মনের রঙ লেগেছে বনের পলাশ জবা অশোকে (moner rong legechhe boner)

মনের রঙ লেগেছে বনের পলাশ জবা অশোকে
রঙের ঘোর জেগেছে পারুল কনক-চাঁপার চোখে॥
মুহু মুহু বোলে কুহু কুহু কোয়েলা, মুকুলিত আমের ডালে
                                   গাল রেখে ফুলের গালে।
দোয়েলা দোল দিয়ে যায়, ডালিম ফুলের নব-কোরকে॥
ফুলের পরাগ ফাগের রেণু ঝুরু ঝুরু ঝরিছে গায়ে
                                      ঝিরি ঝিরি চৈতী বায়ে
বকুল বনে ঝিমায় মধুপ মদির নেশার ঝোঁকে॥
হরিত বনে হরষিত মনে হোরির হর্‌রা জাগে
                                  রঙিলা অনুরাগে
নূতন প্রণয়-সাধ জাগে চাঁদের রাঙা আলোকে॥

  • ভাবসন্ধান: বসন্তের পুষ্পশোভিত বর্ণাঢ্য আয়োজনে,পাখির মধুর ধ্বনিতে প্রকৃতি হয়ে ওঠে  উৎসবমুখর। এই উৎসবের মোহনীয় আবেশে কবি চিত্ত বিভোর। সেই মোহিত দশায় কবি প্রকৃতির এই বসন্তোৎসবকেই যৌবনরাগে সাজিয়েছেন প্রকৃতিরই নানা উপকরণ দিয়ে। কবি অনুভব করেছেন, যেন তাঁর মনের রঙেই রঙিন হয়ে উঠেছে- পলাশ,অশোক,জবা,পারুল,কণক-চাঁপা ফুল। এখানে কবির বাসনা এবং প্রকৃতির বাসনা একাকার হয়ে গেছে।

    বসন্তের এই মহোৎসবে নব-আম্রমুকুল যৌবন রাগে বিকশিত হওয়ার অপেক্ষায় থাকে। যৌবন-সঙ্গীর আসঙ্গলীপ্সায় কোকিল মুহুমহু ডাকে। মুকুল ও কোকিল উভয়ই যেন যৌবনরাগে আবেশিত,তাই উভয়ই যেন পরস্পরে গালে গাল রেখে বন্ধু হয়ে যায়। একই ভাবে দোয়েল পাখিও ডালিমের নবমুকুলে যৌবনের দোলা দিয়ে যায়।

    ফাগের (আবির) রেণুর মতো ফুলের পরাগ রেণু ঝরে পরে চৈত্রের ঝিরিঝির (মৃদুমন্দ) বাতাসে। যৌবন-আবেশে মধু পানের নেশায় যেন মধুপ (মধু পানকারী অর্থে মৌমাছি, ভ্রমর) ঝিমিয়ে পড়ে। হরিত (সবুজ) বনে, আনন্দিত মনোলোকে যেন হোরি-উৎসবের (বসন্তকালে রাধা-কৃষ্ণের দোলোৎসব) রঙিন অনুরাগ জেগে ওঠে। প্রকৃতির এই বসন্তোৎসবে জেগে ওঠে নব-প্রেমের বাসনা। তখন চাঁদের আলোও যেন প্রেমের রঙিন আলো ছড়ায়।

    প্রকৃতি বসন্তোসবের এই অনবদ্য উপস্থাপনায় মিশে আছে মিলন-পূর্ব প্রগাঢ় শৃঙ্গার রসের অনুভব। এই গানে সফল প্রেমের প্রশান্তি নেই আবার ব্যর্থ প্রেমের যন্ত্রণাও নেই। আছে শুধুই কবির মনে জেগে ওঠা বসন্তোৎসবের শৃঙ্গারধর্মী চিত্রের সৌন্দর্য-সন্দর্শন।
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ অক্টোবর, (মঙ্গলবার ৬ কার্তিক ১৩৪১) গানটি প্রথম গানের মালা সঙ্গীত-সংকলনের প্রথম সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৫ বৎসর ৪ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • গানের মালা
      • প্রথম সংস্করণ আশ্বিন ১৩৪১ বঙ্গাব্দ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ)। ১৮। চৈতী-কার্ফা
      • নজরুল রচনাবলী। জন্মশতবর্ষ সংকলন ষষ্ঠ খণ্ড। বাংলা একাডেমী, ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯, জুন ২০১২। গানের মালা। ১৮। চৈতী-কার্ফা। পৃষ্ঠা ২০৩-২০৪]
    • নজরুল গীতি, অখণ্ড
      • প্রথম সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ৬ আশ্বিন ১৩৮৫। ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮]
      • দ্বিতীয় সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ১ শ্রাবণ ১৩৮৮। ১৭ জুলাই ১৯৮১]
      • তৃতীয় সংস্করণ [ব্রহ্মমোহন ঠাকুর সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ৮ মাঘ ১৪১০। ২৩ জানুয়ারি ২০০৪। কাব্য-গীতি। চৈতী-কার্ফা। ৬০৭ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ১৫৭]
      • পরিবর্ধিত সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। বৈশাখ শ্রাবণ ১৪১৩। এপ্রিল-মে ২০০৬] ভৈরবী-গজল। ৬০৬ সংখ্যাক গান। পৃষ্ঠা: ১১৫।
  • নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্‌ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান ৩২। পৃষ্ঠা ১০-১১]
  • নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, দ্বিতীয় খণ্ড। প্রথম প্রকাশ, দ্বিতীয় মুদ্রণ [কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। পৌষ ১৪০২। ডিসেম্বর ১৯৯৫। ৭ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ৪৫-৪৭]
     
  • রেকর্ড: এইচএমভি [মার্চ ১৯৩৫ (ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৪১)। এন ৭৩৪৬। শিল্পী: শঙ্কর মিশ্র (মহম্মদ কাশেম] [শ্রবণ নমুনা]
     
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: সুধীন দাশনজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, দ্বিতীয় খণ্ড। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা। ফাল্গুন ১৪১১। ফেব্রুয়ারি ২০০৫। সপ্তম গান। [নমুনা]
  • স্বরলিপিকার: সুধীন দাশ
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি, ঋতু (বসন্ত )
    • সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের গান।
    • তাল: কাহারবা
    • গ্রহস্বর: মপা।

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।