ভিক্ষা দাও! ভিক্ষা দাও (bhikkha dao bhikkha dao)

কোরাস্:     ভিক্ষা দাও! ভিক্ষা দাও!
                ফিরে চাও ওগো পুরবাসী, সন্তান দ্বারে উপবাসী।
    ‌            দাও মানবতা ভিক্ষা দাও! জাগো গো,জাগো গো,
                তন্দ্রা-অলস জাগো গো, জাগো রে! জাগো রে!

                ১
                মুক্ত করিতে বন্দিনী মা'য়
                ‌কোটি বীরসুত ঐ হেরো দায়,
                মৃত্যু-তোরণ-দ্বার-পানে— কার যানে?
                দ্বার খোলো দ্বার খোলো! একবার ভুলে ফিরিয়া চাও॥
কোরাস্:    'ভিক্ষা দাও'
                ২
                জননী আমার ফিরিয়া চাও! ভাইরা আমার ফিরিয়া চাও!
                চাই মানবতা, তাই দ্বারে কর হানি মা গো বারে বারে-
                দাও মানবতা ভিক্ষা দাও!
                পুরুষ-সিংহ জাগো রে! সত্যমানব জাগো রে।
                বাধা-বন্ধন-ভয়-হারা হও সত্য-মুক্তি-মন্ত্র গাও॥
কোরাস্:    'ভিক্ষা দাও'
                ৩
                লক্ষ্য যাদের উৎপীড়ন আর অত্যাচার,
                নর-নারায়ণে হানে পদাঘাত জেনেছে সত্য-হত্যা সার॥
                                                            অত্যাচার! অত্যাচার!!
                ত্রিশ কোটি নর-আত্মার যারা অপমান হেলা করেছে রে
                                                            শৃঙ্খল গলে দিয়েছে মা'র।
                সেই আজ ভগবান তোমার! অত্যাচার! অত্যাচার!!
                ছি-ছি-ছি-ছি-ছি-ছি-নাই কি লাজ-
                নাই কি আত্মসম্মান ওরে নাই জাগ্রত ভগবান কি রে
                আমাদেরো এই বক্ষোমাঝ?
                অপমান বড় অপমান ভাই মিথ্যার যদি মহিমা গাও॥
কোরাস্:    'ভিক্ষা দাও'
                ৪
                আল্লায় ওরে হকতা'লায়
                পায়ে ঠেলে যারা অবহেলায়;
                আজাদ-মুক্ত আত্মারে যারা শিখায়ে ভীরুতা করেছে দাস-
                সেই আজ ভগবান তোমার! সেই আজ ভগবান তোমার!
                                                                  সর্বনাশ! সর্বনাশ!
                ছি-ছি নির্জীব পুরবাসী আর খুলো না দ্বার! জননী গো! জননী গো!
                কার তরে জ্বালো উৎসব-দীপ? দীপ নেবাও! দীপ নেবাও!!
                মঙ্গল-ঘট ভেঙে ফেলো, সব গেল মা গো সব গেল!
                                                                   অন্ধকার! অন্ধকার!
                ঢাকুক এ মুখ অন্ধকার! দীপ নেবাও! দীপ নেবাও।
কোরাস্:    'ভিক্ষা দাও'
                ৫
                ছি ছি ছি ছি এ কি দেখি গাহিস তাদেরি বন্দনা-গান
                দাস সম নিস হাত পেতে দান
                ছি-ছি-ছি ছি-ছি-ছি ওরে তরুণ ওরে অরুণ!
                নরসুত তুমি দাসত্বের এ ঘৃণ্য চিহ্ন মুছিয়া দাও!
                ভাঙিয়া দাও, এ-কারা এ-বেড়ি ভাঙিয়া দাও॥
কোরাস্:    'ভিক্ষা দাও'
                ৬
                পরাধীন ব'লে নাই তোমাদের সত্য-তেজের নিষ্ঠা কি?
                অপমান স'য়ে মুখ পেতে নেবে বিষ্ঠা ছি?
                মরি লাজে, লাজে মরি!
                এক হাতে তোরে 'পয়জার' মারে, আর হাতে ক্ষীর সর ধরি'!
                অপমান সে যে অপমান!
                জাগো জাগো ওরে হতমান!
                কেটে ফেলো লোভী লুব্ধ রসনা, আঁধারে এ হীন মুখ লুকাও॥
কোরাস্:     'ভিক্ষা দাও'
                ৭
                ঘরের বাহির হয়ো না আর,
                ঝেড়ে ফেলো হীন বোঝার ভার,
                কাপুরুষ হীন মানবের মুখ ঢাকুক লজ্জা অন্ধকার।
                পরিহাস ভাই পরিহাস সে যে,
                পরাজিতে দিতে মনোব্যথা- যদি জয়ী আসে রাজ-রাজ সেজে।
                পরিহাস এ যে নির্দয় পরিহাস! ওরে কোথা যাস্
                বল কোথা যাস ছি ছি পরিয়া ভীরুর দীন বাস?
                অপমান এত সহিবার আগে হে ক্লীব, হে জড়, মরিয়া যাও॥
কোরাস্:    'ভিক্ষা দাও'
                ৮
                পুরুষসিংহ জাগো রে! নির্ভীক বীর জাগো রে!
                দীপ জ্বালি কেন আপনারি হীন কালো অন্তর
                কালামুখ হেন হেসে দেখাও!
                নির্লজ্জ রে ফিরিয়া চাও!
                অন্ধকার! অন্ধকার!
                নিশ্বাস আজি বন্ধ মা'র
                অপমানে নির্মম লাজে,
                তাই দিকে দিকে ক্রন্দন বাজে-
                দীপ নেবাও! দীপ নেবাও! আপনার পানে ফিরিয়া চাও॥
কোরাস্:     'ভিক্ষা দাও'

