আমি নামের নেশায় শিশুর মতো ডাকি গো মা ব'লে (ami namer neshay shishur moto)
আমি নামের নেশায় শিশুর মতো ডাকি গো মা ব'লে
নাই দিলি তুই সাড়া মা গো নাই নিলি তুই কোলে॥
শুনলে 'মা' নাম জেগে উঠি
ব্যাকুল হয়ে বাইরে ছুটি
মাগো ঐ নামে মোর নয়ন দু'টি ভ'রে ওঠে জলে॥
ও নাম আমার মুখের বুলি ও নাম খেলার সাথি
ও নাম বুকে জড়িয়ে ধ'রে পোহাই দুখের রাতি।
মা-হারানো শিশুর মতো
যপি ও -নাম অবিরত
মা ঐ নামের-মন্ত্র আমার বুকে কবচ হয়ে দোলে॥
- ভাবসন্ধান: শিশু যেমন নামের নেশায় মাকে বার বার ডাকে, তেমনি জগৎ-জননীকে সাধক বার বার ডাকেন। যদি তাঁর ডাকে জগৎ-জননী সাড়া নাও দেন, যদি তাঁকে তাঁর কোলে আশ্রয় নাও দেন, সাধক তাঁকে অবিরাম ডেকেই যাবেন। এই গানের জগৎ-জননী প্রকৃত নাম জানা যায় না, সাধকের কাছে তাঁর একমাত্র সম্বোধিত নাম -'মা'। সনাতন হিন্দু ধর্মে জগৎ-জননী রূপে পূজিতা হয়ে থাকেন স্বনামে দেবী দুর্গা বা নামান্তরে কালী, শ্যামা ইত্যাদিতে নামে। এই গানের 'মা'-কে সাধারণ ভাবে দেবী দুর্গা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে।
এই গানের সাধক মা নামের প্রতি এতই ভক্তনিষ্ঠ যে, কোথাও 'মা' ধ্বনি উচ্চারিত হলেই তিনি পার্থিব মোহে মোহিত দশা থেকে জেগে ওঠেন। তিনি মা-এর সন্ধানে মনের আঙিনা থেকে বাইরের দিকে ছুটে যান। পরম ভক্তিতে 'মা' -এর নামে তাঁর মাতৃবিহীন বিরহী সত্তা বেদনাবিধূর হয়ে ওঠে, তাঁর নয়নে বহে বেদনার্ত সকরুণ জলধারা।
পরম ভক্ত-সাধকের কাছে এই নাম গৃহ কাজের মুখের বুলি, সংসারের লীলাখেলার নিত্যসহচরী। ওই নাম তাঁর পরম দুঃখের একমাত্র সম্বল। তাই ওই নামের মোহে সাধক আশাহীন অন্ধকারাচ্ছন্ন দুঃখের রাতি অতিবাহিত করেন। তিনি মাতৃহীন শিশুর মতো- অবিরাম তাঁর নাম জপ করেন। ওই নামই মন্ত্রকবজ রূপে তাঁর অন্তরে বিরাজ করে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল (চৈত্র ১৩৪৩-বৈশাখ ১৩৪৪) মাসে এইচএমভি থেকে গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৭ বৎসর ১১ মাস।
- রেকর্ড: এইচএমভি। এপ্রিল ১৯৩৭ (চৈত্র ১৩৪৩-বৈশাখ ১৩৪৪)। এন ৯৮৭৭। শিল্পী: কুমারী বিজনবালা ঘোষ (কালী) [শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: সালাউদ্দিন আহ্মেদ [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, অষ্টাদশ খণ্ড। প্রথম সংস্করণ। নজরুল ইন্সটিটিউট আশ্বিন ১৪০৪/অক্টোবর ১৯৯৩। চতুর্থ গান] [নমুনা]
- সুরকার: কমল দাশগুপ্ত [শ্রবণ নমুনা]
- পর্যায়: