আরে পঙ্খিরাজের বাচ্চা আমার (are pakhhirajer baccha amar)

   রেকর্ড-নাটিকা: 'বিলাতি ঘোড়ার বাচ্চা', তাল: কাহারবা
স্বামী: অ গিন্নী! বলি ও গ্যাদারের মা! আরে হুনছনি? চিঁহি চিঁহি, চিঁহি চিঁহি, চিঁহি।
স্ত্রী: গ্যাদাইয়্যা রে। ছুইট্যা আয়রে, ছুইট্যা আয়। আরে ঘরে ঘোড়া ঢুকছে! হেই, হেই।
স্বামী: আরে, আরে – ঘোড়া না, ঘোড়া না। আরে আমি, আমি। তা দ্যাখ, হে হে! আইজক্যা বাড়িতে আসনের সময় দুইটা টাকা দিয়া একটা লটারির টিকিট কিনছি।
স্ত্রী : কী কও? লেখার চিঠি? লেখার চিঠি কিইন্যা দুইটা টাকা জলে দিছ?
স্বামী: আ আমার পোড়া কপাল! আরে লেখার চিঠি না, লটারির টিকিট! বিলাতের ময়দানে ঘোড়দৌড় হইব। এই টিকিটের যেই ঘোড়া, হেয় যদি ফাস্ট হয় তবে আমি পঞ্চাশ হাজার টাকা পামু।
স্ত্রী: পঞ্চাশ হাজার টাকা?
স্বামী : হ্যাঁ।
স্ত্রী: কয় দামে পঞ্চাশ হাজার টাকা হয় গো? আর ঘোড়া ফাস্ট হইব? অ! বিলাতের ঘোড়া বুঝি ইস্কুলে পড়ে?
স্বামী : আ আমার পোড়া কপাল। আরে ঘোড়ায় ইস্কুলে পড়ব ক্যান? দৌড় দিয়া যদি আমার ঘোড়া হগগলের আগে যায় তবেই হেই ঘোড়া ফাস্ট হইব।
স্ত্রী : ও সে জানি বুঝলাম; তা তোমার ঘোড়া ফাস্ট হইব কেমন কইরা, তুমি রইলা এই দ্যাশে, ঘোড়া রইল বিলাতে – অরে খেদাইয়া লইয়া যাইব কেডা?
স্বামী: আ আমার পোড়া কপাল। আরে হেই দেশে সাহেব ঘোড়ার সব সাহেব সহিস আছে, হ্যারাই ঘোড়া খেদাইয়া লইয়া যাইব। দেখো, আজকে আপিসে বইসা বইসা একটা ঘোড়া-পূজার গান লিখছি। শোনবা, শোনবা নাকি? তা শোনো। দ্যাখ, এই প্রথমে গাইয়া লই ঘোড়া-পূজার মন্ত্র, দ্যাখ

 ওঁ নমস্তে শ্রী বিলাতি অশ্ব সায়েব হর্স নমো নমঃ
চতুষ্পদ একপুচ্ছ শৃঙ্গহীন জীব আদর্শ
সায়েব হর্স নমোনমঃ॥

অ্যাই, আরে পঙ্খিরাজের বাচ্চা আমার ঘোড়া ছুইট্যা যাও।
ক্যাতরাইয়া দুই চক্ষুরে ঘোড়া ছ্যাতরাইয়া চাইর পাও॥
স্বর্গপানে ল্যাজ উঠাইয়া, (ছোট) চিঁহি চুঁহু চিঁহি চুঁহু ডাইক্যা
আমরা দুজন রাত্র জাগুম ছোলা ভিজাইয়া রাইখ্যা (রে) ছোলা ভিজাইয়া রাইখ্যা
ফাস্ট যদি না হও ঘোড়া, (তোমার) ঘোড়ানীর মাথা খাও
                    হালা পট কচমচাইয়া খাও
            তোমার ঘোড়ানির মাথা কচ্‌মচাইয়া খাও॥

স্ত্রী:দ্যাখ, ঘোড়ার টাকা পাইলে আমি একশো ভরি সোনা দিয়া গহনা গড়ামু।
স্বামী: কী কও? না, না তা হইব না, তা হইব না। আগে আমি জমি কিনুম, জায়গা কিনুম, বাড়ি করুম, ঘর করুম, তারপর সব।
স্ত্রী: কিছুতেই না, আমি যদি একবাপের বিটি হই, তবে আমার গয়না আগে হইব। তারপর অন্য কিছু।
স্বামী : কিছুতেই না, কিছুতেই না। আমি যদি এক বাপের ব্যাটা হই তবে এই লাঠি দিয়া তোমার মাথা ভাইঙ্গা.....
স্ত্রী: অ! আর একটা বউ ঘরে আনবা, না? এই তোমার লেখার চিঠি রইল আমার আঁচলে বান্ধা – ওরে উনানে দিয়া পুড়াইয়া ছাই ভস্ম কইর‍্যা দুই পা  দিয়া মাড়াইয়া......
স্বামী: দ্যাক, দ্যাক,দ্যাক,– ভালো হইব না, ভালো হইব না। টিকিট দাও, টিকিট দাও, শিগগির টিকিট দাও।
স্ত্রী : না দিব না।
স্বামী : দিবা না।? দিবা না।? তবে (প্রহারের শব্দ)
স্ত্রী : মা গো! বাবা গো! গেছি গো! ওগো কে কোথায় আছ গো! দৌড় দিয়া আহ গো! ওগো মাইর‍্যা ফ্যালাইলো গো। ওরে, গ্যাদাইরা রে, ছুইট্যা আয় রে, ছুইট্যা আয়। ওরে তোর বাপেরে বিলাতি ঘোড়ার ভূতে পাইছে রে, বিলাতি ঘোড়ার ভূতে পাইছে। (কান্নার শব্দ)
স্বামী : কিডা রে? কিডা রে? কিডা রে, বাইরে কান্দে কিডা রে? কান্দে কোন্ হালায় রে। অ্যাঁ।
একটি বাচ্চা ছেলে : আমি। আমি বিলাতি ঘোড়ার বাচ্চা – গ্যাদাইরা।
স্বামী :এ্যাঁ পোড়া কপাইল্যা

  • রচনাকাল: গানটির রচনাকাল সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। ১৯৪২ খ্রিষ্টব্দের জুলাই মাসে [আষাঢ়-শ্রাবণ (১৩৪৯) এইচএমভি থেকে নজরুলের রচিত 'বিলাতী ঘোড়ার বাচ্চা' নামক একটি রেকর্ড নাটক প্রকাশিত হয়েছিল। এই নাটকে এই গানটি ছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪৩ বৎসর ১ মাস।
     
  • গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ৩০৮০]
     
  • স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: কৌতুক সঙ্গীত
    • সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের সুর

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।