আকাশে আজ ছড়িয়ে দিলাম প্রিয় (akashe aj chhoriye dilam priyo)
আকাশে আজ ছড়িয়ে দিলাম প্রিয়।
আমার কথার ফুল গো,
আমার গানের মালা গো ─
কুড়িয়ে তুমি নিও॥
আমার সুরের ইন্দ্রধনু
রচে আমার ক্ষণিক তনু,
জড়িয়ে আছে সেই রঙে মোর
অনুরাগ অমিয়॥
আমার আঁখি-পাতায় নাই দেখিলে
আমার আঁখি-জল,
আমার কণ্ঠের সুর অশ্রুভারে
করে টলমল।
আমার হৃদয়-পদ্ম ঘিরে
কথার ভ্রমর কেঁদে ফিরে,
সেই ভ্রমরের কাছে আমার
মনের মধু পিও॥
- ভাবার্থ: 'আকাশবাণী কলকাতা'র ত্রয়োদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষের রচিত 'আকাশবাণী' গীতি-আলেখ্যের জন্য রচিত এই গানটি মূলত প্রেমের গান। গানটিতে রয়েছে প্রবাসী প্রেমিকের প্রতি প্রেমিকার বিরহ কাতরতার চিত্র। যেন প্রেমিকা আকাশবাণী-রূপী বার্তাকে, বেতার আকাশবাণীর মাধ্যমে প্রকাশ করছেন গানের সুর ও বাণীর সঙ্গীত-সৌরভে।
গানটির স্থায়ীটি প্রেমিকার একটি সাধারণ বার্তা। যেন প্রেমিকা তার প্রবাসী প্রেমিকের কাছে যে বেতার-বার্তা পাঠাচ্ছেন, প্রেমিক যেন তা সাগ্রহে সংগ্রহ করে নেন। এই বার্তার কথা প্রেম-পুষ্প, আর তার সুরবিন্যাস হলো সুতো। আর বার্তটি হলো- সুরের সুতোয় গাঁথা প্রেম-পুষ্পের মালা।
অন্তরাতে প্রেমিকা তাঁর বার্তার স্বরূপ বর্ণনা করেছেন। এই গানের সুর সাত স্বরের ইন্দুধনুর মনোরঞ্জনী বর্ণে বিভূষিত। যার ভিতরে রয়েছে প্রেমিকার প্রেমরঞ্জিত প্রেম-পুষ্পের সৌরভ। যা প্রেমের তনু সঙ্গীতময় হয়ে আকাশে ছড়িয়ে পড়ছে। আকাশে ছড়িয়ে পড়া এই সুর ক্ষণস্থায়ী হলেও, এই গানের ক্ষণিক তনুতে জড়িয়ে আছে তাঁর শাশ্বত প্রেমের অনুরাগ।
সঞ্চারীতে পাওয়া যায়, প্রবাসী প্রেমিকের জন্য প্রেমিকার বিরহবিধুর বেদনা। প্রেমিকা জানেন, আকাশে ছড়িয়ে দেওয়া এই গানের 'সুর ও বাণী'র অতনু রূপ দেখার নয়। তাই তাঁর বিরহবিধুর অশ্রুসজল আঁখিও বেদনা-মূর্ত হয়ে প্রেমিকের দর্শন-স্পর্শ হয়ে উঠবে না। কিন্তু তাঁর এই গানে থাকবে তাঁর কণ্ঠের সুরে বেদনাশ্রুর স্পর্শ।
আভোগে এসে প্রেমিকা তাঁর প্রবাসী প্রেমিককে প্রেমপুষ্পের স্পর্শ দিতে চেয়েছেন। প্রেমিকার হৃদয়-পদ্ম আচ্ছন্ন হয়ে আছে প্রেমপদ্মের সুর-সৌরভে। কথা হলো এ গানের ভ্রমর। এই ভ্রমরের গুঞ্জরিত সুর-সৌরভে মিশে আছেন প্রেমিকা। প্রবাসী প্রেমিকের কাছে প্রেমিকার শেষ নিবেদন, তিনি যেন প্রেমিকার ভ্রমররূপী কথা এবং তার গুঞ্জরিত সুরধ্বনির স্পর্শে মনের প্রেমমধুর অনুভবের আস্বাদ নেন।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে আগষ্ট (মঙ্গলবার ১০ ভাদ্র ১৩৪৭) আকাশবাণী কলকাতার ত্রয়োদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কাজী নজরুল ইসলাম 'আকাশবাণী' নামক একটি 'গীতি-আলেখ্য' রচনা করেন। এই গীতি-আলেখ্যের জন্যই নজরুল এই গানটি রচনা করেছিলেন। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪১ বৎসর ২ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২)। ১০২৫ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৩১৩।
- পত্রিকা: বেতার জগৎ। বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ ১৭শ সংখ্যা। শিরোনাম: আকাশ-বাণীর গান। গান সংখ্যা ৩। পৃষ্ঠা: ১৯-২০।
- বেতার: আকাশবাণী (গীতিকা)
- প্রথম প্রচার: ২৬ আগষ্ট, ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (মঙ্গলবার ১০ ভাদ্র ১৩৪৭)। কলকাতার খ। চতুর্থ অধিবেশন। সন্ধ্যা ৭.৪৫ থেকে ৮.২৯ মিনিট।
- সূত্র:
- বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ ১৬শ সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ৮৮৪
- The Indian-listener 1940, Vol V, No 16. page 1253
- সূত্র:
- দ্বিতীয় প্রচার: ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ৯ ফাল্গুন ১৩৪৮)। কলকাতার খ। চতুর্থ অধিবেশন। সন্ধ্যা ৭.৩০ থেকে ৮.০৯।
- সূত্র: The Indian-listener 1942, Vol VII, No 4. page 51]
- প্রথম প্রচার: ২৬ আগষ্ট, ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (মঙ্গলবার ১০ ভাদ্র ১৩৪৭)। কলকাতার খ। চতুর্থ অধিবেশন। সন্ধ্যা ৭.৪৫ থেকে ৮.২৯ মিনিট।