আমার বিফল পূজাঞ্জলি অশ্রু-স্রোতে যায় যে ভেসে (amar bifol pujanjoli oshru srote jay je bheshe)
আমার বিফল পূজাঞ্জলি অশ্রু-স্রোতে যায় যে ভেসে
তোমার আরাধিকার পূজা হে বিরহী, লও হে এসে॥
খোঁজে তোমায় চন্দ্র তপন
পূজে তোমায় বিশ্বভুবন,
আমার যে নাথ ক্ষণিক জীবন মিটবে কি সাধ ভালবেসে॥
না দেখা মোর, বন্ধু ওগো কোথায়, তুমি কোথায়, বাঁশি বাজাও একা,
প্রাণ বোঝে তা অনুভবে নয়ন কেন পায় না দেখা।
সিন্ধু যেমন বিপুল টানে
তটিনীরে টেনে আনে,
তেমনি করে তোমার পানে আমায় ডাকো নিরুদ্দেশে॥
- ভাবসন্ধান: সনাতন হিন্দু ধর্মের আদর্শে এই গানটি নিবেদিত হয়েছে পর্মসত্তার উদ্দেশ্যে। এ গানের আরাধ্য নামহীন দেবতাই হলো- পূজারিণীর পরমসত্তা। এই সাধিকা তাঁর ভক্তি-পুষ্প দিয়ে পরমসত্তারা কাছে নিজেকে নিবেদন করেন। কিন্তু তাঁকে পান না বলেই ভক্ত সাধিকা মনে করেন তাঁর নিবেদন নিস্ফল হয়েই থেকে যায়। তাই তাঁর এই অপ্রাপ্তির বেদনা অশ্রজল হয়ে ঝরে পড়ে। তাই এই গানে তিনি সকাতর অননুনয়ে, তাঁর পরমসত্তার কাছে তাঁর ভক্তি অর্ঘ্য গ্রহণ করার জন্য প্রার্থনা করেছেন।
কেউ পরমসত্তাকে খোঁজেন চন্দ্র-তপনে, বিশ্বভুবন তাঁর জুড়ে পূজার্ঘ নিবেদিত হয়। এই গানের পরম সাধিকা মনে করেন- তাঁর এই স্বল্প পরিসরের জীবন ও জীবনবোধে এরূপ আরধানা যথেষ্ট নয়। এই গানের পরমসত্তা সাধিকার কাছে না-দেখা বন্ধুর মতো। কোথায় তিনি লুকিয়ে থেকে তাঁর প্রেমে বাঁশি বাজিয়ে চলেছেন, সাধিকার কাছে তাও অজানা। তিনি শুধু অন্তরে তাঁর অনুভব পান, কিন্তু চোখের দেখা হয়ে ওঠে না। যেমন করে সাগরের প্রবল প্রেমাকর্ষণে নদী ধেয়ে চলে তার পানে- তেমনি করে তাঁর অজানা, অদেখা পরমবন্ধু পরমসত্তা তাঁর ভক্তির দিকহীন প্রান্তরে প্রেমাকর্ষণে ডাকেন। তবুও তিনি তাঁর সর্বার্থিক সান্নিধ্য পান না। তাই সাধিকার ভক্তির পূজাঞ্জলি বিফল-বেদনার অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে ১৮ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার, ১ আশ্বিন ১৩৪১ বঙ্গাব্দ), এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানির সাথে কয়েকটি গান প্রকাশের জন্য নজরুলের একটি চুক্তি হয়। এই চুক্তিপত্রে এই গানটির উল্লেখ ছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৬ বৎসর ৪ মাস।
- রেকর্ড:
- এইচএমভির সাথে চুক্তিপত্র। [১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৩৫ (বুধবার, ১ আশ্বিন ১৩৪২)
- এইচএমভি। ডিসেম্বর ১৯৩৫ (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪২) নম্বর ৭৪৪৩। শিল্পী: আঙুরবালা। সুর: নজরুল ইসলাম [শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: আহসান মুর্শেদ [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, সাতাশ খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা। কার্তিক, ১৪১২/অক্টোবর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ] তৃতীয় গান।[নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। সাধারণ। পরমসত্তা
- সুরাঙ্গ: ভজন
- তাল: দাদরা
- গ্রহস্বর: গা