পাষাণের ভাঙালে ঘুম কে তুমি সোনার ছোঁওয়ায় (pashaner bhangale ghum ke tumi sonar chhoyay)
রাগ: ভীমপলশ্রী, তাল: দাদরা
পাষাণের ভাঙালে ঘুম কে তুমি সোনার ছোঁওয়ায়,
গলিয়া সুরের তুষার গীত-নির্ঝর ব'য়ে যায়॥
উদাসী বিবাগী মন যাচে আজ বাহুর বাঁধন,
কত জনমের কাঁদন ও-পায়ে লুটাতে চায়॥
ওগো তোমার চরণ-ছন্দে মোর মুঞ্জরিল গানের মুকুল
তোমার বেণীর বন্ধে গো মরিতে চায় সুরের বকুল
চম্কে ওঠে মোর গগন ঐ হরিণ-চোখের চাওয়ায়॥
- ভাবসন্ধান: প্রেমহীন কবি পাষাণের মতো অকরুণ, কঠিন দশায় ছিলেন। দয়িতার স্বর্ণময় রঙিন স্পর্শে তাঁর ভিতরে শাশ্বত প্রেম জেগে ওঠে। যেমন করে বরফ গলে জলের ধারা বয়ে যায়, তেমনি কবির পাষাণ হৃদয় গলে প্রেমের অমিয়ধারা প্রবাহিত হয় গানের ঝর্নাধারায় ।
কবির মন ছিল উদাসী সংসার বিমুখ। দয়িতার স্পর্শে তিনি হয়ে ওঠেন কামনাবিধুর প্রেমিক। তাঁর ভিতরে প্রেয়সীর বাহুবন্ধনের প্রত্যাশা জাগে। বহুদিনের সঞ্চিত আকাঙ্ক্ষা মূর্ত হয়ে ওঠে, দয়িতার কাছে তিনি আত্ম-সমর্পণে উদ্গ্রীব হয়ে ওঠেন।
সৃজনশীল কবি সত্তা জেগে ওঠে প্রেয়সীর রূপ ও সৌন্দর্যের স্পর্শে। প্রেয়সীর চরণছন্দে কবির ভিতরে সঙ্গীতের ছন্দ জেগে ওঠে; তার বেণীর বন্ধনে কবি খুঁজে পান বাণী ও সুরের মেলবন্ধন। তাঁর সঙ্গীতাকাশে সচকিত সৌন্দর্য বিমুগ্ধ আলো ছড়ায়, তাঁর গান প্রেয়সীর মায়া ভরা চোখের মোহনীয় সৌন্দর্যের অনুপ্রেরণায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে ।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ আগষ্ট (শুক্রবার ২৭ শ্রাবণ ১৩৩৯), মেগাফোন রেকর্ড কোম্পানি নজরুলের কণ্ঠে গানটি রেকর্ড করেছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৩ বৎসর ২ মাস।
- রেকর্ড:
- মেগাফোন রেকর্ড ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ আগষ্ট (শুক্রবার ২৭ শ্রাবণ ১৩৩৯) নজরুলের কণ্ঠে গানটি রেকর্ড করে। ১৯৩২ সেপ্টেম্বর (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৩৯) রেকর্ডটির প্রকাশিত হয়েছিল। রেকর্ড নম্বর। জেএনজি ৮। শিল্পী: নজরুল ইসলাম।
বি.দ্র.: রেকর্ড বুলেটিনে মন্তব্য এরূপ "এই গান দুইটি (অন্য গান- দিতে এলে ফুল হে প্রিয়) গাহিয়াছেন বঙ্গবাণীর প্রিয় দুলাল কবিবর কাজী নজরুল ইসলাম। কথা ও সুর তাঁহার নিজের। কবির সর্বতোমুখী প্রতিভার সহিত বাঙ্গালী আজ সর্বতোভাবে পরিচিত, তাই নতুন করিয়া তাঁর পরিচয় কি দিব। তবে ইহা বিদ্রোহী কবির অন্তর্নিহিত জ্বালার গৈরিক নিঃস্রাব নয়, ইহা দরদী কবির দরদী দিনের দুঃখ-দরিয়ার ফেনিল উচ্ছ্বাস। ...
কিছু দিন হইতে বাঙ্গালী পরিপূর্ণভাবে সঙ্গীত রসের পরিচয় পাইয়া আসিতেছে কবির রচিত শত শত জনপ্রিয় সঙ্গীতে। যে কণ্ঠ একদিন বাংলার পথে প্রান্তরে, নগরে গ্রামে, গঙ্গার পদ্মার তীরে নব প্রাণের বাণী শুনাইয়া ফিরিয়াছে, প্রাণ-উন্মাদিনী সেই কণ্ঠকে চিরস্থায়ীভাবে রেকর্ডে রেখা-বদ্ধ করা হয় নাই, আজ প্রত্যেক দেশবাসীর দ্বারে আমরা সেই সুবিধা লইয়া আসিয়াছি।"
বুলেটিনে এই রেকর্ড সম্বন্ধে বক্তব্য প্রথমেই স্থান পেয়েছে, তার পরে রয়েছে জে.এন.জি. ১ সম্বন্ধে পরিচয়। বুলেটিনের কভারে রয়েছে কবির ফটো।
[তথ্যসূত্র: নজরুল সঙ্গীত নির্দেশিকা, ব্রহ্মমোহন ঠাকুর (নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা। প্রথম সংস্করণ। ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৬। ২৫ মে ২০০৯)। ১৬৩৪ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ৪৫২-৪৫৩] [শ্রবন নমুনা]
- মেগাফোন রেকর্ড ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ আগষ্ট (শুক্রবার ২৭ শ্রাবণ ১৩৩৯) নজরুলের কণ্ঠে গানটি রেকর্ড করে। ১৯৩২ সেপ্টেম্বর (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৩৯) রেকর্ডটির প্রকাশিত হয়েছিল। রেকর্ড নম্বর। জেএনজি ৮। শিল্পী: নজরুল ইসলাম।
- গ্রন্থ:
- বনগীতি
- প্রথম সংস্করণ ১৩ অক্টোবর ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দ (রবিবার ২৭ আশ্বিন ১৩৩৯) । ভীমপলশ্রী মিশ্র-দাদরা। পৃষ্ঠা: ৪১] ।
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। পঞ্চম খণ্ড। বাংলা একাডেমী। ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮ মে, ২০১১। বনগীতি। ২৬ সংখ্যক গান। গজল-গান। পৃষ্ঠা ১৯৪-১৯৫]
- বনগীতি
- সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম। [রেকর্ড-সূত্র]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- নিতাই ঘটক। সঙ্গীতাঞ্জলি, প্রথম খণ্ড (জেনারেল প্রিন্টার্স য়্যান্ড পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, ১৩৭৫। পৃষ্ঠা: ১২-১৪] [নমুনা]
- সুধীন দাশ। [কবির স্বকণ্ঠে গীত গান । নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, পঞ্চম খণ্ড। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা] প্রথম গান। পৃষ্ঠা: ৩৫-৩৯। [নমুনা]
- পর্যায়