আয় বনফুল ডাকিছে মলয় (ay bonoful dakiche moloy)
আয় বনফুল ডাকিছে মলয়
এলোমেলো হাওয়ায় নূপুর বাজায়, কচি কিশলয়॥
তোমরা এলে না ব'লে-ভোমরা কাঁদে
অভিমানে মেঘ ঢাকিল চাঁদে
'ভুল বঁধু ভুল' টুলটুলে মৌটুসি বুলবুলে কয়॥
কুহু যামিনীর তিমির টুটে
মুহু মুহু কুহু কুহরি' ওঠে।
হে বন- কলি, গুন্ঠন খোলো
হে মৃদু-লজ্জিতা, লজ্জা ভোলো,
কোথা তার দুল্ দোলে নটিনী তটিনী খুঁজে বনময়॥
- ভাবসন্ধান: গানটির বিষয়াঙ্গ প্রকৃতি (মহাজাগতিক), ফুলের গান। এই গানে, বনফুলকে কবি প্রকৃতির গুণ্ঠিত সলাজ বনের কন্যা রূপে অভিহিত করেছেন। কবি মনে করেন, বনফুল ছাড়া প্রকৃতির সৌন্দর্য পূর্ণতা পায় না, তাই প্রকৃতির বুকে জেগে ওঠার জন্য বনফুলের প্রতি গানে গানে কবির এই আবাহন।
বাতাসের আহবানে নব-কিশলয় যেন এই বনবধুর পায়ের নুপূরের ধ্বনির মতো আগমনী সুর তোলে। বনফুল প্রস্ফুটিত হয় না বলে মেঘ অভিমানে চাঁদকে আবরিত করে। আর মৌটুসি বুলবুল পাখিকে বলে- বনফুলের না-ফোটাটা যেন ভুল। সংশয় জাগে এই ভুল কার, প্রকৃতির, না কি বনফুলের।
কোকিলের কুহু-ডাকা বসন্তের অন্ধকার ভেদ করে, তার অবিরত কুহু ধ্বনি বনভূমিকে মুখরিত করে তোলে। এ কুহু ধ্বনি যেন বনফুলের প্রতি আহ্বান হয়ে বনভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে। তাই কবি সকাতরে বনফুলকে বলেন- ওগো বনকলি, এবার গুণ্ঠন খোলো। হে মৃদুলজ্জিতা, লজ্জা ভুলের নিজেকে প্রকাশ করো। বন-নটিনীর কানের দুল হবে, বলে তোমাকে সে সারা বনময় খুঁজে বেড়ায়।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে জানা যায় না। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের মে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৮) মাসে টুইন রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪১ বৎসর ১১ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান ১২০। পৃষ্ঠা ৩৯]
- রেকর্ড: টুইন। মে ১৯৪১ (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৮)। এফটি ১৩৫৮৪। শিল্পী: বীণা দত্ত। [শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: সুধীন দাশ। [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, সপ্তদশ খণ্ড। প্রথম সংস্করণ। নজরুল ইন্সটিটিউট আষাঢ়, ১৪০৩/ জুন, ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দ। ষষ্ঠ গান।] [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি (জাগতিক, ফুল)
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য
- তাল: কাহারবা
- গ্রহস্বর: মরা