খোলো মা দুয়ার খোলো প্রভাতেই সন্ধ্যা হল (kholo ma duar kholo provatei shondhya holo)

খোলো মা দুয়ার খোলো প্রভাতেই সন্ধ্যা হল দুপুরেই ডুবল দিবাকর গো।
সমরে শয়ান ওই, সুত তোর বিশ্বজয়ী, কাঁদনের উঠছে তুফান ঝড় গো॥
সবারে বিলিয়ে সুধা, সে নিল মৃত্যু-ক্ষুধা, কুসুম ফেলে নিল খঞ্জর গো।
তাহারই অস্থি চিরে দেবতা বজ্র গ'ড়ে নাশে ঐ অসুর অসুন্দর গো।
ঐ মা যায় সে হেসে, দেবতার উপরে সে ধরা নয়, স্বর্গ তাহার ঘর গো॥
যাও বীর যাও গো চ'লে চরণে মরণ দ'লে করুক প্রণাম বিশ্ব-চরাচর গো।
তোমার ওই চিত্ত জ্বেলে ভাঙ্গালে ঘুম ভাঙালে নিজে হায় নিবলে চিতার 'পর গো।
বেদনার শ্মশান-দ'হে পোড়ালে আপন দেহে, হেথা কি নাচবে না শঙ্কর গো৷৷

  • রচনাকাল ও স্থান: ১৩৩২ বঙ্গাব্দের ২রা আষাঢ় (১৬ জুন ১৯২৫) দার্জিলিঙে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ মৃত্যুবরণ করেন। কবি এই মৃত্যু সংবাদ পান ৩রা আষাঢ়। এই সময় তিনি আরিয়াদহে ছিলেন। ওই দিন তিনি চিত্তরঞ্জন দাশের স্মরণে রচনা করেন 'অর্ঘ্য' নামক গান। এরপর তাঁরই স্মরণে ৬ই আষাঢ় তিনি রচনা করেন- 'খোলো মা দুয়ার খোলো' গানটি। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২৬ বৎসর ১ মাস।

    এই গানটির রচনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে প্রাণতোষ চট্টোপাধ্যায় তাঁর 'কাজী নজরুল' গ্রন্থে লিখেছেন-[ পৃষ্ঠা: ৭০]

'...ঐদিনই বিশেষ কারণে আড়িয়াদহের একটি উৎসবে যোগদানের জন্য রওনা হন। শ্রীফণিভূষণের সঙ্গে পরে আরও একটি গান লেখেন "অকাল সন্ধ্যা" নাম দিয়ে ৬ই আষাঢ়। ওখান থেকে ফিরেই দেখেন হুগলীর নেতৃতস্থানীয় ও স্বেচ্ছাসেবকরা শোকে স্তব্ধ হয়ে আছেন। কবি খালি পায়ে ঢুকে আবেগের সঙ্গে গানটি গাইতে লাগলেন খালি গলায়-
        " খোলো মা দুয়ার খোলো
          প্রভাত সন্ধ্যা হলো,
          দুপুরেই ডুবলো দিবাকর গো।"...'

  • বঙ্গবাণী: 'শ্রাবণ ১৩৩২' সংখ্যা 'অকালসন্ধ্যা' নামে প্রকাশিত হয়েছিল। শিরোনামের নিচে বন্ধনীর মধ্যে ছিল 'জয়জয়ন্তী কীর্ত্তন-একতালা'। আর পাদটিকায় লেখা ছিল- 'স্বর্গীয় দেশবন্ধুর শোকযাত্রার গান'।
  • চিত্তনামা
    • প্রথম সংস্করণে [৪ নভেম্বর ১৯২৫ (১৮ কর্তিক ১৩৩২)। শিরোনাম 'অকালসন্ধ্যা']
    • নজরুল রচনাবলী জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, দ্বিতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, মে ২০১১। চিত্তনামা। শিরোনাম 'অকাল-সন্ধ্যা'। পৃষ্ঠা ৬৭-৬৮]

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।