আমি শ্যামা বলে ডেকেছিলাম, শ্যাম হ'য়ে তুই কেন এলি (ami shyama bole dekechilm,shyam hoye tui ken eli)
আমি শ্যামা বলে ডেকেছিলাম, শ্যাম হ'য়ে তুই কেন এলি।
ওমা লীলাময়ী কেমন করে মনের কথা শুনতে পেলি॥
তোরে শৈল-শিরে শিবের সাথে (মা)
পূজেছিলাম গভীর রাতে।
হেসে কেন কিশোর হয়ে তুই বৃন্দাবনে পালিয়ে গেলি॥
তুই রক্তজবা ফিরিয়ে দিলি (মা) প্রেম চন্দন মুছিয়ে দিয়ে
মুক্তি চেয়েছিলাম মা এলি আশির্বাদী মুক্তা নিয়ে।
ছিনু তমোগুণে ডুবে (মা), তবু প্রিয়তম হয়ে
তুই খেলতে এলি তমাল বনে লয়ে
মোর গেরুয়া রাঙা বসন কেড়ে দিলি রাধার সোনার চেলী॥
- ভাবসন্ধান: কবি এই গানে লীলাময়ী শ্যামার অপরূপ জগৎলীলাকে রূপকল্পের রূপকতায় উপস্থাপন করেছেন। এই গানের 'আমি' কোনো এক সাধিকা। যাঁর মনে ছিল রাধাকৃ্ষ্ণের প্রেমলীলায় অভিষিক্ত হয়ে ভক্তিমার্গে নিজেকে উৎসর্গ করার। কিন্তু এই লীলময়ী অন্তর্যামিনী, তাই ভক্তের মনের গোপন বাসনা তাঁর কাছে গোপন থাকে নি। তাই সাধিকা যখন মাতৃরূপিণী শ্যামার দর্শনের আশায় ডেকেছিলেন, তখন শ্যামা ছলনা করে শ্যাম (কৃষ্ণ) হয়ে ধরা দিলেন, তাঁর প্রেম-লীলার অংশভাগী হয়ে। সাধিকার বিস্ময় এখানেই। কী করে শ্যামা বুঝতে পারলেন- সাধিকা তাঁকে কামনা করেছেন শ্যামারূপে নয়, চেয়েছেলেন শ্যামরূপে। তিনি গভীর রাতে শৈল শিবের (শিবলিঙ্গ) সাথে শ্যামাকে পূজা দিয়েছিলেন। কিন্তু অন্তর্যামিনী শ্যামা তাঁর প্রকৃত মনের বাসনা বুঝতে পেরে, মনের বৃন্দাবনে তিনি কিশোর কৃষ্ণ হয়ে আবির্ভুত হলেন।
সাধিকা মুক্তি লাভের আশায়, তাঁর পূজার অর্ঘ্য হিসেবে নিবেদন করেছিলেন রক্তজবা দিয়ে। কিন্তু শ্যামা তাঁর সে নিবেদন ফিরিয়ে দিয়ে, তাঁর ভক্তি-প্রেমের চন্দন মুছিয়ে দিয়ে- প্রেম-কল্যাণময় আশীর্বাদ উপহার দিলেন। সাধিকা তমোগুণে ডুবে ছিলেন। তবু শ্যামা তাঁকে অবহেলা না করে, শ্যামের প্রিয়তম রূপ নিয়ে তাঁর সাথে খেলতে এলেন তমাল বনে। তিনি তাঁর অপার করুণায়- গেরুয়া রঙের উদাসিনী বসন কেড়ে নিয়ে, পরিয়ে দিলেন রাধিকার প্রেমলীলার সোনার চেলী।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর (আশ্বিন-কার্তিক ১৩৪৮) মাসে সেনোলা রেকর্ড কোম্পানি গানটি প্রথম রেকর্ড করে। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪২ বৎসর ৪ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ৩০২৯। পৃষ্ঠা: ৯২৭ ]
- রেকর্ড: সেনোলা [অক্টোবর ১৯৪১ (আশ্বিন-কার্তিক ১৩৪৮)]। কিউএস ৫৩৪। শিল্পী: শৈল দেবী। সুর: নজরুল ইসলাম। [শ্রবণ নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। শাক্তসঙ্গীত। শ্যামাশঙ্গীত। লীলাময়ী