সাজিয়াছ যোগী বল কার লাগি (sajiyachho jogi bol kar lagi)

সাজিয়াছ যোগী বল কার লাগি’
                         তরুণ বিবাগী॥
           হের তব পায়ে
           কাঁদিছে লুটায়ে
নিখিলের প্রিয়া তব প্রেম মাগি’
                        তরুণ বিবাগী॥
ফাল্গুন কাঁদে
দুয়ারে বিষাদে
‌             খোলো দ্বার খোলো!
             যোগী, যোগ ভোলো!
             এত গীত হাসি
             সব আজি বাসি,
উদাসী গো জাগো! নব অনুরাগে
                   জাগো অনুরাগী
                   তরুণ বিবাগী॥

  • ভাবসন্ধান: ধ্যানমগ্ন শিবকে প্রেম ও পূজার অর্ঘে অভিষিক্ত করে, তাঁকে পাওয়ার জন্য পার্বতী যে সাধনা করেছিলেন, তারই ছবি পাওয়া যায় এই গানে। এই গানে কবি পার্বতীর সমব্যথী হয়ে, যেনো তাঁর হয়েই শিবের কাছে কাতর নিবেদন করছেন।

    গানটির স্থায়ীতে যোগাবস্থায় দেখি চিরতরুণ শিব ধ্যানমগ্ন। পার্থিব সকল আকাঙক্ষাকে উপেক্ষা করে তিনি নিরাসক্ত, তাই সংসার-বিবাগী। অন্তরাতে দেখি বিশ্ব-প্রিয়ারূপী পার্বতী তাঁর প্রণয় পাওয়ার জন্য কাতর। তবু কেন শিব জেগে উঠছেন না, কেন প্রেমকাতরা ক্রন্দসিনী পার্বতীর নিবেদনে সাড়া দিচ্ছেন না, কবি তার খুঁজে পাচ্ছেন না। কবি পার্বতীর কাতরতায় ব্যথিত হয়ে শিবের কাছে অনুযোগ করছেন।

    সঞ্চারী ও আভোগে পাই সেই অনুযোগই দেখি ভিন্নতর উপস্থাপনায়। পার্বতীর যৌবনের সকল রঙ ব্যর্থ হয়ে যায়। পার্বতীর সমব্যথী হয়ে- ঋতুরাজ বসন্ত ক্রন্দনশীল। ব্যর্থ প্রণয়ের কারুণ্যে ভরে উঠে বসন্তের আঙিনা। কবি তাই যোগী শিবকে যোগের গভীর ধ্যানের অটল আসন ত্যাগ করে, প্রণয়ের দুয়ার খুলে শিবকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানচ্ছেন। অবহেলায় যৌবনের এত গান, এত উল্লাস সব অবহেলায় ম্লান হয়ে যায়। পার্বতীর এই ব্যর্থতা কবিকে আঘাত করে। কবি তাই সকাতরের বলেন, যেন আবার শিব প্রণয়ের নব অনুরাগে জেগে উঠেন।

    গানটিতে পাওয়া যায়, রাগ যোগিয়ার ধ্যানগম্ভীর চলনের সাথে, করুণ রস। সুরের বেদনাবিধূর স্বরবিন্যাসে ফুটে উঠে করুণরসের বেদনা। যা বাণীর সহচরী হয়ে শ্রোতাকে এক অতীন্দ্রিয় রসোত্তীর্ণ মার্গে পৌঁছে দেয়।
     
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৩৩৫ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসে প্রকাশিত হয়েছিল 'বুলবুল' নামক সঙ্গীত-সংকলনের দ্বিতীয় সংস্করণ। এই সংস্করণে নতুন গান হিসেবে এই গানটি যুক্ত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২৯ বৎসর ১০ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • বুলবুল
      • দ্বিতীয় সংস্করণ [চৈত্র ১৩৩৫ বঙ্গাব্দ। নতুন সংযোজন ৫। যোগিয়া-ঝাঁপতাল]
      • নজরুল-রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ফাল্গুন ১৪১৩। ফেব্রুয়ারি ২০০৭। বুলবুল। গান ৪৭। যোগিয়া-ঝাঁপতাল পৃষ্ঠা ১৮৬]
    • নজরুল গীতিকা
      • প্রথম সংস্করণ [ভাদ্র ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৩০। যোগিয়া-ঝাঁপতাল। পৃষ্ঠা ১১৩]
      • নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। তৃতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ঢাকা ফাল্গুন ১৪১৩/মার্চ ২০০৭।]  নজরুল গীতিকা।  ৯১। ধ্রুপদ। যোগিয়া-ঝাঁপতাল। পৃষ্ঠা: ২৩৫-২৩৬]
  • সুরকার: নজরুল ইসলাম।
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
  • পর্যায়:

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।