কেন আমায় আন্লি মাগো (keno amay anli mago)
কেন আমায় আন্লি মাগো মহাবানীর সিন্ধু কূলে।
মোর ক্ষুদ্র ঘটে এ সিন্ধু-জল কেমন ক'রে নেবো তুলে॥
চতুবের্দে এই সিন্ধুর জল
ক্ষুদ্র চারিবিন্দু হয়ে করছে টলমল,
এই বাণীরই বিন্দু যে মা গ্রহ তারা গগন মূলে।
ইহারই বেগ ধরতে শিরে, শীবের জটা পড়ে খুলে॥
অনন্তকাল রবি-শশী এই সে-মহাসাগর হ'তে,
সোনার ঘটে রসের ধারা নিয়ে ছড়ায় ত্রিজগতে।
বাঁশিতে মোর স্বল্প এ আধারে
অনন্ত সে-বাণীর ধারা ধরতে কি মা পারে?
শুনেছি মা হয় সীমাহীন ক্ষুদ্রও তোর চরণ ছুঁলে॥
- ভাবসন্ধান: কবি ছিলেন যাপিত জীবনের মোহমায়ায়। সংসারের অজ্ঞানতার অন্ধকার জগত থেকে মাতৃরূপিণী দেবী মহামায়া মহাজ্ঞানের অন্তহীন অসীম জ্ঞানসমুদ্রের কূলে এনেছে তাঁকে। কবি সে জ্ঞানসমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে তাঁর পরমবিস্ময়ে অভিভূত। তিনি বিস্মিত এবং অসহায় এই ভেবে যে- তাঁর জ্ঞানগ্রহণের সীমিত ক্ষমতা দিয়ে এই সাগরতুল্য জ্ঞানরাশি কিভাবে গ্রহণ করবেন।
কবির কাছে চারবেদের জ্ঞান হলো জ্ঞানসমুদ্রে জল। সে জল চারটি বিন্দু হয়ে জ্ঞানসমুদ্রে টলমল দশা বিরাজ করে। বাণীর এই জ্ঞানবিন্দুই মাতৃরূপিণী দেবী, যিনি সকল গতিময় গ্রহ-নক্ষত্রের মূল শক্তি হয়ে বিরাজ করেন। এই গতিকে শিরে ধারণ করতে গিয়ে শিবের জটা খুলে পড়ে। এই অনন্ত জ্ঞান-মহাসমুদ্র থেকে অনন্তকাল রবি-শশী যেন তাদের সোনার ঘটে জোতির্ময় প্রাণরসের ধারা ত্রিজতে ছড়িয়ে দিচ্ছে অবিরাম।
কবি তাঁর বাঁশীতে সে জ্ঞানের সুর প্রাণের সুর গানের সুর হয়ে বাদিত হয়। কিন্তু এই বিপুল অন্তহীন বাণীকে তাঁর ক্ষুদ্র বাশীতে প্রকাশ করতে অক্ষম। কবি শুনেছেন, মাতৃরূপিণী এই দেবীর চরণ স্পর্শ করেই ক্ষুদ্র হয়ে ওঠেন মহৎ। কবি সেই প্রত্যাশা নিয়েই তাঁর বাঁশি সুরে দেবীর বাণীকে স্পর্শ করার চেষ্টা করেন মাত্র। কবির আশান্বিত একান্ত প্রার্থনা, যেন তাঁর স্পর্শেই তিনি হয়ে উঠতর পারেন ক্ষুদ্র থেকে মহত্তম।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
- গ্রন্থ: নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান ১২১৯। পৃষ্ঠা ৩৭১]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দু ধর্ম। শাক্ত। দুর্গা। প্রার্থনা