আজ না-চাওয়া পথ দিয়ে কে এলে (aj na-chaoa poth diye ke ele )

 'বাঙলায় মহাত্মা'
আজ    না-চাওয়া পথ দিয়ে কে এলে, ঐ কংস কারার দ্বার ঠেলে।
          আজ শব-শ্মশানে শিব নাচে ঐ ফুল ফুটানো-পা ফেলে॥
          আজ প্রেম দ্বারকায় ডেকেছে বান,
          মরুভূমে জাগল তুফান,
          দিগ্বিদিকে উপচে পড়ে প্রাণ রে!
          তুমি জীবন-দুলাল সব লালে-লাল করলে প্রাণের রং ঢেলে॥
          ঐ শ্রাবন্তি ঢল আসল নেমে,
          আজ ভারতের জেরুজালেমে
          মুক্তি-পাগল এই প্রেমিকের প্রেমে রে
          ওরে আজ নদীয়ায় শ্যাম নিকুঞ্জে রক্ষ হরি রাম খেলে॥
          ঐ চরকা-চাকায় ঘর্ঘর-ঘর
          শুনি কাহার আসার খবর,
          ঢেউ-দোলাতে দোলে সপ্ত সাগর রে!
          ঐ পথের ধূলা ডেকেছে আজ সপ্ত কোটি প্রাণ মেলে॥
          আজ জাত-বিজাতের বিভেদ ঘুচি,
          এক হল ভাই বামুন-মুচি
          প্রেম-গঙ্গায় সবাই হল শুচি রে!
          আয় এই যমুনায় ঝাঁপ দিবি কে বন্দেমাতরম্ বলে' 

                                              ওরে সব আগুন জ্বেলে॥

 

  • রচনাকাল ও স্থান: ফণি মনসা কাব্যগ্রন্থের প্রথম সংস্করণে এই গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। ১৩৩২ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ মাসে (মে ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ) মহাত্মা গান্ধীর হুগলী আসেন এবং তাঁর আগমন উপলক্ষে নজরুল এই গানটি রচনা করেছিলেন। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২৬ বৎসর ১ মাস।

    এই গানটির রচনার তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। ফণি মনসা কাব্যগ্রন্থের প্রথম সংস্করণে (শ্রাবণ ১৩৩৪। জুলাই-আগষ্ট ১৯২৭) গানটির নিচে রচনার স্থান ও তারিখ উল্লেখ আছে- ‌'হুগলি/জ্যৈষ্ঠ ১৩৩১‌'। প্রকৃত তারিখ হবে 'হুগলি/জ্যৈষ্ঠ ১৩৩১২'।

    খ্রিষ্টাব্দের বিচারে 'জ্যৈষ্ঠ ১৩৩১' হয়- মে-জুন ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ। গান্ধীজির কালানুক্রমিক জীবনী থেকে জানা যায়, এই বছরের মে-জুন মাস পর্যন্ত তিনি বোম্বে এবং আহমেদাবাদ অঞ্চলে ছিলেন। মূলত গান্ধীজি কলকাতায় এসেছিলেন ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে মে মাসের ১ তারিখে (শুক্রবার ১৮ বৈশাখ ১৩৩২)। এরপর ২ মে (শনিবার ১৯ বৈশাখ ১৩৩২) বৈশাখ তারিখে তিনি চলে যান ফরিদপুরে। সে সময়ে ফরিদপুরের অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় কংগ্রেস অধিবেশনে যোগদান করেন। সময়টা ছিল মে মাসের ২-৩ তারিখে (শনিবার-রবিবার ১৯-২০ বৈশাখ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ)। সেখান থেকে ৫ মে (মঙ্গলবার ২২  বৈশাখ ১৩৩২) আবার কলকাতায় ফিরে আসেন। এরপর বঙ্গদেশের বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শনের জন্য ৮ মে (শুক্রবার ২৫  বৈশাখ ১৩৩২) কলকাতা ত্যাগ করে মালিকান্দা যান। দীর্ঘ পরিভ্রমণ শেষে তিনি কলকাতা ফিরে আসেন ২৪ মে (রবিবার ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩২) তারিখে।
    [সূত্র: Gandhi 1915-1948/A Detailed of Choronlogy/compiled by C.B.Dalal. First Edition 1971]

    ২৬শে মে (মঙ্গলবার ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩২), গান্ধীজি হুগলি ভ্রমণ করবেন এমন সিদ্ধান্তের কথা কংগ্রেস কর্মীদের জানানো হয়েছিল। গান্ধীজির আগমন উপলক্ষে হুগলীর স্থানীয় কংগ্রেস কমিটি, একটি অভ্যর্থনা কমিটি গঠন করে। সে সময়ে হুগলী কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক ছিলেন নগেন্দ্র মুখার্জী। তিনি গান্ধীজির আগমন উপলক্ষে গঠিত অভ্যর্থনা কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হন।

    ২৫শে মে (সোমবার ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩২) ছিল নজরুলের ২৭তম জন্মদিন। এদিন তিনি গান্ধীজির আগমন উপলক্ষে নানা কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ইতিমধ্যে নজরুল কলকাতা থেকে আগত তাঁর পরিচিত জনদের তাঁর বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন এবং এ কথা  তাঁদের জানিয়ে রেখেছিলেন। কলকাতা থেকে আগত অতিথিরা ২৫মে বিকাল বেলা রেলযোগে হুগলীতে আসেন এবং নজরুলের বাড়িতে ওঠেন। এই সময় এই দলে ছিলেন মাহফুজুর রহমান খান। তিনি তাঁর ‌'কুড়িগ্রামে কবি নজরুল ও নজরুলের সন্নিধানে' প্রবন্ধে  লিখেছেন- নজরুল ২৬ মে সকাল বেলায় গান্ধীজির হুগলি আগমন উপলক্ষে একটি গান রচনা করেছিলেন।
  • গ্রন্থ:
    • ফণি মনসা
      • প্রথম সংস্করণ। শ্রাবণ ১৩৩৪ (জুলাই-আগষ্ট ১৯২৭)। শিরোনাম: বাংলায় মহাত্মা (গান)। পৃষ্ঠা: ২০ [নমুনা]
      • নজরুল রচনাবলী। জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, তৃতীয় খণ্ড। বাংলা একাডেমী, ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮, মে ২০১১। ফণী মনসা। শিরোনাম: 'বাংলায় মহাত্মা' [গান]। পৃষ্ঠা: ৪২।
    • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ২২৮২। ]
       

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।