আজ শ্রাবণের লঘু মেঘের সাথে
মন চলে মোর ভেসে’,
রেবা নদীর বিজন তীরে
মালবিকার দেশে
মন চলে মোর ভেসে॥
মন ভেসে যায় অলস হাওয়ায়
হালকা-পাখা মরালী-প্রায়
বিরহিণী কাঁদে যথা
একলা এলোকেশে।
মন চলে মোর ভেসে॥
কভু মেঘের পানে কভু নদীর পানে চেয়ে’,
লুকিয়ে যথা নয়ন মোছে গাঁয়ের কালো মেয়ে,
একলা বঁধু বসে থাকে যথায় বাতায়নে।
বাদল দিনের শেষে॥
- ভাবার্থ: এই গানে সঙ্গহীন সঙ্গীহীন বিরহের অনুসঙ্গ হিসেবে বর্ষা অনুসঙ্গ হয়ে উঠেছে। বিরহের সাথে বর্ষার গভীর সম্পর্ককে এই গানে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই গানের স্থায়ী ও অন্তরাতে উঠে এসেছে, কবির মানস সুন্দরী প্রবাসিনী মালবিকার রূপকতায়। দূর অতীতের এই মানস নায়িকা মালবিকাকে- কালিদাসের মালবাগ্নিমত্র নাটকে থেকে আহরণ করেছেন কবি। কাল ও স্থানের দূরত্ব অতিক্রম করে কালদাসের মেঘদূতের মতো শ্রাবণের লঘু মেঘের সাথে কবির বিরহী মন ছুটে চলে রেবা নদীর তীরে। যেখানে তাঁর বিরহিনী এলোকেশী নায়িকা, যেন কবির সঙ্গকামনায় কাঁদছে। মূলত স্থায়ী অন্তরায় প্রকৃতির চেয়ে শৃঙ্গার রসের বিপ্রলম্ভ ভাবটাই প্রবলতর হয়ে উঠেছে। শ্রাবণের লঘু মেঘ এখানে পরিবেশগত অবলম্বন মাত্র।
গানটির সঞ্চারী ও আভোগে- কবি ফিরে এসেছেন পল্লী-বাংলার বিরহিনী কালোমেয়ের কাছে। কখনো মেঘের পানে চেয়ে, কখনো নদীর পানে চেয়ে- এই বিরহিনী গোপনে অশ্রু মোচন করে। গ্রামের এই কালো মেয়ে মালবিকার মতো সর্বাঙ্গ সুন্দরী নয়, কোনো দূর প্রবাসী কবির সঙ্গকামনা মেঘের সাথে এসে খোঁজ নেয় না তার। গাঁয়ের কালো মেয়ে বাদল দিনের শেষে গোপনে অশ্রমোচন করে, তার গৃহকোণে জানালার পাশে। এখানেও বর্ষা পরিবেশগত অবলম্বন মাত্র। প্রকৃতি ও প্রেমের যুগল বন্ধনে গাথা এই গানটি হয়ে উঠেছে মিশ্রভাবনার।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে জানা যায় না। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ২১ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার, ৫ আশ্বিন ১৩৪৪) নজরুল ইসলামের সাথে রেকর্ড কোম্পানির চুক্তি হয়।এই সময় তাঁর বয়স ছিল ৩৮ বৎসর ৪ মাস।
- পত্রিকা:
- ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ২১ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার, ৫ আশ্বিন ১৩৪৪) নজরুলের সাথে রেকর্ড কোম্পানির চুক্তি হয়।
- টুইন। নভেম্বর ১৯৩৭ (কার্তিক-অগ্রহায়ণ ১৩৪৪)। এফটি ১২১৪৭। শিল্পী: কুমারী মীনা রায় [শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি ও প্রেম
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য
|