জাগো হে রুদ্র, জাগো রুদ্রাণী (jago he rudro, jago rudrani)
জাগো হে রুদ্র, জাগো রুদ্রাণী,
কাঁদে ধরা দুখ-জরজর!
জাগো গৌরী, জাগো হর॥
আজি শস্য-শ্যামা তোদের বন্যা
অন্নবস্ত্র হীনা অরণ্যা
সপ্ত সাগর অশ্রু-বন্যা,
কাঁপিছে বুখ থর থর॥
আর সহিতে পারি না অত্যাচার,
লহ এ অসহ ধরার ভার।
গ্রাসিল বিশ্ব লোভ-দানব,
হা হা স্বরে কাঁদিছে মানব,
জাগো ভৈরবী জাগো ভৈরব
ত্রিশূল খড়গ ধর ধর॥
- ভাবার্থ: স্বদেশের কল্যাণের জন্য রুদ্র (শিব) এবং রুদ্রাণীর (দুর্গার) কাছে কবির প্রার্থনা-মূলক নিবেদন এই গানটির মধ্য দিয়ে উপস্থাপিত হয়েছে। বিষয়াঙ্গের বিচারে তাই গানটি ভক্তি ও স্বদেশ পর্যায়ের। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও লোভী অত্যাচারীর যুগপৎ বিপদে ধরাতল আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত। এর প্রতিকারের জন্য রুদ্র ও রুদ্রাণীকে যেন অকালবোধনের নিবেদন।
অন্তরাতে কবি উল্লেখ করেছেন- প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিপর্যস্ত পৃথিবীর দুর্দশার কথা। বন্যায় প্লাবিত শস্যক্ষেত্র, এরই অভিঘাতে সপ্তসাগর-সম দুঃখ-কাতর মানুষের যাপিত-জীবন অশ্রুজলে প্লাবিত। অজানিত আশঙ্কায় বিশ্বজন আজ কম্পিত। এর প্রতিকারের জন্যই কবির রুদ্র ও রুদ্রাণীর কাছে প্রার্থনা।
সঞ্চারী ও আভোগে কবি উপস্থাপন করেছেন লোভী-দানবের গ্রাসে নিপতিত বিশ্বের কথা। একই সাথে তিনি লোভী অত্যাচারী মানুষরূপী দানবকে দমন করে, অসহ অত্যাচারের প্রতিকারের জন্য রুদ্র ও রুদ্রাণীর কাছে কবি একান্ত নিবেদন রেখেছেন। মানুষের ক্রন্দিত হাহাকার ধ্বনিতে জগৎ আচ্ছন্ন। এর প্রতিকারের জন্যই ভৈরব (শিব) ও ভৈরবীর (দুর্গা) কাছে কবির নিবেদন। অসুরনাসী শিবের ত্রিশূল এবং দুর্গার খড়্গের আঘাতে মানবরূপী দানবের বিনাশ হোক এবং এর মধ্য দিয়ে জগতে কল্যাণ প্রতিষ্ঠা হোক, কবির এটাই একমাত্র প্রত্যাশা।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে আগষ্ট (শ্রাবণ ১৩৩৭) মাসে প্রকাশিত হয়েছিল 'প্রলয় শিখা' নামক কবিতা ও গানের গ্রন্থ। গ্রন্থটিতে এই গানটি প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩১ বৎসর ২ মাস।
- গ্রন্থ:
- প্রলয় শিখা
- প্রথম সংস্করণ [আগষ্ট ১৯৩০, ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ। গান (যোগিয়া-টোড়ি-একতালা)]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। চতুর্থ খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ঢাকা মে ২০১১। প্রলায় শিখা। গান (যোগিয়া-টোড়ি-একতালা)। পৃষ্ঠা: ১০৬]
- নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ১৯০১। গান ৫৭৩। পৃষ্ঠা ১৫]
- প্রলয় শিখা
- পর্যায়: