আনন্দ-দুলালি ব্রজ-বালার সনে (anondo dulali brojo balar shone)

আনন্দ-দুলালি ব্রজ-বালার সনে
                        নন্দ-দুলাল খেলে হোলি!
রঙের মাতন লেগে যেন শ্যামল মেঘে
                        খেলেছে রাঙা বিজলি॥
রাঙা মুঠি-ভরা রাঙা আবির-রেণু
রাঙিল পীত-ধড়া শিখি পাখা বেণু
                        রাঙিল শাড়ি কাঁচলি॥
লচকিয়া আসে মুচকিয়া হাসে
মারে আবির পিচকারি,
চাঁদের হাট তোরা দেখে যা রে দেখে যা
রঙে মাতোয়ালা নর-নারী!
শিরায় শিরায় সুরার শিহরণ
                        রঙ্গে অঙ্গে পড়ে ঢলি॥

  • ভাবসন্ধান:  হোরি উৎসবের রাধাকৃষ্ণের যুগল-লীলা-সৌন্দর্য এই গানে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই গানের বর্ণনায় পাওয়া যায়, নন্দের আদুরে পুত্র আনন্দপ্রদায়ী কৃষ্ণ,  ব্রজবালার (রাধা ও তাঁর সঙ্গী)  সাথে হোলি আনন্দোৎসবে মেতে উঠেছেন। রঙ ছিটানো মাতাল এই উৎসবের শ্যামল মেঘ বর্ণের কৃষ্ণ-অঙ্গ হয়ে উঠছে রাঙা বিজুলির মতো। মুঠি মুঠি রাঙা আবিরের রেণুতে রঞ্জিত হয়েছে কৃষ্ণের  পীত-ধড়া (পীত বর্ণের কটিবসন), রঙিন হয়েছে ময়ূরের পাখা, বেণু (কৃষ্ণের বাঁশী অথবা বেণুবন), ব্রজনারীদের শাড়ি, কাঁচুলি। 

    ব্রজনারীরা মুচকি হাসি হেসে, লচকিয়া (লাস্যরূপে দোদুল দেহভঙ্গিমায়) এসে পিচকারি থেকে আবির ছিটায়। এই উৎসবকে কবি চাঁদের হাটের (আনন্দ-সৌন্দর্যের মেলা ) সাথে তুলনা করে, এবং সবাইকে এই উৎসব দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এই উৎসবের রঙে মাতাল নর-নারী। তাঁদের দেহের শিরায় শিরায় প্রবাহিত মাদকীয় শিহরণ। সে শিহরণ প্রেমরঙ হয়ে যেন তাঁদের মাতাল অঙ্গে ঢলে পড়ছে।
     
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। গানটি গীতি-শতদল  সঙ্গীত সঙ্কলনের প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৪১ বঙ্গাব্দের বৈশাখ  (এপ্রিল ১৯৩৪) মাসে। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৪ বৎসর ১১ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • গীতি-শতদল
      • প্রথম সংস্করণ [বৈশাখ ১৩৪১। এপ্রিল ১৯৩৪]। গীতি-শতদল-৭৪। হোরি-কার্ফা।
      • নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংকলন। পঞ্চম খণ্ড। বাংলা একাডেমী। ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮ মে, ২০১১।  গীতি-শতদল। গান সংখ্যা ৭৪। হোরি-কার্ফা। পৃষ্ঠা ৩২৫]
  • পর্যায়
    • বিষয়াঙ্গ:  ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। বৈষ্ণব সঙ্গীত। উৎসব। হোলি

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।