আমি সূর্যমুখী ফুলের মত দেখি তোমায় দূরে থেকে (ami surjomukhi phuler moto dekhi tomay dure theke)

আমি    সূর্যমুখী ফুলের মত দেখি তোমায় দূরে থেকে
          দলগুলি মোর রেঙে ওঠে তোমার হাসির কিরণ মেখে' ॥
                     নিত্য জানাই প্রেম-আরতি
                     যে পথে, নাথ তোমার গতি
          ওগো আমার ধ্রুব-জ্যোতি সাধ মেটে না তোমায় দেখে' ॥
          জানি, তুমি আমার পাওয়ার বহু দূরে, হে দেবতা!
          আমি মাটির পূজারিণী, কেমন ক’রে জানাই ব্যথা।
                     সারা জীবন তবু, স্বামী,
                     তোমার ধ্যানেই কাঁদি আমি
          সন্ধ্যাবেলায় ঝরি যেন তোমার পানে নয়ন রেখে' ॥

  • ভাবসন্ধান: প্রেমিকের প্রতি তীব্র অনুরক্ত কোন এক নারীর মর্মব্যথা উপস্থাপন করা হয়েছে এই গানে। এই গানের প্রেমিক তাঁর আরাধ্য দেবতা। সনাতন হিন্দুধর্মের রীতি অনসরণে এই সাধিকা পূজারিণী রূপে উপস্থাপন করেছেন নিজেকে।

    এই সাধিকা তাঁর আরাধ্য দেবতাকে পাওয়ার জন্য সাধনায় নিমগ্ন। কিন্তু শত আরাধনাতেও তিনি ধরা দেন না সাধিকার কাছে। সকল পূজার ঊর্ধ্বে থেকে তিনি বিরাজ করেন সূদূরে। তবু সূর্যমুখী ফুলের মতো সাধিকা দূর থেকে দেখে তাঁর প্রেমের মহিমা অনুভব করেন। তিনি মনে করে, তাঁর করুণাতেই তাঁর প্রেম-পুষ্পের দলগুলো রঙিন হয়ে ওঠেছে। দেবতার প্রতি অনুরক্তা সাধিকা প্রতিনিয়ত তাঁর প্রেম-আরতি নিবেদন করেন, তাঁর পথেই তিনি নিজকে সঞ্চালিত করেন। সাধিকা তাঁর ধ্রুবজ্যোতি যতই অনুভব করেন, ততই তাঁর মুগ্ধতা বেড়েই চলে। তাই তাঁর প্রেম-জ্যোতি দেখার সাধ মেটে না।

    সাধিকা জানেন, তাঁর আরাধ্য দেবতা থাকেন বহু দূরে। তিনি নিজে নিতান্তই মাটির পূজারিণী। তিনি খুঁজে পান না কিভাবে, তাঁর প্রেমের আকুলতা তাঁর কাছে পৌঁছে দেবেন। তবু সাধিকা তাঁর সারা জীবনের প্রভু হিসেবে নিজেকে তাঁর কাছেই সমর্পণ করেছেন। তিনি কামনা করেন জীবনের সন্ধ্যা বেলায় যেন এই জীবন-দেবতার নয়নে নয়ন রেখেই তাঁর মরণ নেমে আসে দুই নয়নে।

     
  • রচনাকাল : গানটির রচনাকাল সম্পর্কে জানা যায় না। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের জুন (অগ্রহায়ণ-পৌষ  ১৩৪৫)  মাসে এইচএমভি থেকে গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশ হয়েছিল। সেই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩৯ বৎসর ৬ মাস।
     
  • রেকর্ড: এইচএমভি। জুন ১৯৩৮ (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪৫)। এন ১৭২২৬। শিল্পী: কুমারী রেণুকা রায় [শ্রবণ নমুনা]
     
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। দেবতা। আত্ননিবেদন
    • সুরাঙ্গ: ঠুমরি

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।