নহে নহে প্রিয় এ নয় আঁখি-জল (nohe nohe priyo e noy ankhi jol)

রাগ: দুর্গা (বিলাবল ঠাট),
তাল:কাহার্‌বা

নহে নহে প্রিয় এ নয় আঁখি-জল
মলিন হয়েছে ঘুমে চোখের কাজল॥
হেরিয়া নিশি-প্রভাতে
শিশির কমল-পাতে
ভাব বুঝি বেদনাতে ফুটেছে কমল॥
এ শুধু শীতের মেঘে
কপট কুয়াশা লেগে'
ছলনা উঠেছে জেগে' এ নহে বাদল॥
কেন কবি খালি খালি
হ'লি রে চোখের বালি
কাঁদাতে গিয়া কাঁদালি নিজেরে কেবল॥

  • ভাবসন্ধান: অভিমানে দয়িতার আঁখি ছল ছল। তার গোপন আঁখি-জলের প্রবাহে চোখের কাজল ম্লান হয়ে গেছে। কিন্তু অভিমানিনী দয়িতা তা প্রকাশ করতে চায় না। গোপন বেদনায় যা প্রকটিত, তাকে গোপনে রাখার জন্য, ছল করে বলছে, এ দুঃখের আঁখিজল নয়। অশ্রজলে চোখের কাজল মলিন হয় নি, হয়েছে ঘুমের কারণে।

    এই গানের দুটি অন্তরায়, অভিমানিনী উপমার ভিতর দিয়ে নিজের গোপন বেদনাকে যেভাবে লুকাতে চেয়েছেন তা করুণ রসে সিক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। রাত্রি শিশিরসিক্ত পদ্মফুলের দলমণ্ডল যেমন ভোরের আলোয় মলিন দেখায়, তা দেখে বেদনাবিধুর মনে হতে পারে। কিম্বা শীতের মেঘে কুয়াসার স্পর্শ লেগে যেমন মেঘের প্রকৃত রূপ ভিন্নরূপে প্রকাশ পায়,  তেমনি অভিমানিনীকে যেন কপট বেদনাঘাতে নিষ্প্রভ বা ম্লান দেখায়। মেঘ থেকে ঝরে পড়া কুয়াসার বিন্দু যেমন বৃষ্টি নয়, তেমন অভিমানিনীর চোখের জলও তেমনি প্রকৃত আঁখি-জল নয়। শেষ অন্তরায়, 'কবি' ভনিতায় অভিমানিনীর ভাব প্রকাশ পায় ভিন্ন মাত্রায়। দয়িতার অভিমানের বেদনাকে প্রকাশ করতে গিয়ে, কবি নিজেই বেদনাপ্লুত। তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কবি দয়িত-দয়িতার বিচার করতে গিয়ে, এখন সে যেন উভয়েরই শত্রু।
     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে জানা যায় না। গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল কালিকলম পত্রিকার 'জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৫' সংখ্যায়। নজরুল ইসলাম তাঁর ২৮ বৎসর অতিক্রান্ত বয়সের শেষের দিকে এই গানটি রচনা করেছিলেন।
     
  • পত্রিকা:  
  • গ্রন্থ:
    • বুলবুল
      • প্রথম সংস্করণ [কার্তিক ১৩৩৫ বঙ্গাব্দ (নভেম্বর ১৯২৮)। গান ২০। দুর্গা-কাওয়ালি]
      • নজরুল-রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ফাল্গুন ১৪১৩। ফেব্রুয়ারি ২০০৭। বুলবুল। গান ২০। দুর্গা-কাওয়ালি। পৃষ্ঠা: ১৬৬-১৬৭]
    • নজরুল-গীতিকা
      • প্রথম সংস্করণ: সেপ্টেম্বর ১৯৩০। ভাদ্র ১৩৩৭। ভৈরবী-কাহারবা। গজল। ১৯। (বেলাওল ঠাটের) দুর্গা- কাওয়ালী। পৃষ্ঠা: ৭৮।
      • নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। তৃতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ঢাকা জুন ২০১২। নজরুল গীতিকা।  ৬৪। গজল। (বেলাওল ঠাটের) দুর্গা- কাওয়ালী।  পৃষ্ঠা: ২১৪]
         
  • রেকর্ড: এইচএমভি। [ডিসেম্বর ১৯২৯ (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৩৬)। পি. ১১৬৭০। শিল্পী: আঙ্গুরবালা] [শ্রবন নমুনা]
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
    •  নলিনীকান্ত সরকার। সঙ্গীত বিজ্ঞান প্রবেশিকা। মাঘ ১৩৩৬। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ১৯৩০। স্বরলিপি: নলিনীকান্ত সরকার। [নমুনা]
    • সুধীন দাশ। [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি,ষষ্ঠ খণ্ড, (নজরুল ইন্সটিটিউট, ফাল্গুন ১৪০৩। ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭)-এর ১৫ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৭৭-৮০।]  [নমুনা]

    নজরুলের জীবদ্দশায় তাঁর গানের যে সুর-বিকৃতি চলছিল, তাতে তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ আগষ্ট (শুক্রবার, ৭ ভাদ্র ১৩৩৬) নবশক্তি' পত্রিকায় প্রকাশিত চিঠিতে তিনি এই বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছলেন। এই চিঠিতে বেতারে প্রচারিত [২৩ আগষ্ট ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ [নবশক্তি' পত্রিকায় প্রকাশিত পত্র]

    এই পত্রে এই গানটি প্রসঙ্গে তিনি লিখেছিলেন-

    'একদিন শুনলাম কোনো একজন আমার ঠুমরী চালের দুর্গা সুরের “নহে নহে প্রিয় এ নয় আখিজল' গানটিকে ধ্রুপদের ইমন সুরে গাইছেন এবং তা শুনে আমার গানের আঁখিজল আমার চোখে দেখা দিল। অবশ্য অনুরাগে নয়, রাগে এবং দুঃখে। ভাগ্যিস গান এবং গাইয়ে দুই-ই ছিল নাগালের বাইরে, নইলে সেদিন ভালো করেই সুরাসুরের যুদ্ধ বেধে যেত।'

  • পর্যায়:

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।