আমার নয়নে কৃষ্ণ-নয়নতারা (amar noyone krishno noyontara)
রাগ: সিন্ধু মিশ্র, তাল: কাহার্বা
আমার নয়নে কৃষ্ণ-নয়নতারা হৃদয়ে মোর রাধা-প্যারী।
আমার প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা শ্যাম-সোহাগী গোপ-নারী॥
আমার স্নেহে জাগে সদা
পিতা নন্দ মা যশোদা,
ভক্তি আমার শ্রীদাম-সুদাম আঁখি-জল যমুনা-বারি॥
আমার সুখের কদম-শাখায়
কিশোর হরি বংশী বাজায়
আমার দুখের তমাল ছায়ায় ─ লুকিয়ে খেলে বন-বিহারী॥
মুক্ত আমার প্রাণের গোঠে চরায় ধেনু রাখাল-কিশোর,
আমার প্রিয়জনে নেয় সে হরি', সেই ত ননী খায় ননী-চোর।
রাধা-কৃষ্ণ-কথা শুনায় ─ দেহ ও মন শুক-শারী॥
- ভাবসন্ধান: রাধা-কৃষ্ণের ভক্তের পরম ভক্তি এই গানে উপস্থাপিত হয়েছে। ভক্ত তাঁর কল্পলোকের রূপকতার মধ্য দিয়ে অনুভব করেন রাধা-কৃষ্ণের লীলা এবং তাঁদের অনুষঙ্গী সব কিছু। এর মধ্য দিয়ে ভক্ত খুঁজে পান রাধা-কৃষ্ণ লাভের আনন্দ। পরম ভক্তিতে ভক্তের দেহমন হয়ে ওঠে রাধা-কৃষ্ণময়।
এই ভক্তের চোখে কৃষ্ণ নয়নতারা হয়ে বিরাজ করে। আর রাধা-প্যারী বিরাজ করে তাঁর হৃদয়ে। তাঁর সকল প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা শ্যাম সোহাগী গোপ-নারীদের মতো তাঁকে আবেশিত করে রাখে। ভক্ত তাঁর অপত্য স্নেহে অনুভব করেন কৃষ্ণের প্রতি তাঁর পালক পিতা-মাতা নন্দ মা যশোদার স্নেহরস। কৃষ্ণের অনুগামী বলেই শ্রীদাম-সুদাম-কে তিনি ভক্তি করেন। তাঁর চোখের জলকে অনুভব করেন যমুনার প্রেমবারি রূপে।
ভক্তি মনোলোকের সুখের কদম শাখায় কিশোর-কৃষ্ণ বাঁশী বাজায়। আবার বিরহী শ্যামের মতো তমাল ছায়া হয়ে ওঠে দুখের ছায়া। তাঁর মনোলোকের বন-বিহারী (কৃষ্ণ) লুকোচুরি খেলে। তাঁর মনের উন্মুক্ত মাঠ রাখাল-কিশোর ধেনু চড়ায়। ননী চুরি করে খায় বলে সে কৃষ্ণ ননীচোর, তাঁর সকল প্রিয়জন হারিয়ে যায় রাধাকৃষ্ণের এই ননীচোরের আবেশে। যেন তাঁর শুক-শারী নামক দেহ-মন-পাখি অবিরত শুনায় রাধাকৃষ্ণের লীলাকথা।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৩৯) মাসে গানটি প্রথম এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৩ বৎসর ৮ মাস।
- রেকর্ড:
- এইচএমভি। [ফেব্রুয়ারি ১৯৩৩ (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৩৯)। এন ৭০৭৯। শিল্পী: গোপাল সেন [শ্রবণ নমুনা]
- কলম্বিয়া [সেপ্টেম্বর ১৯৫২ (ভাদ্র -আশ্বিন ১৩৫৯)। জিই ২৪৬১৮। শিল্পী: উত্তরা দেবী
- গ্রন্থ:
- গীতি-শতদল
- প্রথম সংস্করণ [বৈশাখ ১৩৪১। এপ্রিল ১৯৩৪। গীতি-শতদল-৬২। সিন্ধু-মিশ্র-কার্ফা]।
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, পঞ্চম খণ্ড। বাংলা একাডেমী, ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮ মে, ২০১১। গীতি-শতদল। গান সংখ্যা ৬২। সিন্ধু-মিশ্র-কার্ফা। পৃষ্ঠা ৩১৭-৩১৮]
- সুরলিপি। [১৬ আগষ্ট ১৯৩৪ (বুধবার, ৩১ শ্রাবণ ১৩৪২)]। জগৎঘটক-কৃত স্বরলিপি। প্রকাশক: নজরুল ইসলাম। মিশ্র-সিন্ধু-কার্ফা। পৃষ্ঠা: ৭৩-৭৫। [নমুনা]
- গীতি-শতদল
- সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- জগৎঘটক। [নমুনা]
- ইদ্রিস আলী। [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি চুয়াল্লিশততম খণ্ড।স্বরলিপি নজরুল ইন্সটিটিউট কর্তৃক প্রকাশিত। আষাঢ় ১৪২৪/জুন ২০১৮] পৃষ্ঠা: ২২-২৬। [নমুনা]
- পর্যায়: