আমার হৃদয়-বৃন্দাবনে নাচেরে গিরিধারী বনমালিয়া (amar hridoy -brindabone nachere giridhari bonomaliya)
মীরা : আমার হৃদয়-বৃন্দাবনে নাচেরে গিরিধারী বনমালিয়া।
সব সংশয়-ভঞ্জন নিতি মম চিত-রঞ্জন নবীন বারিদ গঞ্জন-কালিয়া॥
শ্রীকৃষ্ণ : তুমি এমন ক’রে আমায় ধ’রে রাখলে চিরদিন
আমি এমনি ক’রে যুগে যুগে শুধছি প্রেমের ঋণ,
তাই নেমে ধরায় নয়ন ধারায় ভাসায়েছি নদীয়া॥
মীরা : চির উজ্জ্বল হিয়া তলে
হে নাথ আসিবে ব’লে
রেখেছি প্রেমের শিখা জ্বালিয়া॥
শ্রীকৃষ্ণ : আমারে কাঁদালে আপনি কাঁদিয়া
মীরা : এসো নাথ এসো নাথ
ধোয়াব রাতুল চরণ যুগল নয়ন সলিল ঢালিয়া॥
- ভাবসন্ধান: পরম কৃষ্ণভক্ত মীরা এবং কৃষ্ণের মধ্যে সংলাপমূলক এই গানটি রচিত হয়েছে- কল্প-বাস্তবের রসোধ্যায় অবলম্বনে। কবির রচনায় ভক্ত ও ভক্তি উভয়ই রসের বিচারে একই সাথে কল্পলোকের এবং বাস্তবজগতের।
এই গানের মীরা তাঁর গভীর ভক্তি রসের বিহারে অনুভব করেন- হৃদয়-বৃন্দাবনে নটবর গিরিধারীর আনন্দ-নৃত্য। যিনি সকল সংশয় নিরসন করেন, যিনি নব মেঘের মত প্রতিনিয়ত হৃদয়কে রঞ্জিত করেন। যিনি সকল সংশয় দূর করে 'গঞ্জন-কালিয়া' রূপে তাঁর হৃদয়-বৃন্দাবনে বিরাজ করেন। এখানে 'গঞ্জন-কালিয়া' কৃষ্ণের বিশেষণবাচক নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। উল্লেখ বৃন্দাবনের কালিয়া নামক বিষধর নাগকে লাঞ্ছিত করেছিলেন কৃষ্ণ। মীরার হৃদ-বৃন্দাবনের কালিয়াকে দমন করতে পারেন যিনি, তিনিই 'গঞ্জন-কালিয়া' কৃষ্ণ।
মীরার এই ভক্তিতে আপ্লুত কৃষ্ণ- সাড়া দিয়ে বলেন- তিনি (মীরা) তাঁর ভক্তিতে চিরদিন তাঁকে (কৃষ্ণ) ধরে রেখেছেন হৃদ-বৃন্দাবনে। এখানে মীরা হয়ে উঠেছেন কৃষ্ণের সকল ভক্তের প্রতীক। এই পরমে ভক্তের বাসনা পূরণের জন্য, তিনি যুগে যুগে ভক্তের প্রেমের ঋণ পরিশোধের জন্য নানা ভাবে নানারূপে আবির্ভূত হয়েছেন। এই কারণেই তিনি নদীয়ায় নেমে এসেছিলেন নদীয়া, ভাসিয়েছিলেন প্রেমাপ্লুত আনন্দধারায়।
কৃষ্ণের প্রেমের মহিমা মীরা জানেন। তাই কৃষ্ণ আসবেন বলেই তিনি তাঁর চির উজ্জ্বল হৃদায়সনে প্রেমের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখেন। আর সে প্রেমের মহিমায় কৃষ্ণ প্রেমাপ্লুত হয়ে বলেন 'আমারে কাঁদালে আপনি কাঁদিয়া'।
গানের শেষে- মীরা তাঁর হৃদ-বৃন্দাবনে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য প্রভু-কৃষ্ণকে আহ্বান করেছেন সাগ্রহে. সকাতরে। তিনি তাঁর পরমভক্তির প্রেমাপ্লুত নয়নের জলে প্রভুর চরণ ধুয়ে ধন্য হবেন বলে- তাঁর হৃদয়কে অবারিত করে রেখেছেন।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪০) এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি যোগেশ চৌধুরী 'মীরাবাঈ' নাটক প্রকাশ করে। এই নাটকে গানটি এই নাটকের মীরা চরিত্রের গান হিসেবে প্রথম প্রচারিত হয়। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৪ বৎসর ৩ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান সংখ্যা ২৫১৬। তাল: ফের্তা (দ্রুত-দাদ্রা ও কাহার্বা)। পৃষ্ঠা: ৭৭৫]
- রেকর্ড:
- এইচএমভি [সেপ্টেম্বর ১৯৩৩ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪০)। এন ৭১৫০। নাটক মীরাবাঈ নাট্যকার: যোগেশ চৌধুরী। চরিত্র: মীরা ও শ্রীকৃষ্ণের গান] [শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:
- আহসান মুর্শেদ [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, চুয়ান্নতম খণ্ড, কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, আশ্বিন ১৪২৮। সেপ্টেম্বর ২০২১] গান সংখ্যা ১। পৃষ্ঠা: ১৭-২০[নমুনা]
- পর্যায়: