(আমার) আনন্দিনী উমা আজো এলো না তার মায়ের কাছে (amar anondini uma ajo elo na tar mayer kache)

(আমার) আনন্দিনী উমা আজো এলো না তার মায়ের কাছে।
হে গিরিরাজ! দেখে এসো কৈলাসে মা কেমন আছে॥
    মোর  মা যে প্রতি আশ্বিন মাসে
            মা মা ব’লে ছুটে আসে,
‘মা আসেনি’ ব’লে আজও ফুল ফোটেনি লতায় গাছে॥
তত্ত্ব-তলাশ নিইনি মায়ের তাই বুঝি মা অভিমানে,
না এসে তার মায়ের কোলে ফিরিছে শ্মশান মশানে।
            ক্ষীর নবনী ল’য়ে থালায়
            কেদে ডাকি, ‘আয় উমা আয়’।
যে কন্যারে চায় ত্রিভুবন তাকে ছেড়ে মা কি বাঁচে॥

  • ভাবসন্ধান: সনাতন হিন্দু ধর্মমতে- প্রতি বছর আশ্বিন মাসে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দু ধর্মমতে দেবী তাঁর শ্বশুরালয় কৈলাস ছেড়ে জনপদে আসেন কন্যা রূপে। তাই মাতৃরূপিণী দেবী আসেন মাতৃরূপিণী ভারতের জনপদবাসীর কাছে। এই গানে উভয় অর্থেই মা শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। এই গানটিতে রয়েছে দুর্গাপূজা উপলক্ষে মাতা ও কন্যারূপিণী  দুর্গাকে জনপদরূপিণী মাতৃভূমিতে আসার আহ্বান। আবাহনের নিমিত্ত রচিত গান হিসেবে একে আবাহনী গান বলা যেতে পারে।

    হিন্দু পঞ্জিকা মতে শারদীয় দুর্গা পূজা কিছুটা সময়ের হেরেফেরে হয়। এই গানের বিষয় হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে, বিলম্বিত দুর্গাপূজার কারণে কন্যারূপিণী দুর্গাকে কাছে না পাওয়ার জন্য জনপদবাসীর হাহাকার। এ গানের 'আমার' শব্দটি জনপদবাসী'র প্রতিনিধি।

    দুর্গা পূজার সূত্রে জনপদে দুর্গার আগমনে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। তাই তিনি আনন্দিনী। প্রতি আশ্বিন মাসে মাতৃরূপিণী দুর্গা, মাতৃরূপিণী জনপদে মা মা বলে ছুটে আসেন।  কিন্তু এবারে দুর্গাপূজার বিলম্বের কারণে দেবীর (মাতা ‌এবং কন্যা উভয় অর্থে) আগমনের বিলম্বের কারণে উদ্বিগ্ন জনপদবাসীর মনে প্রশ্ন উঠেছে- কৈলাসে তিনি কেমন আছেন। কবি তাঁর কল্পলোকে রূপকতায় মনে করেছেন- তাঁর আগমনের বিলম্বের কারণে লতায় গাছে ফুল ফুটতে বিলম্ব হয়েছে। দুর্গার বিলম্বে আসার কারণে- প্রকৃতির সহজাত বিকাশেও যে বিঘ্ন ঘটেছে, তার নমুনা হিসেবে- বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছে।

    বঙ্গজনপদের পরিবারগুলো স্বামীর ঘরে থাকা মেয়ের খোঁজখবর রাখেন। বিশেষ করে বৎসরান্তে কন্যার নায়রে আসার আগেই তাঁরা বিশেষ যত্নবান হন। কবি কল্পলোকে মনে করেছেন- হয়তো কন্যারূপিণী দেবীর তত্ত্বতলাস নেওয়া হয় নি বলেই- তিনি অভিমানে তাঁর জনপদরূপিণী মায়ের কোলে না এসেৱ, শ্মশানে- মশানে ঘুরে বেড়াছেন। তাই জনপদবাসী ক্ষীর নবনী নিয়ে সকাতরে ডাকছেন ‘আয় উমা আয়’। কারণ, তাঁকে চায় ত্রিভুবন (জগৎ-সংসার অর্থে), তাঁকে ছাড়া জনপদবাসীর বেঁচে থাকা দায় হয়ে ওঠে।
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে জানা যায় না। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর (আশ্বিন-কার্তিক ১৩৪৪) মাসে এইচএমভি  রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩৮ বৎসর ৪ মাস।
     
  • রেকর্ড:
    • এইচএমভি [অক্টোবর ১৯৩৭ (আশ্বিন-কার্তিক ১৩৪৪)। এন ৯৯৭৫। কে মল্লিক। সুর: নজরুল ইসলাম] [শ্রবণ নমুনা]
    • এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানির সাথে নজরুলের চুক্তি। ২৮শে এপ্রিল ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দ (বৃহস্পতিবার ১৫ বৈশাখ ১৩৪৫)।
     
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: সালাউদ্দিন আহ্‌মেদ [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, পঁচিশতম খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা। ভাদ্র, ১৪১২/আগস্ট ২০০৫  খ্রিষ্টাব্দ] দ্বিতীয় গান। [নমুনা]
  • সুরকার: নজরুল ইসলাম
  •  [দেবারতি চক্রবর্তী (শ্রবণ নমুনা)]
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। শাক্তসঙ্গীত। দুর্গাপূজা। আবাহনী।
    • সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য
    • তাল: যৎ
    • গ্রহস্বর: সা

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।