সখি, সে হরি কেমন বল (sokhi sse hori kemon bol)
সখি, সে হরি কেমন বল্।
নাম শুনে যা’র এত প্রেম জাগে চোখে আনে এত জল॥
সখি সে কি আসে এই পৃথিবীতে
গাহি' রাধানাম বাঁশরিতে?
যা’র অনুরাগে বিরহ-যমুনা হয়ে ওঠে চঞ্চল॥
তা’রে কি নামে ডাকিলে আসে
কোন্ রূপ কোন্ গুণ পাইলে, সে রাধা সম ভালোবাসে?
সখি শুনেচি সে নাকি কালো
জ্বালে কেমনে সে এত আলো,
মায়া ভুলাইতে মায়াবী সে নাকি করে গো মায়ার ছল॥
- ভাবার্থ: কবির কাছে কাছে শ্রীকৃষ্ণ দুর্জ্ঞেয়, তাই তাঁকে জানা এবং পাওয়ার জন্য কবি কৃষ্ণ-প্রেমিকা রূপে এই গানকে উপস্থাপন করেছেন। কৃষ্ণ-প্রেমিকার মতোই কৃষ্ণকে জানার জন্য, তাঁর সখির কাছে প্রশ্ন রেখেছেন। যাঁর নাম শুনেই তাঁর প্রাণে এত প্রেম জাগে এবং ভক্তি ও প্রেমে চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে, তাঁকে শুধু মনে নয় প্রত্যক্ষ করতে চান পার্থিব জগতে। রাধার বিরহ-অনুরাগে কৃষ্ণের মতো আকুল হয়ে উঠে প্রেম-যমুনা, তার ছোঁয়া লাগে কৃষ্ণের বাঁশিতে। সখির কাছে তাই তিনি প্রশ্ন রাখেন- বাঁশিতে রাধানামের অনুরণন তুলে কৃষ্ণ কি পৃথিবীতে নেমে আসেন কখনো!?
কৃষ্ণ-প্রেমিকা কৃষ্ণকে কাছে পেতে চান, কিন্তু কোনো নামে ডাকলে কৃষ্ণ তাঁর ডাকে সাড়া দেবেন, কোন রূপ ও গুণ থাকলে তিনি (কৃষ্ণ) রাধার মতো তাঁকে ভালোবাসবেন, এই ভক্তি-নিবেদিতা তা জানেন না। তিনি কৃষ্ণকে কখনো প্রত্যক্ষ করেন নি। শুধু শুনেছেন, তাঁর গায়ের রঙ কালো, এই তাঁর কাছে পরম বিস্ময়- এই কারণে যে, যিনি কালো, কিন্তু অপার প্রেম-করুণার মহিমা দিয়ে জগতকে তিনি কিভাবে আলোকিত করে রাখেন!? তবে কি এ তার মায়ার ছলনা!? প্রপঞ্চময় এই জগতের মায়া ভুলানোর জন্যই কি কৃষ্ণরূপী মায়াবী রূপ ধরে তিনি আবির্ভুত হয়েছিলেন!? একি শুধুই তাঁর মায়ার ছলনা!? এই দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়েই না জানার অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গানটির পরিসমাপ্তি ঘটে। - রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে নজরুল অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পরে তিনি আর নতুন গান লেখেন নি। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের জুন (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় ১৩৫৬) মাসে কলম্বিয়া রেকর্ড কোম্পানি থেকে, উত্তরা দেবীর কণ্ঠে এই গানটির রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ৩০৪৩। পৃষ্ঠা: ৯৩২ ]
- রেকর্ড: কলম্বিয়া [জুন ১৯৪৯ (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় ১৩৫৬)। জিই ৭৫১২। শিল্পী: উত্তরা দেবী। সুর: নিতাই ঘটক] [শ্রবণ নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ভক্তি [সনাতন ধর্ম, বৈষ্ণব]
- সুরাঙ্গ: ভজন