  • রচনাকাল ও স্থান: ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে (অগ্রহায়ণ ১৩২৮) নজরুল কুমিল্লায় যান। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে নভেম্বর (সোমবার ৫ অগ্রহায়ণ ১৩২৮) কান্দি পাড়ায় বীরেন সেনের বাসায় এই গানটি রচনা করেছিলেন। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল- ২২ বৎসর ৬ মাস।

    গানটি রচনার প্রেক্ষাপট ও সময় সম্পর্কে গুলিস্তাঁ-র নজরুল সংখ্যায়- আফতাব-উল্ ইসলাম লিখেছেন-

'১৯২১ সনে শ্রীযুত বীরেন সেন (কাজীর এবং আমাদের সকলের 'রাঙা দা') তখন কুমিল্লা জাতীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক। কাজী নজরুল কান্দিরপাড় তাঁরই বাড়ীতে থাকেন। প্রিন্স্ অব ওয়েল্‌সের ভারত-ভ্রমণ উপলক্ষে কংগ্রেস-ঘোষিত হরতাল-পালনের জন্য (২১শে নভেম্বর) একটি গান লিখে দেওয়ার অনুরোধ নিয়েই তাঁর সাথে দেখা করি 'রাঙা দা'র বাড়ীতে। তিনি তা তো দিলেনই, অধিকন্তু কাঁধে হারমোনিয়াম বেঁধে মিছিলের সঙ্গে তিনি নিজেও গাইলেন:
                ভিক্ষা দাও! ভিক্ষা দাও!...'।

  • পত্রিকা: ধূমকেতু। প্রথমবর্ষ। দ্বিতীয় সংখ্যা [৩০ শ্রাবণ  ১৩২৯, মঙ্গলবার, ১৫ আগষ্ট ১৯২২] শিরোনাম: জাগরণী গান। পৃষ্ঠা ১]
     
  • গ্রন্থ: ভাঙার গান  প্রথম সংস্করণ। শ্রাবণ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ (আগষ্ট ১৯২৪)।
  • রেকর্ড: ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জুলাই (বৃহস্পতিবার, ৩১ আষাঢ় ১৩৪৪) এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানির সাথে নজরুলের চুক্তি হয়েছিল। এই চুক্তির তালিকায় এই গানটি 'ভিলনী ভিলিয়া‌ শিরোনামে উল্লেখ ছিল। রেকর্ডের সন্ধান পাওয়া যায় নি।

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।