(মা) আমি, মুক্তা নিতে আসিনি মা (ami mukta nite ashini maa)

 (মা)   আমি, মুক্তা নিতে আসিনি মা ও মা তোর মুক্তি-সাগর কূলে।
        মোর ভিক্ষা-ঝুলি হ’তে মায়ার মুক্তা মানিক নে মা তুলে॥
                    মা তুই, সবই জানিস অন্তর্যামী,
                    সেই চরণ-প্রসাদ ভিক্ষু আমি,
        শবেরও হয় শিবত্ব লাভ মা তোর যে চরণ ছুঁলে॥
        তুই অর্থ দিয়ে কেন ভুলাস এই পরমার্থ ভিখারিরে,
        তোর প্রসাদী ফুল পাই যদি মা গঙ্গা ধারাও চাই না শিরে।
                    তোর শক্তিমন্ত্রে শক্তিময়ী
                    আমি হতে পারি ব্রহ্ম-জয়ী,
        সেই মাতৃনামের মহাভিক্ষু তোর মায়াতেও নাহি ভুলে॥

  • ভাবসন্ধান: মাতৃরূপিণী শ্যামাকে পাওয়ার জন্য একনিষ্ঠ সাধকের একান্ত প্রার্থনা ফুটে উঠেছে এই গানে। দেবীর বর পাওয়ার জন্য এই সাধকের প্রার্থনা নয়। বরং তার চেয়েও বেশী- দয়ার সাগর এই দেবী যেন তাঁকে তাঁর আবদ্ধ জীবনের দুঃখ-যাতনা থেকে মুক্তি দেন। পার্থিব নানা আকাঙ্ক্ষা পূর্ণের জন্য ভিক্ষুকের মতো হাত পেতে সাধক যা পেয়েছেন, তা  ছিল মায়াময় মুক্তা।  সে ভিক্ষালব্ধ মুক্তা ফিরিয়ে নিয়ে শুধু দেবী তাঁকে মুক্তি দান করুন, এটাই সাধকের প্রার্থনা।

    শ্যামা অন্তর্যামী। তাই সাধকের মনের কথা তাঁর অজানা নয়। সাধক ভিক্ষু হয়ে সেই বর প্রার্থনা করেন, যে বরের কল্যাণে শবও (মৃতদেহ) শিবত্ব (বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্থ কিছুর আশ্রয়স্থল) লাভ করেন।

    ভিখারি সাধককে দেবী অর্থ দিয়ে ভুলাতে চান। কিন্তু সাধক অর্থ-সম্পদের মুখাপেক্ষী নন। তিনি মনে করেন, যদি তিনি দেবীর প্রসাদ (করূণা) লাভ করতে পারেন, তাহলে  স্বর্গ থেকে পতিত গঙ্গাকে জটাতে ধারণ করার শিবের গৌরবও বিসর্জন দিতে পারেন।

    সাধক মনে করেন, শক্তিমন্ত্রে আদিষ্টা শক্তিময়ী শ্যামা যদি সহায় হন, তাহলে পরম-ব্রহ্মের পরম শক্তিকেও নির্দ্বিধায় গ্রহণ করতে পারবেন।  এই দেবী  মাতৃনামের মহাভিক্ষু স্বরূপা। সেই অদ্বিতীয়া শক্তি লাভের জন্য, তিনি দেবীর কোনো মায়াতে তিনি ভুলতে রাজি নন। দেবীর কাছেই  দেবীকে পাওয়ার জন্য তাঁর প্রার্থনা। কারণ সাধক জানেন, এই পাওয়ার মধ্যেই রয়েছে, সকল পাওয়ার পূর্ণতা।

     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে জানা যায় না। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর (ভাদ্র -আশ্বিন ১৩৪৭) মাসে এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করে। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪১ বৎসর ৩ মাস।
     
  • রেকর্ড:
  • গ্রন্থ:
    • রাঙা জবা। কাজী নজরুল ইসলাম। প্রথম সংস্করণ। হরফ প্রকাশনী, কলিকাতা [১৪ এপ্রিল ১৯৬৬)। ১লা বৈশাখ ১৩৭৩] গান সংখ্যা ৯৭। পৃষ্ঠা: ১০৫।
    • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ৮৮২]
    • নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি ঊনপঞ্চাশতম খণ্ডে । স্বরলিপিকার: ইদ্‌রিস আলী। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, কার্তিক ১৪২৬। নভেম্বর ২০১৯। পৃষ্ঠা: ৯৭-১০১ [নমুনা]
       
  • সুরকার: কমল দাশগুপ্ত
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: ইদ্‌রিস আলী। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে প্রকাশিত গানের [শিল্পী: মৃণালকান্তি ঘোষ] সুরানুসারে স্বরলিপিটি নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি ঊনপঞ্চাশতম খণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। [নমুনা]
     
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: ধর্মশক্তি। সনাতন হিন্দুধর্ম। শাক্ত, প্রার্থনা
    • সুরাঙ্গ:  মিশ্র (রামপ্রসাদী সুর-কীর্তন)
    • তাল: দাদরা
    • গ্রহস্বর:

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।