দেব আশীর্বাদ – লহ সতী পুণ্যবতী (deb ashirbaad- loho soti punnoboti)
দেব আশীর্বাদ – লহ সতী পুণ্যবতী
লহ ত্রিলোকের আশিস্ বাণী – লহ লহ আয়ুস্মতী॥
ধর পূজা আরতির শুভ বরণ ডালা
পর স্বর্গের মন্দার পারিজাত মালা,
রবি দিল কুণ্ডল সাগর মুকুতা দল
চাঁদ দিল চন্দন স্নিগ্ধ জ্যোতি॥
মঙ্গল ঘট দিল দেবী মেদিনী
পুণ্য সলিল দিল মন্দাকিনী
অগ্নি দিলেন দীপ- শুকতারা দিল টীপ
দিল ধান্য দুর্বা মুনি ঋষি তপতী॥
বিষ্ণু দিলেন তাঁর লীলা কমল
ব্রহ্মা দিলেন কমণ্ডলু জল –
সিঁথির সিন্দুর ভূষা দিলেন অরুণা ঊষা
(চির) এয়োতির নোয়া দিল অরুন্ধতী॥
- ভাবসন্ধান: 'সতী' নাটকের প্রেক্ষাপটে সতীর (দুর্গা) উদ্দেশ্যে নিবেদিত এটি সখীদের মঙ্গলাচরণমূলক গান। মূলত সতীর মঙ্গলাচরণমূলক এই গানে তুলে ধরা হয়েছে- সতীর সখীরা, দেবগণ ও ত্রিলোকবাসীরা সতীকে কি কি আশীর্বাদ-উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন, তার দীর্ঘ তালিকা। সনাতন ধর্মের পৌরাণিক কাহিনিতে এরূপ কোনো ঘটনা জানা যায় না। মূলত নাটকের প্রয়োজনে কবি এরূপ মঙ্গলাচারণমূলক অনুষ্ঠানকে উপস্থাপন করেছেন এই নাটকের সূচনাতে।
এই গানের মঙ্গলাচরণের ধরণ অনেকটা বৈদিক যুগের উপনিষদের মঙ্গালাচরণের মতো। এই নাটকের শুরুতে দেখা যায়- সতী তাঁর খেলাঘরে শিবের পট মূর্তি অঙ্কন করছিলেন। এই সময় মাঙ্গলিক গান করতে করতে সখীদের আগমন ঘটে। শিব-প্রেমিকা তাঁর গোপন প্রেম লুকানোর জন্য সতী শিবের অসমাপ্ত পটমূর্তি আবৃত করে সখীদের মুকোমুখী হন। এরপর শুরু হয় সখিদের গান। তাই এ গানটি একই সাথে হয়ে উঠেছে- মাঙ্গালিক এবং নাটকের সূচনা সঙ্গীত।
এই গানের শুরুতে- সখীরা পূণ্যবতী সতীর মঙ্গলার্থে দেবগণের ও ত্রিলোকের আশীর্বাদ গ্রহণের শুভকামনা ব্যক্ত করেছেন। যেন তাঁদের আশীর্বাদে সতী হয়ে ওঠেন আয়ুষ্মতী (দীর্ঘজীবিনী)। এরপর সখীরা তাঁর কাছে আনা পূজা আরতির জন্য স্বর্গের মন্দার ও পারিজাতের মালায় সজ্জিত শুভ বরণডালা অর্পণ করেছেন। এই অনুষ্ঠানে সতী পেলেন দেবলোক ও ত্রিলোক থেকে নানা উপহার। সূর্যদেবতা দিলেন কুণ্ডল ও সাগরের মুক্তারাশি, চন্দ্রদেবতা দিলেন চন্দন আর স্নিগ্ধ জ্যোতি। মঙ্গল ঘট দিলেন মেদিনী দেবী (ধরিত্রী মাতা), পুণ্য সলিল দিলেন স্বর্গ-নদী মন্দাকিনী। সতীর মন্দিরে অগ্নি দিলেন দীপশিখা, শুকতারা (প্রভাতের শুক্রগ্রহ) দিলেন তাঁর কপালের উজ্জ্বল টিপ। ধান, দুর্বা দিলেন মুনি-ঋষি আর সূর্যকন্যা তপতী। বিষ্ণু দিলেন তাঁর লীলাকমল, ব্রহ্মা দিলেন কমণ্ডলু জল। তাঁর সিঁথির সিঁদুর দিলেন অরুণা ঊষা (ভোরের রক্তিম সূর্য), আর হাতে সধবার নোয়া (লৌহবালা) দিলেন সতী অরুন্ধতী ।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ এপ্রিল (বুধবার, ১৫ বৈশাখ ১৩৪৪), মন্মথ রায়ের রচিত 'সতী' নাটক মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকে গানটি ব্যবহৃত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৯ বৎসর ১০ মাস।
- মঞ্চ নাটক: সতী (নাটক)। রচয়িতা মন্মথ রায় । [নাট্যনিকেতন। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ এপ্রিল (বুধবার, ১৫ বৈশাখ ১৩৪৪)। চরিত্র: কৈলাসবাসীদের সখীদের গান]
- গ্রন্থ: নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান ৩০৫৭।
- পর্যায়:
- ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। শাক্ত। সতী। মঙ্গলাচরণ