আমায় রাখিস্নে আর ধ’রে (amay rakhisne ar dhore)
আমায় রাখিস্নে আর ধ’রে।
পারের ঠাকুর (ওরে) ডাক দিয়েছে
এই পারেরই অন্ধকারে মন যে কেমন করে॥
আয়ু-রবির অস্ত-পথে
এলো এলো ঠাকুর কনক-রথে,
গোধূলি-রঙ হাসিটি তার ঝরছে চোখের ’পরে॥
চোখ দু’টি মোর ভরে’ জলে
বল্ব ঠাকুর নাও গো কোলে,
রইতে নারি (আমি তোমায় ছেড়ে) রইতে নারি।
আমার এ প্রাণ (পূজার ফুলের মত)
(তোমার) পায়ে পড়ুক ঝ’রে॥
- ভাবসন্ধান: জীবন সায়াহ্নে এসে মানুষের জীবনের শেষ আশ্রয় স্থল হয়ে উঠে- তাঁর 'ঠাকুর' (আরাধ্য সত্তা)। তখন আসে সংসারকে বিদায় জানানোর পালা। তখন তাঁর কাছে ইহকালের যাপিত জীবন হয়ে ওঠে অন্ধকারময়। সেখান থেকে তিনি মুক্ত হয়ে পরকালের আলোকিত জীবনে প্রবেশ করতে চান। তাঁর জীবন-সূর্যের অস্তাচলে তিনি অনুভব করেন- যেন তাঁর ঠাকুর এসেছেন স্বর্ণরথে, তাঁকে জীবন-নদীর অপর পারে নেওয়ার জন্য। তিনি কল্পলোকে দেখতে পান ঠাকুরের গোধূলি-রাঙা হাসি। হঠাৎ পাওয়া ঠাকুরকে দেখে তাঁর আবেগাপ্লুত চোখ থেকে ঝরে আনন্দাশ্রু। ঠাকুরকে তিনি সকাতরে জানাতে চান, যেন তিনি সাদরে কাছে টেনে নেন। এ গানের শেষ পঙ্ক্তিতে তিনি শেষ নিবেদন রেখেছেন- যেন ঠাকুরের পায়ে নিবেদিত পূজার ফুলের মতো তাঁর প্রাণ ঝরে পড়ে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪১) মাসে টুইন রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৫ বৎসর ৬ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ১০৭০। গান ৪৫। পৃষ্ঠা ৩২৭]
- রেকর্ড: টুইন। ডিসেম্বর ১৯৩৪ (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪১)। এফটি ৩৫৫০। শিল্পী: সমর রায় (এ্যামেচার)। রচয়িতা বা সুরকারের নাম নেই। [শ্রবণ নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। সাধারণ। পরমসত্তা, প্রার্থনা।