অন্ধকারের তীর্থপথে ভাসিয়ে দিলাম নামের তরী (ondhokarer tirthopothe bhashiye dilam namer tori)
অন্ধকারের তীর্থপথে ভাসিয়ে দিলাম নামের তরী
মায়া মোহের ঝড় বাদলে এবার আমি ভয় না করি।
যে নাম লেখা তারায় তারায়
যে নাম ঝরে অশ্রুধারায়
যাত্রা শুরু সেই নামেরি জপমালা বক্ষে ধরি॥
এই আঁধারের অন্তরালে লক্ষ রবি চন্দ্র জ্বলে
নিত্য ফোটে আলোর কমল জানি তোমার চরণ তলে।
এবার ওগো অশিব নাশন
থামাও তোমার ঢেউর নাচন
সেই ত অমর মরণ যদি ধ্যান সাগরে ডুবে মরি॥
- ভাবানুসন্ধান: এই গানে স্রষ্টার নাম বন্দনার মহিমা এই গানে উপস্থাপন করা হয়েছে। গানটিতে অশুভ শক্তির বিন্যাসের প্রার্থনা থাকলেও নামবন্দনাই মুখ্য রূপে প্রকাশিত হয়েছে। এই বিচারে এই গানটিকে বলা যায় নাম-কীর্তন।
কবি আশাহীন, জ্ঞানহীন অন্ধকারের দিশাহারা জগতে শুধু তাঁর করুণা লাভের আশায় নামজপের তরণী ভাসিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। সংসার-মোহের বাধা-বিপত্তির ভয়কে জয় করার সাহস পেয়েছেন তাঁর এই নাম জপের মহিমায়।
কবি অনুভব করেন- এই নাম লেখা আছে আকাশের তারায় তারায়। এই নামের ভিতরে রয়েছে পরমস্রষ্টাকে পাওয়ার আনন্দাশ্রু। তাই সেই নামকে জপমালা অবলম্বন করে তিনি অন্ধকারের তীর্থপথে যাত্রা শুরু করেছেন।
তাঁর যাত্রাপথের অন্ধকারের আড়ালে উজ্জ্বল জ্যোতি ছড়ায় লক্ষ লক্ষ তারকারাজি। সেখানে প্রতিদিন আলোর কমল ফোটে পরমস্রষ্টার পায়ে অর্ঘ দিতে। কবি অশিব নাশন (অকল্যাণ বিনাশক) পরম স্রষ্টার কাছে অশুভ অকল্যাণের ধ্বংসতরঙ্গে থামানোর প্রার্থনা করেছেন। কবি নামের ধ্যানের মধ্য দিয়ে স্রষ্টাকে পেতে চেয়েছেন। তিনি মনে করেন, ধ্যান সাগরে ডুবে মরাই হবে তাঁর অমর মরণ।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে জানা যায় না। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর (কার্তিক -অগ্রহায়ণ ১৩৪২) মাসে এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে এই গানটির প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৬ বৎসর ৫ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২]। গান সংখ্যা ১০১০
- রেকর্ড: টুইন। [নভেম্বর ১৯৩৫ (কার্তিক -অগ্রহায়ণ ১৩৪২)]। এফটি ৪১১৪। শিল্পী: জগন্নাথ মুখোপাধ্যায় [শ্রবণ নমুনা]
এর জুড়ি গান: শত জনম আঁধারে আলোকে
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: আহসান মুর্শেদ [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি সাতচল্লিশতম খণ্ড। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট । ফাল্গুন ১৪২৫/ফেব্রুয়ারি ২০১৯] পৃষ্ঠা: ১৭-১৮। [নমুনা]
- পর্যায়
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সাধারণ। বন্দনা
- সুরাঙ্গ: ভজন
- তাল: দাদরা
- গ্রহস্বর: স