পরান-প্রিয়! কেন এলে অবেলায় (poran-priyo! keno ele obelay)
রাগ: পিলু. তাল: দাদ্রা
পরাণ-প্রিয়! কেন এলে অবেলায়
শীতল হিমেল বায়ে ফুল ঝ'রে যায়॥
সেদিনো সকাল বেলা
খেলেছি কুসুম-খেলা,
আজি যে কাঁদি একেলা ভাঙ্গা এ মেলায়॥
- ভাবসন্ধান: কোন এক অভিমানিনী প্রেমিকা তাঁর অতীত প্রেমের স্মৃতি কাতরতা নিয়ে, বহুদিন পরে- জীবনে ফিরে আসা প্রেমিকের কাছে ব্যথিত অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন এই গানে। যৌবনের আনন্দমুখরতায় যখন প্রেমিকা দেয়া-নেয়ার আকাঙ্ক্ষা উদ্বেলিত ছিলেন, তখন প্রেমিক তাঁকে অবহেলা করেছিলেন। কিম্বা হয়তো বিচ্ছেদ ঘটেছিল কোনো ভাবে। সেই প্রেমিকই ফেরে এসেছেন তাঁর জীবনে অনেক পরে। তখন তিনি যৌবনের শেষ প্রান্তে, তখন তাঁর প্রেমের প্রস্ফুটিত ফুল নিস্প্রভ হয়ে ঝড়ে পড়ার বেলা। এই গানে অবেলা হয়ে উঠেছে ক্ষয়িষ্ণু যৌবনের শেষপ্রান্ত, তাই অসময়ের যৌবনপ্রবাহ শীতল হিমেল বায়ুর সাথে তুলনীয় হয়ে উঠেছে।
প্রেমিকা গানটির অন্তরাতে স্থায়ীর ভাবকেই স্মৃতি কাতরতার মধ্য দিয়ে বিস্তারিত করেছেন। প্রথম যৌবনের শুরুতে ছিল প্রেমের খেলা, ছিল যৌবনবসন্তের লীলা। তারপরেই ফেলে আসা স্মৃতি থেকে প্রেমিক বর্তমানে ফিরে দেখছেন- যৌবনবসন্তের ভাঙা মেলা। এখন তাঁর দেওয়া-নেওয়ার সম্পদ নেই। এখন ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে শুধুই বিলাপ করার সময়। গানটির শেষে এই বিলাপটিই আবার ফিরে যায় স্থায়ীতে। যেখানে প্রেমিককে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে প্রেমিক বলেন 'পরাণ-প্রিয়! কেন এলে অবেলায়'।
গানটির রাগ পিলু। নজরুল পিলুর বেদনাবিধূর স্বরগুচ্ছ ব্যবহার করে, বিরহের করুণ রসে সিক্ত করেছেন গানটিকে। তাই পরান-প্রিয় শব্দ শুধু সম্বোধন হিসেবে এই গানে উপস্থাপিত হয় না, বরং 'জ্ঞা -মজ্ঞা রসা ন্সা' তৈরি করে অভিমানিনীর কাতরতা। পরবর্তী কেন শব্দটি তীব্রতর হয়ে কোমল ধৈবতকে স্পর্শ করে ফিরে আসে পঞ্চম ছুঁয়ে কোমল গান্ধারে। তারপরে বিশ্রাম ষড়্জতে। কিন্তু উদারার শুদ্ধ নিষাদের আর শুদ্ধ ঋষভের আনোগানায় এখানে 'পিলু' হয়ে উঠে বেদনার রসরঞ্জক। অন্তরাতে এই বেদনাটিই সঞ্চারিত হয় সুরের স্বাভবিক চলনের ঢংয়ে। হয়তো স্মৃতিচারণার জন্য সেটাই যথার্থ। এরপরেই অন্তরাতে আবার পিলু ফিরে আসে করুণরসের মহিমা নিয়ে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৩৩৫ বঙ্গাব্দের কার্তিক (নভেম্বর ১৯২৮) মাসে প্রকাশিত 'বুলবুল' নামক সঙ্গীত-সংকলনে প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২৯ বৎসর ৫ মাস।
- গ্রন্থ:
- বুলবুল
- রথম সংস্করণ [কার্তিক ১৩৩৫ (নভেম্বর ১৯২৮)। গান ১৩। পিলু-দাদরা]
- নজরুল-রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ফাল্গুন ১৪১৩। ফেব্রুয়ারি ২০০৭। বুলবুল। গান ১৩। পিলু-দাদর। পৃষ্ঠা: ১৬২]
- বুলবুল
- রেকর্ড:
- এইচএমভি। জানুয়ারি ১৯২৯ (পৌষ-মাঘ ১৩৩৫)। পি ১১৫৫৪। শিল্পী: মাণিকমালা
- টুইন। এফটি ৩৭৮৬। জানুয়ারি ১৯২৯ (পৌষ-মাঘ ১৩৩৫) শিল্পী: মাণিকমালা [শ্রবন নমুনা]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, পঞ্চদশ খণ্ড। ভাদ্র ১৪০৩। আগষ্ট ১৯৯৬। ২২ সংখ্যাক গান। রেকর্ডে মাণিকমালা-এর গাওয়া গানের সুরানুসারে স্বরলিপি করা হয়েছে। [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: প্রেম
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের গান
- তাল: দাদরা
- গ্রহস্বর: সা