আঁধার ভীত এ চিত যাচে মা গো আলো আলো (adhar bhito e chito jache maa go alo alo)

আঁধার ভীত এ চিত যাচে মা গো আলো আলো।
বিশ্ববিধাত্রী আলোকদাত্রী নিরাশ পরানে আশার সবিতা জ্বালো
                                        জ্বালো, আলো, আলো॥
                হারায়েছি পথ গভীর তিমিরে
                লহ হাতে ধ'রে প্রভাতের তীরে
পাপ তাপ মুছি' কর মা গো শুচি, আশিস-অমৃত ঢালো॥
দশ প্রহরণধারিণী দুর্গতিহারিণী দুর্গে মা অগতির গতি
সিদ্ধি-বিধায়িনী দনুজ-দলনী বাহুতে দাও মা শকতি।
                তন্দ্রা ভুলিয়া যেন মোরা জাগি ─
                এবার প্রবল মৃত্যূর লাগি',
রুদ্র-দাহনে ক্ষুদ্রতা দহ' বিনাশ গ্লানির কালো॥

১. প্রভু,
২. নাথ,
৩. পাণ্ডুলিপিতে এখানে দুটি পঙ্‌তি বেশি আছে :

                          অচেতন প্রাণে জাগরণ তৃষ্ণা আনো আনো
                           জড়তার বুকে জীবন-পিপাসা দানো দানো।

  • ভাবার্থ: এই দেবী দুর্গার কাছে অজ্ঞানতা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য প্রার্থনামূলক শাক্তসঙ্গীত। এই গানের সূচনা হয়েছে অজ্ঞানতা ও হতাশার অন্ধকার হতে চিত্তলোককে জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করার জন্য দেবীর কাছে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে। কবি মনে করেন যে, দুর্গা বিশ্বের অধিশ্বরী এবং জ্ঞানদানন্দিনী। অজ্ঞানতাজনীত অন্ধকারময় আশাহীন মনলোকে তিনিই পারেন জ্ঞানসূর্যকে প্রজ্বলিত করে হতাশ প্রাণে আশার সঞ্চার করতে। তাই তিনি গভীর ভক্তিতে দেবীর কাছে জ্ঞানের আলো প্রদানের জন্য গানের সুরে তাঁর এই প্রার্থনা করেছেন।
     
     কবি মনে করেন, অজ্ঞানতার কারণে তিনি সত্য ও কল্যাণের পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। তাই দেবীরা কাছে তাঁর প্রার্থনা, যেন তিনি তাঁকে অজ্ঞানতার অন্ধকার রাত্রিসম পাপপঙ্কিল জগতের অশুভ ও অশুচি দশা থেকে জ্ঞান-প্রভাতের শুভলগ্নে পৌঁছার পথ দেখান। যেন তিনি সকল পাপ-পঙ্কিলতা বিদূরিত করেন এবং কল্যাণের অমৃত আশীর্বাদের বর্ষণে তিনি স্নাতক হতে পারেন।
     
     দেবী দূর্গার দশ হাত অকল্যাণ ও অশুভ শক্তি-নিবারকের প্রতীক। কবি জগতের সকল অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য দেবীর দানব-বিনাশী শক্তি প্রার্থনা করেছেন। কবি মনে করেন- অশুভ শক্তির প্রভাবে সকল মানুষ মোহগ্রস্থ। এই অশুভ শক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজন প্রবল মৃত্যু-সংগ্রাম। কবির সর্বশেষ প্রার্থনা, দেবী যেন তাঁদের সহায় হয়ে প্রবল সংগ্রামের দ্বারা সকল ক্ষুদ্রতা নীচতাকে তাঁর রূদ্ররূপী অগ্নিবাণে দগ্ধ করেন। এর মধ্য দিয়ে যেন অবসান হয় সকল হতাশার গ্লানি।

     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে (আশ্বিন-কার্তিক ১৩৪৩)। এইচএমভি  রেকর্ড কোম্পানি গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করেছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৭ বৎসর ৪ মাস।
     
  • পত্রিকা: ভারতবর্ষ, অগ্রহায়ণ ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ (নভেম্বর-ডিসেম্বর ১৯৩৬) (স্বরলিপি-সহ)। শিবমত ভৈরব-ঢিমে তেতালা। স্বরলিপিকার-জগৎ ঘটক। সুর-নজরুল ইসলাম। [নমুনা ]
     
  • বেতার
    • হারামণি-৬। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ১১ মার্চ ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (সোমবার ২৭ ফাল্গুন ১৩৪৬)। সন্ধ্যা ৭-২০ মিনিট। রাগ: শিবমত ভৈরব। শিল্পী-কাজী নজরুল ইসলাম
      • সূত্র
        • বেতার জগৎ পত্রিকার ১১শ বর্ষ, ৫ম সংখ্যা। অনুষ্ঠান সূচী [পৃষ্ঠা: ২৬২] 
    • মা এল র [গীতিনকশা]। রচয়িতা: হিমাংশু দত্ত। কলকাতা বেতারকেন্দ্র-ক। চতুর্থ অধিবেশন।  ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪০ [শনিবার, ১২ আশ্বিন ১৩৪৭] সান্ধ্য অনুষ্ঠান। সময়: ৮-৮.৩৯
      • সূত্র:
        • বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ, ১৮শ সংখ্যা। ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৪০। পৃষ্ঠা: ১০০২
        • The Indian-listener 1940, Vol V, No 18. page 1429
    • ষট ভৈরব (ছয়টি ভৈরব অঙ্গের রাগ নিয়ে সৃষ্ট সঙ্গীতানুষ্ঠান)। কলকাতা বেতার কেন্দ্র।  ১৩ জুলাই ১৯৪১ (রবিবার ২৯ আষাঢ়। ১৩৪৮)। সান্ধ্য অধিবেশন। ৮.২৫-৯.০৪।
      • সূত্র:
        • বেতার জগৎ [১২শ বর্ষ ১৩শ সংখ্যা, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ১৯৪১, ১৭ আষাঢ় ১৩৪৮ পৃষ্ঠা ৭৭৮]
        • The Indiann-Listener [22 Sepetember 1939/Vol. VI No. 13. Page 79]
  • রেকর্ড: এইচএমভি [অক্টোবর ১৯৩৬ (আশ্বিন-কার্তিক ১৩৪৩)। এইচ. টি. ৭৬। শিল্পী ছিলেন বাংলার ছেলেমেয়ে (ধীরেন দাস, সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায় ও সুধীরা সেনগুপ্ত)।]
     
  • সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
  • বিষয়াঙ্গ: ভক্তি [হিন্দুধর্ম, শাক্ত, প্রার্থনা]
  • সুরাঙ্গ: খেয়ালাঙ্গ
  • গ্রহস্বর: দণ

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।