উপল নুড়ির কাঁকন চুড়ি বাজে (upolo nurir kakon churi baje)

      উপল নুড়ির কাঁকন চুড়ি বাজে
                              বাজে ঘুম্‌তি নদীর জলে।
      বুনো হাঁসের পাখার মত মন যে ভেসে চলে
                              সেই ঘুম্‌তি নদীর জলে॥
      মেঘ এসেছে আকাশ ভ'রে
      যেন শ্যামল ধেনু চরে
      নাগিনীর সম বিজলি-ফণা তুলে
                              নাচে, নাচে নাচে রে।
                              মেঘ-ঘন গগন তলে॥
      পাহাড়িয়া অজগর ছুটে আসে ঝর্‌ ঝর্‌ বেনো-জল্‌
      দিয়ে করতালি প'রে পিয়াল পাতার মাথালি
      ছিটায় জল্‌, গেঁয়ো কিশোরীর দল।
      রিনিক্‌ ঝিনিক্‌ বাজে চাবি আঁচলে
      কালনাগিনীর মত পিঠে বেণী দোলে
      তীর-ধনুক হাতে বন-শিকারির সাথে
                              মন ছুটে যায় বনতলে॥

  • ভাবসন্ধান: এটি একটি প্রকৃতির জাগতিক পর্যায়ের গান। এই গানে পাওয়া যায় বর্ষার পাহাড়ি ঘুমতি (গোমতী) নদীর চিত্রময় বর্ণনা। এই পাহাড়ি এই নদী যখন প্রবলবেগে প্রবাহিত হয়, তখন পানি ও উপল (পাষাণ বা বড় বড় পাথুর) ভূমির নুড়ির (ছোট পাথর)সংঘাতে যে কল্লোলিত ধ্বনি তৈরি হয়- কবি তাকে নদীরূপী বালিকার কাঁকনের ধ্বনি সাথে তুলনা করেছেন। প্রবহমান এই জলস্রোতের সাথে বুনো হাঁসের পাখার মতো দোলায়িত ছন্দে কবির মন হারিয়ে যায়।

    আকাশ জুড়ে যখন মেঘ ঘনিয়ে আসে, দেখে মনে হয়ে শ্যামল গাভীর দল চরে বেড়াচ্ছে। এরি মাঝে বিজুলি যেন মেঘাবৃত আকাশ-তলে নেচে বেড়ায়। এই গানের বর্ষাকালীন গোমতীর রূপ তুলে ধরার জন্য প্রাকৃতিক প্রেক্ষাপট হিসেবে অন্তরাতে কবি বর্ষাকে উপস্থাপন করেছেন।

    বর্ষণের প্রাবল্যে আকস্মাৎ এই নদী প্রবল স্রোতধারায় অজগরের মতো ছুটে আসে। পিয়াল পাতার ঝরে পড়া ভাসমান পাতা এই অজগরের মাথায় মাথালির মতো শোভা পায়। ছুটে চলা নদীর শব্দে কবির মনে হয়,যেন উল্লসিত জলধারার করতালি। উল্লাসে মেতে ওঠে গ্রামের কিশোরীরা,নদীর কারতালির সাথে মিশে যায় এদের আঁচলে বাঁধা চাবির রিনিক ঝিনিক মধুর ধ্বনি। অজগররূপী গোমতী তীরের বালিকাদের দোলায়িত বেণী দেখে মনে হয় ছুটে চলা কালনাগিনী। এর সাথে যোগ দেয় তীরধনুক হাতে বন-শিকারীর দল। তার সাথে ছুটে চলে কবির মন। বর্ষার গোমতীর এই রূপ দেখে কবি মুগ্ধ হন। তাঁর মন হারিয়ে যায় গোমতী ছুটে চলার ছন্দে, মেঘাবৃত আকাশের তড়িৎ-সাপিনীর সাথে,গ্রাম্যকিশোরীর জলছিটানোর খেলায়, বন-শিকারীর সন্ধানী তীর-ধনুকের সাথে।

     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে (চৈত্র ১৩৪৮- বৈশাখ ১৩৪৯ বঙ্গাব্দ) এইচএমভি থেকে এই গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪৩ বৎসর ১০ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • নজরুল গীতি, অখণ্ড
      • প্রথম সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ৬ আশ্বিন ১৩৮৫। ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮
      • দ্বিতীয় সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ১ শ্রাবণ ১৩৮৮। ১৭ জুলাই ১৯৮১]
      • তৃতীয় সংস্করণ [ব্রহ্মমোহন ঠাকুর সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ৮ মাঘ ১৪১০। ২৩ জানুয়ারি ২০০৪] কাব্য-গীতি। ১১৭ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ৩২]
      • পরিবর্ধিত সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। বৈশাখ শ্রাবণ ১৪১৩। এপ্রিল-মে ২০০৬] ১৪৯ সংখ্যাক গান। পৃষ্ঠা: ৩০।
    • নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান ১৭। পৃষ্ঠা ৬]
    •  নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (প্রথম খণ্ড)। স্বরলিপিকার: সুধীন দাশ।  প্রথম প্রকাশ, তৃতীয় মুদ্রণ [কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। অগ্রহায়ণ ১৪০২। নভেম্বর ১৯৯৫। ১৭ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ৮৮-৯১]
  • রেকর্ডসূত্র: এইচএমভি [এপ্রিল ১৯৪২ (চৈত্র ১৩৪৮- বৈশাখ ১৩৪৯ বঙ্গাব্দ)] । এন ২৭২৬২। শিল্পী: বীণা চৌধুরী। [শ্রবণ নমুনা]
  • সুরকার: শৈলেশ দত্তগুপ্ত
  • স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: সুধীন দাশনজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (প্রথম খণ্ড)। প্রথম প্রকাশ, তৃতীয় মুদ্রণ [কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। অগ্রহায়ণ ১৪০২। নভেম্বর ১৯৯৫। ১৭ সংখ্যক গান।][নমুনা]
     
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি  (জাগতিক, নদী)
    • সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের সুর

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।