বল্‌ রে জবা বল্ ‌(bol re joba bol)


বল্ রে জবা বল্ —
কোন্ সাধনায় পেলি শ্যামা মায়ের চরণতল॥
মায়া-তরুর বাঁধন টু'টে মায়ের পায়ে পড়লি লু'টে
মুক্তি পেলি, উঠলি ফুটে আনন্দ-বিহ্‌বল।
তোর সাধনা আমায় শেখা (জবা) জীবন হোক সফল॥
কোটি গন্ধ-কুসুম ফোটে, বনে মনোলোভা -
কেমনে মা'র চরণ পেলি, তুই তামসী জবা।
তোর মত মা'র পায়ে রাতুল হবো কবে প্রসাদী ফুল,
কবে উঠবে রেঙে
ওরে মায়ের পায়ের ছোঁয়া লেগে উঠবে রেঙে,
কবে তোরই মত রাঙবে রে মোর মলিন চিত্তদল॥  

  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর (আশ্বিন-কার্তিক ১৩৪২) মাসে, এইচএমভি গানটির রেকর্ড করেছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৬ বৎসর ৪ মাস।

    এই গানটি রচনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানা যায়- আসাদুল হকের রচিত 'নজরুলের শ্রুতিধর ধীরেন দাস' গ্রন্থে। লেখক ধীরেন দাসের সর্বকনিষ্ঠ পুত্র হিমাদ্রী দাসের উদ্ধৃতিতে লিখেছেন-

'...তাঁদের বাবা, ধীরেন দাস [ধীরেন্দ্রনাথ দাস] একদিন অনুপ কুমারকে কথায় কথায় বলেছিলেন, একদিন বিশেষ কোন কাজে খুব সকালে গিয়েছিলেন গ্রামোফোন কোম্পানীর রিহার্সেল অফিসে । তখন কাজী তাঁর কোন জরুরী কাজের জন্য ওখানে ছিলেন। প্রতিদিনের মতো সকাল বেলা উড়িয়া ঠাকুর (পুরোহিত) এসেছে পূজা করতে পুরোহিতের ডালিতে ছিল নানা রকমের ফুল। বিভিন্ন দেবতাকে বিভিন্ন ফুলের পুজা করছেন। কাজীদা আপন মনে পুরোহিতের এই পূজা পর্ব প্রত্যক্ষ করছেন। সব পুজার শেষে পুরোহিতের হাতের ডালিতে পড়ে আছে মাত্র একটি রক্তজবা ফুল। এই ফুলটি পুরোহিত মা কালীর পায়ে দিয়ে পূজা পর্ব শেষ করে চলে গেল। হঠাৎ কাজীদা আমাকে জিজ্ঞনা করলেন, আচ্ছা ধীরু (নজরুল বাবাকে এই নামেই ডাকতেন) সব দেবতাই যে কোন ফুলেই তুষ্ট, তবে কালী ঠাকরুণ কেন শুধুই জবা ফুলে তুষ্ট হন। আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই কাজীদা হন হন করে উঠে গেলেন ওপরে তার নিজের কামরায় । আমি অবাক হয়ে কিছু সময় তার এই চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম, কাজীদা হঠাৎ এমন করে চলে গেলেন কেন? তারপর আমি আমার প্রয়োজনীয় কাজগুলো প্রায় শেষ করেছি এমন সময় দেখলাম কাজীদা ওপর থেকে নিচে নেমে এলেন সোজা আমার রুমে, আমার সামনে দীড়িয়ে বললেন, 'ধীরু, লিখে ফেলেছি।' কাজীদার হাত থেকে কাগজটি নিয়ে দেখলাম একটি অপূর্ব গান (শ্যামা সঙ্গীত)। গানের বাণী নিম্নরূপ: 'শ্যামা সঙ্গীত/দেশ মিশ্র দাদরা/ বল জবা বল...'

['নজরুলের শ্রুতিধর ধীরেন দাস'। আসাদুল হক। হাতে খড়ি/ঢাকা। জানুয়ারি ২০০৪। পৃষ্ঠা: ৫৫।

  • গ্রন্থ:
    • রাঙা জবা। কাজী নজরুল ইসলাম। প্রথম সংস্করণ। হরফ প্রকাশনী, কলিকাতা [১৪ এপ্রিল ১৯৬৬)। ১লা বৈশাখ ১৩৭৩] গান সংখ্যা ১। পৃষ্ঠা: ৯।
    • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ৬৪২]
    • নজরুল-রচনাবলী জন্মশতবর্ষ-সংস্করণ। [বাংলা একাডেমী ঢাকা। কার্তিক ১৪১৯/নভেম্বর ২০১২ ] গান সংখ্যা ১। পৃষ্ঠা ২১৭।
    • নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, সাতাশ খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা।[কার্তিক, ১৪১২/অক্টোবর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ] ২১ সংখ্যক গান।  [নমুনা]
       
  • রেকর্ড: এইচএমভি [অক্টোবর ১৯৩৫ (আশ্বিন-কার্তিক ১৩৪২)। এন ৭৪২১। শিল্পী: মৃণালকান্তি ঘোষ] [শ্রবণ নমুনা]
     
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
  • পর্যায়
    • বিষয়াঙ্গ: ভক্তি [হিন্দুধর্ম, শাক্ত, বন্দনা (পরোক্ষ)]
    • সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য
    • তাল:  দাদরা
    • গ্রহস্বর: মা

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।