আমার যখন পথ ফুরাবে, আসবে গহীন রাতি (amar jokhon poth phurabe,ashbe gohin rati)
আমার যখন পথ ফুরাবে, আসবে গহীন রাতি (খোদা) —
তখন তুমি হাত ধ'রো মোর হ'য়ো পথের সাথি (খোদা)॥
অনেক কথা হয়নি বলা বলার সময় দিও, খোদা —
আমার তিমির অন্ধ চোখে দৃষ্টি দিও প্রিয়, খোদা
বিরাজ করো বুকে তোমার আরশখানি পাতি'॥
সারা জীবন কাটলো আমার বিরহে বঁধু,
পিপাসিত কণ্ঠে এসে দিও মিলন-মধু।
তুমি যেথায় থাক প্রিয় সেথায় যেন যাই, খোদা,
সখা ব'লে ডেকো আমায় দিদার যেন পাই, খোদা।
সারা জনম দুঃখ পেলাম, যেন এবার সুখে মাতি॥
- ভাবসন্ধান: জীবনের যাত্রা শেষে যখন মৃত্যুর গহীন অন্ধকার নেমে আসবে, তখন যেন খোদা কবির প্রতি সহায় হয়ে ওঠেন, যেন মৃত্যুর অজানা যাত্রা পথে খোদা তাঁর প্রতি বন্ধুর মতো হাত বাড়িয়ে দেন। খোদার কাছে এই প্রার্থনা দিয়ে এই গানের সূচনা হয়েছে। এই গানে কবি খোদা হয়ে উঠেছেন বন্ধুসুলভ প্রভু।
সারা জীবনে কবির যা বলা হয়ে ওঠে নি, জীবন-সায়াহ্নে এসে তিনি যেনো সে কথা খোদাকে বলতে পারেন- সেই অবসরটুকু তিনি তাঁর কাছে প্রার্থনা করেছেন। তাঁর প্রার্থনা যেন তাঁর জ্ঞানহীন অন্ধচোখ জ্ঞানের জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হোক, যেন কবির অন্তরে খোদা যেন তাঁর আরশ (মহিমান্বিত স্থান) পেতে বিরাজ করুন।
কবি তাঁর সারাজীবনের সাধনায় খোদাকে বন্ধু হিসেবে পেতে চেয়েছেন। কিন্তু সান্নিধ্য পান নি বলেই, তাঁর সারাজীবন কেটেছে বন্ধু-বিরহে। খোদার প্রেমের অমিয় ধারা পান করার সুযোগ ঘটে নি বলেই কবি পিপাসিত। তাঁর সারা জীবনে অপূর্ণতা, অপ্রাপ্তি তাঁকে যে দুঃখ দিয়েছে, শেষ জীবনে তার অবসান ঘটিয়ে সুখের মিলন হোক কবির এটাই সব শেষ চাওয়া। তাঁর প্রার্থনা বন্ধুসঙ্গমে জীবন হয়ে উঠুক উৎসবমুখর আনন্দময়।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। বুলবুল পত্রিকার কার্তিক ১৩৪৪ (অক্টোবর-নভেম্বর ১৯৩৭) সংখ্যায় গানটি প্রথম প্রকাশিত প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৮ বৎসর ৫ মাস।
- পত্রিকা: বুলবুল। কার্তিক ১৩৪৪ (অক্টোবর-নভেম্বর ১৯৩৭)
- রেকর্ড:
- ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ জুলাই (শুক্রবার ১৫ শ্রাবণ ১৩৪৯) নজরুলের সাথে এইচএমভি একটি চুক্তি হয়। ওই চুক্তিপত্রের গানটির উল্লেখ ছিল।
- টুইন [সেপ্টেম্বর ১৯৪২ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪৯)। এফটি ১৩৮২৪। শিল্পী: আব্বাসউদ্দীন আহমদ। সুর: দেলওয়ার হোসেন। [শ্রবন নমুনা]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- নীলিমা দাস। [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, একত্রিশতম খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা। ফাল্গুন, ১৩৯৭ বঙ্গাব্দ/ ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ] দ্বিতীয় গান। রেকর্ডের আব্বাসউদ্দীন আহমদের গাওয়া গানের সুরানুসারে স্বরলিপি করা হয়েছে। [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। ইসলামী গান। হামদ্। প্রার্থনা।
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য
- তাল: কাহারবা
- গ্রহস্বর: মা