আজো মধুর বাঁশরি বাজে (ajo modhur bashori baje)
রাগ: ভীমপলশ্রী, তাল: ত্রিতাল
আজো মধুর বাঁশরি বাজে
গোধূলি লগনে বুকের মাঝে॥
আজো মনে হয় সহসা কখন
জলে ভরা দু’টি ডাগর নয়ন
ক্ষণিকের ভুলে সেই চাঁপা ফুলে
ফেলে ছুটে যাওয়া লাজে॥
হারানো দিন বুঝি আসিবে না ফিরে,
মন কাঁদে তাই স্মৃতির তীরে।
তবু মাঝে মাঝে আশা জাগে কেন
আমি ভুলিয়াছি ভোলেনি সে যেন,
গোমতীর তীরে পাতার কুটিরে
সে আজো পথ চাহে সাঁঝে॥
- পাঠভেদ: নজরুল গবেষক আসাদুল হক এই গানটির ভিন্নতর পাঠ সংগ্রহ করেছিলেন হিন্দুস্তান রেকর্ড কোম্পানির এক কর্মচারীর কাছ থেকে। এ প্রসঙ্গে তথ্য পাওয়া যায়- আসাদুল হকের রচিত 'অন্তরঙ্গ আলোকে নজরুল ও প্রমীলা' গ্রন্থ থেকে। লেখক এই গানটির পাঠভেদটি-সহ এই গ্রন্থে কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য লিপিবদ্ধ করেছেন। গ্রন্থে উল্লিখিত প্রাসঙ্গিক অংশ এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, কবির হস্তলিখিত গানের বাণীর সঙ্গে এই গানের বাণীর মিল নেই। এটা কি কবি নিজে পরিবর্তন করেছেন? এর সঠিক তথ্য এখনও আমরা পাইনি। আমি এই হস্তলিপি সংগ্রহ করি হিন্দুস্তান গ্রামোফোন কোম্পানির এক কর্মচারীর কাছ থেকে। কবিশিষ্য চিত্তরায়ের কাছ থেকে জেনেছিলাম, এ গানটি লেখা হয়েছিল স্বরণকণ্ঠ সায়গলের জন্য। গানটির প্রথম দু'লাইন নাকি সায়গল সাহেব কবির কাছ থেকে শিখেও ছিলেন। ব্যস্ততার কারণে শিল্পীর সাথে কবির আর দেখা হয়নি।'
- আসাদুল হকের রচিত 'অন্তরঙ্গ আলোকে নজরুল ও প্রমীলা' গ্রন্থ থেকে উদধৃত অংশের পাণ্ডুলিপির পাঠ অনুসারে গানটি লিপিবদ্ধ করা হলো।
(Sygle ঠুংরী) (রাগ-প্রধান)
সেই মিঠে সুরে মাঠের বাঁশরি বাজে।
নিঝুম নিশীথে ব্যথিত বুকের মাঝে॥
মনে প'ড়ে যায় সহসা কখন্
জল-ভরা সেই দুটী ডাগর নয়ন,
পিঠ-ভরা চুল সেই চাঁপা ফুল ফে'লে,
ছু'টে-যাওয়া লাজে॥
হারানো দিন বুঝি আসিবে না ফিরে,
দেখিতে পাবনা আর সেই কিশোরীররে।
তবু মাঝে মাঝে আশা জাগে কেন
আমি ভুলিয়াছি, ভোলেনি সে যেন
গোমতীর তীরে পাতার কুটিরে
(সে) আজও পথ চাহে সাঁঝে॥ - ভাবসন্ধান: এটি একটি স্মৃতিচারণমূলক প্রেমের গান। কোন দূর অতীতে প্রেমিকের মনে যে প্রেমের বাঁশরি বেজে উঠেছিল, ব্যর্থ প্রেমের বিরহে- সেই হারানো প্রিয়ার প্রেম-মধুর সুর যেন বাঁশি হয়ে মনের গভীরে আজো বেজে চলেছে। দিন গত হয়েছে। জীবনের গোধুলি লগনে প্রেমিক তার হৃদয়ের গভীর তলে সেই সুরধ্বনির অনুরণন যেন এখনো অনুভব করেন।
স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে কোনো এক স্খলিত ক্ষণের সজল ডাগর নয়নের সুখময় স্মৃতি। প্রেমিকের কাছে যেন হঠাৎ প্রণয় প্রকাশের
লজ্জায়, প্রণয় উপহারের চাঁপাফুল ফেলে কিশোরী প্রেমিকার ছুটে চলে যাওয়া- এসবই প্রেমিকের সুখময় স্মৃতি গভীর বেদনার হাহাকার হয়ে বুকের গভীর বেজে চলেছে। প্রেমিকের আক্ষেপ- সেদিন আর ফিরে আসবে না। তাই তার হারানো দিনের স্মৃতির সরোবরের তীরে, তার বেদনাবিধুর স্মৃতি শুধুই অশ্রুসজল হয়ে ওঠে।
প্রেমিকার লোভী মনে আকাঙক্ষা জাগে। ভাবেন, তিনি ভুলে গেলেও হয়তো তাঁর প্রেমিকা যেন তাঁকে ভুলে যান নি। এই আকাঙ্ক্ষা কেন জাগে প্রেমিক তা বুঝে উঠতে পারেন না। প্রেম অন্ধ, হয়তো তাই তার আকাঙ্ক্ষাও অবুঝের মতো মনের ভিতরে বেজে চলে। হয়তো গোমতী নদীর তীরে পাতার কুটিরে বসে তাঁর প্রেমিকা এখনও তাঁর দেখার প্রতীক্ষা পথপানে চেয়ে থাকে। প্রকৃতির সাঁঝের সাথে তাঁর জীবনের সাঁজও নেমে আসে। তবু অন্ধ প্রেমের আকাঙ্ক্ষার অবসান হয় না। এই ব্যাকুল আকাঙ্ক্ষাই হয়তো উভয়ের মনের গভীরে অপ্রাপ্তির সান্ত্বনা এনে দেয়। তাই এখনো মনের মধুর বাশরি আজো বেজে চলেছে।
- আসাদুল হকের রচিত 'অন্তরঙ্গ আলোকে নজরুল ও প্রমীলা' গ্রন্থ থেকে উদধৃত অংশের পাণ্ডুলিপির পাঠ অনুসারে গানটি লিপিবদ্ধ করা হলো।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
- গ্রন্থ:
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ৩০৪৯। রাগ: ভীমপলশ্রী, তাল: ত্রিতাল। পৃষ্ঠা: ৯৩৩]
- অগ্রন্থিত গান। [নজরুল রচনাবলী জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। দশম খণ্ড। বাংলা একাডেমী, ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৬, মে ২০০৯। গান ১৯৪। পৃষ্ঠা: ৩০০।
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: প্রেম
- সুরাঙ্গ: খেয়ালাঙ্গ
- তাল: ত্রিতাল