ফুটিত সরষে ফুলের সৌন্দর্য।  কবির কল্প-বাস্তব অনুভবে, সর্ষে ক্ষেতকে মনে হয়েছে- উত্তরী বাতাসে লুটিয়ে পড়া কারো (সৌন্দর্যরূপিণীর) হলুদ-রাঙা উত্তরীয়। আকাশকে তাঁর তাঁর মনে হয়েছে- নীলাকাশের নদীতে মেঘের তরীতে পাল তুলে কোন এক নীলপরির ভেসে চলেছে দূরদেশে।

    এই সৌন্দর্যরূপিণীর  সবুজ (সজীব, সতেজ) সুর গভীর বনের ঘুর পথে আসছে- মাঠের রঙ্গভূমি এবং পুলকিত পল্লী মোহিত করে। চলমান পথে সে সুর আসছে দূর বন-বনান্তের কচিপাতার দূতের বার্তাবহ হয়ে।

    পটপরিবর্তনের রূপলীলায় আসে উদাস মাঠঘাট। সেখানে যেন কারো ব্যর্থ প্রত্যাশায় ক্রন্দসী হয়ে ওঠে আকাশ। তারই পরশে বেণু বনে ছড়িয়ে পড়ে হতাশার দীর্ঘশ্বাস। বেতস লতা লুটিয়ে পড়া বেদনা  সৌন্দর্যরূপিণীর লীলায় হয়ে উঠে প্রকৃতির দিগ্বিলয়ে আঁকা ভুরুর ধনুর মতো। তারই মহিমায় পাকাধানের রেণু হীরকের মতো দ্যুতিময় হয়ে ওঠে। নীলকমলের নীলরেণু মেখে মন-প্রাণ সৌন্দর্যের মহিমায় ভরে ওঠে।
  • রচনাকাল: ছায়ানট কাব্যগ্রন্থে গানটির রচনার তারিখ উল্লেখ আছে 'ট্রেনে কুমিল্লার পথে/চৈত্র ১৩২৭'। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২১ বৎসর ১০ মাস।

    উল্লেখ্য, নানা কারণে নজরুল মানসিক অস্থিরতার ভিতরে ছিলেন। এই অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য, আলী আকবর খান তাঁকে তাঁর দেশের বাড়ি কুমিল্লায় যাওয়ার প্রস্তাব দেন। এক্ষেত্রে আফজাল-উল হকও নজরুলকে উৎসাহিত করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত নজরুল আলী আকবরের প্রস্তাব গ্রহণ করেন। ১৩২৭ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসের শেষে (এপ্রিল ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দ) নজরুল আলী আকবরের সাথে  চট্টগ্রাম মেল-ট্রেনে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রেলপথে যাওয়ার সময় তিনি এই গানটি রচনা করেন।
     
  • গ্রন্থ: ছায়ানট প্রথম সংস্করণে [বর্মণ পাবলিশিং হাউস, ২২ সেপ্টেম্বর ১৯২৫ আশ্বিন ১৩৩২। অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। শিরোনাম ছিল-নীল-পরী। পৃষ্ঠা ৪৪]
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি, সাধারণ

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।