আজি নন্দদুলালের সাথে ঐ খেলে ব্রজনারী হোরি (aji nondodulaler sathe oi khele brojonari hori)

আজি নন্দদুলালের সাথে
            ঐ খেলে ব্রজনারী হোরি।
কুঙ্কুম-আবির হাতে
            দেখ, খেলে শ্যামল খেলে গোরী॥
থালে রাঙা ফাগ,
নয়নে রাঙা রাগ,
ঝরিছে রাঙা সোহাগ
            রাঙা পিচ্‌কারি ভরি॥
পলাশ শিমুলে ডালিম ফুলে
            রঙনে অশোকে মরি মরি।
ফাগ-আবির ঝরে তরুলতা চরাচরে,
            খেলে কিশোর কিশোরী॥

  • ভাবসন্ধান: সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৈষ্ণব-পন্থীরা  হোরি বা হোলি উৎসব উপলক্ষে এই গান পরিবেশন করে থাকেন। মূলত ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে  হোরি বা হোলি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবে রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহকে শুকনো আবির এবং রঙিন জলে স্নান করিয়ে দোলায় বসানো হয়। এই আনুষ্ঠানিকতার সাথে চলে ভক্তদের রং ছিটানো বা রং মাখার খেলা। এই গানটিতে এই উৎসবের রং ছিটানোর খেলার বর্ণনা করা হয়েছে সুরে ও বাণীতে।

    হোরি উৎসবের রঙ খেলার সূত্রপাতের দৃশ্য  বর্ণনের মধ্য দিয়ে এই গানের স্থায়ীকে উপস্থাপিত করা হয়েছে। এই খেলায় নন্দদুলাল (শ্রীকৃষ্ণ) ব্রজনারীদের সাথে  রঙ-খেলার মেতে উঠেছেন।  কৃষ্ণের সাথে এই খেলায় মেতে উঠেছেন রাধা। তাঁর হতে কুঙ্কুম (জাফরান বা জাফরান ফলের নির্যাস যা প্রসাধনী হিসাবে ব্যবহৃত হয়) এবং আবীর (একপ্রকার রক্তবর্ণ চূর্ণ)।

    অন্তরাতে রঙ-খেলার আভরণের মধ্য দিয়ে রাধাকৃষ্ণের সপ্রেম অনুরাগকে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই খেলায় রাধাকৃষ্ণের হাতের থালায় রয়েছে উৎসবের রঙিন ফাগ (আবির), আর নয়নে রয়েছে প্রেমরক্তিম কামনা। রঙিন পিচ্‌কারিতে ছিটানো রঙ যেন সে কামনা প্রেম-সোহাগ হয়ে ঝরে পড়ছে।

    সঞ্চারী কবি অনুভব করেছেন, হোরি উৎসবের রঙ খেলায় অংশভাগী হয়ে প্রকৃতিও যেন মেতে উঠেছে। পলাশ, শিমুল, ডালিম, রঙন, অশোকের রক্তিম ফুলে ফুলে যেন প্রেম-সোহাগে লজ্জারুণ হয়ে উঠেছে। উৎসবের সে রঙিন শোভা আচ্ছন্ন করেছে তরুলতা, চরচারকে (বিশ্বভুবন)। এরই মাঝে ব্রজের কিশোরকিশোরীর নবযৌবনের উচ্ছ্বাসে হোর-উৎসবকে মহিমান্বিত করে তুলেছে।
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ফ্রেব্রুয়ারি  (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৩৮ বঙ্গাব্দে) মাসে এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩২ বৎসর ১০ মাস।
     
  • পত্রিকা: ভারতবর্ষ।  ফাল্গুন ১৩৪০। ফেব্রুয়ারি- মার্চ ১৯৩৪। কথা ও সুর: কাজী নজরুল ইসলাম। স্বরলিপি: জগৎ ঘটক [নমুনা]
     
  • গ্রন্থ:
    • গীতি-শতদল। 
      • প্রথম সংস্করণ। বৈশাখ ১৩৪১ খ্রিষ্টাব্দ] ৬৯ সংখ্যক গান। খাম্বাজ কাফি-হোরি কাহারবা
      • নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংকলন। পঞ্চম খণ্ড। বাংলা একাডেমী। ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮ মে, ২০১১। গীতি-শতদল। গান সংখ্যা ৬৯। খাম্বাজ কাফি-হোরি কাহারবা। পৃষ্ঠা ৩২২]
    • নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্‌ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান ১০৪৫। পৃষ্ঠা ৩২০]
    • সুরলিপি। [১৬ আগষ্ট ১৯৩৪ (বুধবার, ৩১ শ্রাবণ ১৩৪২)]। জগৎঘটক-কৃত স্বরলিপি। প্রকাশক: নজরুল ইসলাম
       
  • রেকর্ড: এইচ্‌এমভি। ফেব্রুয়ারি ১৯৩২ (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৩৮)। পি ১১৭৬২। শিল্পী: ইন্দুবালা[শ্রবণ নমুনা]  [খায়রুল আনাম শাকিল (শ্রবণ নমুনা)]       
                 
  • সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম
  • স্বরলিপিকার:
  • পর্যায়:

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।