সখি বাঁধো লো বাঁধো লো ঝুলনিয়া (sokhi badho lo badho lo jhuloniya)

সখি বাঁধো লো বাঁধো লো ঝুলনিয়া॥
নামিল মেঘলা ঘোর বাদরিয়া।
চল কদম তমাল তলে গাহি কাজরিয়া
চল লো গৌরী শ্যামলিয়া॥
বাদল-পরীরা নাচে গগন-আঙিনায়,
(শোনো) ঝমঝম বৃষ্টি নূপুর পায়
এ হিয়া মেঘ হেরিয়া ওঠে মাতিয়া॥
মেঘ-বেণীতে বেঁধে বিজলি-জরীন্‌ ফিতা,
গাহিব দু’লে দু’লে শাওন-গীতি কবিতা।


শুনিব বঁধুর বাঁশি বন-হরিণী চকিতা,
দয়িত-বুকে হব বাদল-রাতে দয়িতা।
পর মেঘ-নীল শাড়ি ধানী-রঙের চুনরিয়া,
কাজলে মাখি’ লহ আঁখিয়া॥

  • ভাবসন্ধান: এই গানে আসন্ন বর্ষার ঝুলনোৎসব উদ্যাপনের আয়োজন সুসম্পন্ন করার আহ্বান করা হয়েছে। ঝুলনোৎসবের সার্বিক রূপরেখার পরিবর্তে পাওয়া যায়, অপূর্ব রূপকল্পে গাঁথা বর্ষা রূপ, আর উৎসব উপলক্ষে গোপিনীদের অঙ্গসজ্জার নির্দেশনা। এর সাথে প্রচ্ছন্নভাবে মিশে আছে শৃঙ্গার রসের মিলন বাসনা। এ গানে কবি মিশে গেছেন গোপিনীর মনোলোকের প্রেমসৌন্দর্যের রূপকল্পের কল্পলোকে। যেন তিনি তাঁদের একজন হয়ে বর্ষা আর প্রেমের রূপকে উপস্থাপন করেছেন- বাণীর সৌন্দর্য-সুষমায়। সব মিলিয়ে এই গানটি হয়ে উঠেছে- বৈষ্ণবসঙ্গীতের প্রেক্ষাপটে গাঁধা প্রেম ও বর্ষার যুগলবন্দীতে বাঁধা এক অনির্বচনীয় চিত্রকল্প।

    যেন গোপিনীদের সাথে কবিও ছিলেন বর্ষার প্রতীক্ষায়। অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত মেঘলা আকাশ থেকে ঝরে পর্ল  বর্ষারা ধারা। তখনো ঝুলোনের আয়োজন সম্পন্ন হয় নি। তাই কোনো এক গোপিনী তাঁর এক সখিকে ডেকে বলছেন ঝুলনোৎসবের দোলনা বাঁধার সময় হয়েছে। তিনি তাঁর সখিকে আহবান করছেন- কাজরি গান গেয়ে যেন সবাই কদম তমাল তলায় যায়, সেখানে যেন বাঁধা হয় ঝুলনোৎসবের দোলনা।

    গোপিনীর চোখে কবি অনুভব করেছেন আকাশকে কল্পলোকের রঙ্গমঞ্চ হিসেবে।  যেখানে নৃত্যানন্দে নেচে চলেছে বাদল-পরীরা। বৃষ্টি ঝমাঝম শব্দের ভিতরে  তিনি শুনতে পান বৃষ্টি-নূপুরের ঝঙ্কার। বাদল-পরীদের সে নাচের ছন্দের কবির মনও গোপিনীদের সাথে আনন্দ উদ্বেলিত হয়ে উঠেছে।

    আকাশের মেঘ বালিকা যেন  তাঁর মেঘ-বেণীতে বিজলি-জরীন্‌ ফিতা বেঁধে এই আনন্দোৎসবের জন্য উদ্বেলিত। তার ছন্দের দোলায় দুলে দুলে গোপিনী গাইবেন শাওনের কাব্যগীতি।  গোপিনী তাঁর প্রেমানুরাগে শুনবেন -বন-হরিণীর চকিত করা প্রেমিক বন্ধুর (কৃষ্ণ) বাঁশি। সে বাঁশির সুরে তিনি হবেন বাদল-রাতের প্রিয়ের বুকের প্রেয়সী।

    গানের শেষে এসে কবি যেন ভনিতার সুরে গোপিনীদের বলছেন- ঝুলনরূপী এই প্রেমোৎসবে তাঁরা যেন পরেন মেঘ-নীল বর্ণের শাড়ি, আর ধানী রঙের (পাকা ধানের মতো হলুদাভ-সবুজ রঙ) উত্তরীয়। সে সাথে তাঁদের চোখকে যেন রঞ্জিত করেন প্রেমাঞ্জনের কালিতে।

     
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ অক্টোবর (রবিবার ২৭ আশ্বিন ১৩৩৯) প্রকাশিত 'বনগীতি' গ্রন্থে গানটি প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৩ বৎসর ৪ মাস।
  • গ্রন্থ:
    • বনগীত
      • প্রথম সংস্করণ [১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ অক্টোবর (রবিবার ২৭ আশ্বিন ১৩৩৯)। গান সংখ্য ৪। কাজরী, তাল: কার্ফা । পৃষ্ঠা: ৬-৭ ] ।
      • নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। পঞ্চম খণ্ড। বাংলা একাডেমী। ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮ মে, ২০১১। বনগীতি। ৪ সংখ্যক গান। কাজরী-কার্ফা। পৃষ্ঠা ১৭৯]
    • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। ২২৭৬ সংখ্যক গান। তাল: কাহারবা। পৃষ্ঠা: ৬৮২।
       
  • রেকর্ডস: মেগাফোন [ ডিসেম্বর ১৯৩৩ (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪০)। জে.এন.জি ৮৭। শিল্পী: শ্রীমতী পারুলবালা][শ্রবণ নমুনা]
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ। ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। বৈষ্ণবসঙ্গীত।  ঝুলনোৎসব।

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।