তোর মেয়ে যদি থাকতো উমা (tor meye jodi thakto uma)

তোর মেয়ে যদি থাকতো উমা, বুঝতিস তোর মায়ের ব্যথা।
যেমন বাবা তেমনি মেয়ে, এতটুকু নাই মমতা॥
        ওমা কেউ আছে কি ত্রি-সংসারে
        এই চাঁদমুখ ভুলতে পারে
মোর ঘর-বিবাগী জামাই গাহেন পঞ্চমুখে তোরই কথা॥
ওমা দিন গুনে আর পথ চেয়ে মোর যে অনলে পরান জ্বলে-
তুই যদি তা জানতিস উমা, তোর পাষাণ হিয়াও যেত গ'লে।
        তোর আগমনীর বাঁশি বাজে,
        নিশিদিন মোর বুকের মাঝে
আমি কেঁদে কেঁদে শুধাই সবে – আসবি কবে- সেই বারতা॥॥

  • ভাবসন্ধান: সনাতনধর্মী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মাচরণে- বৎসরান্তে মাতৃরূপিণী উমা (দুর্গা) দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতায় পূজিতা হন।

    দুর্গার মর্তলোকে আসা উপলক্ষে এই আগমনী গানটি উপস্থাপিত হয়েছে- মা মেনকার আক্ষেপে। যদিও দুর্গা লক্ষ্মী সরস্বতী নামের দুই কন্যা রয়েছে, কিন্তু মেনকার কন্যা উমা-রূপিণী দুর্গাকে কন্যা-হীনা বলা হয়েছে। বৎসারন্তে উমা আসবেন বলে তাঁর মা মেনকা অপেক্ষায় থাকেন। দীর্ঘ দিন কন্যার সান্নিধ্য বঞ্চিতা মেনকা অভিমান ভরে বলেন 'তোর মেয়ে যদি থাকতো উমা, বুঝতিস তোর মায়ের ব্যথা'। পরবরতী পঙ্‌ক্তিতে কটূক্তিতে বলেছেন, পাষাণ হৃদয়ের দুর্গার পিতা হিমালয়ের মতও উমাও যেন পাষাণী।

    মেনকা  উমাকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, জগৎ সংসারের তিনি ছাড়া ত্রিলোকে তাঁর মতো মমতাময়ী আর কেউ নেই। সবাই ভুলে গেলেও, তিনি উমার চাঁদমুখ ভুলে থাকতে পারেন না। তাঁর ঘর বিবাগী স্বামী শিবও তার মহিমার কথা বলেন। কিন্তু তিনিও ভুলে থাকেন।

    মেনকা উমার আগমনের প্রতীক্ষা করেন। এই প্রতীক্ষা তাঁর কাছে অনল-জ্বালাস্বরূপ। মেনকা মনে করেন- এই যন্ত্রণার ব্যথা যদি উমা বুঝতেন, তাহলে তাঁর পাষাণ হৃদয় গলে যেতো। তাঁর আগমনী আনন্দধ্বনী মনোলোকে বাঁশী হয়ে মেনকার হৃদয়ে বাজে দিবানিশি।  তিনি সবাইকে কেঁদে কেঁদে জানতে চান, কবে আসবে তাঁর আগমনের বার্তা।

     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় নি। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪৫) মাসে, এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটি প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৯ বৎসর ৩ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২)। ১৯৫৪ সংখ্যক গান।
    • এইচএমভি রেকর্ড বুলেটিন। পৃষ্ঠা ১৮। শিরোনাম: কে মল্লিকের আগমনী গান। কথা:  নজরুল ইসলাম। সুর কমল দাশগুপ্ত।  [নমুনা]
  • রেকর্ড: এইচএমভি [সেপ্টেম্বর ১৯৩৮ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪৫)। এন ১৭১৯২। শিল্পী: কাশেম মল্লিক। সুর: কমল দাশগুপ্ত]
     
  • বেতার: আগমনী কলকাতা বেতারকেন্দ্র-ক। তৃতীয় অধিবেশন। [৬ অক্টোবর ১৯৪০ (রবিবার, ২০ আশ্বিন ১৩৪৭)। সন্ধ্যা: ৭.২০-৮.১৯। [সূত্র:
    • বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ ১৯শ সংখ্যা। ১ অক্টোবর, ১৯৪০। পৃষ্ঠা: ১০৪৪
    • The Indian-listener. Vol.V. No. 19. p.1485]
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ:  ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম, শাক্ত। দুর্গা। আগমনী
    • সুরাঙ্গ: টপ্পা গান
    • রাগ: কাফি
    • তাল: যৎ

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।