আমি গগন গহনে সন্ধ্যা-তারা (ami gogon gohone sondha tara)

আমি     গগন গহনে সন্ধ্যা-তারা
                              কনক গাঁদার ফুল গো।
               গোধূলির শেষে হেসে উঠি আমি
                               এক নিমেষের ভুল গো।
    আমি     ক্ষণিকা,
    আমি     সাঁঝের অধরে ম্লান আনন্দ-কণিকা
    আমি     অভিমানিনীর খুলে ফেলে দেওয়া মণিকা
    আমি     দেব-কুমারীর দুল্‌ গো॥
               আলতা রাখার পাত্র আমার আধখানা চাঁদ ভাঙা
               তাহারি রং গড়িয়ে পড়ে (ঐ) অস্ত-আকাশ রাঙা।
    আমি     একমুঠো আলো কৃষ্ণা-সাঁঝের হাতে
    আমি     নিবেদিত ফুল আকাশ-নদীতে রাতে
               ভাসিয়া বেড়াই যাঁর উদ্দেশে গো
               তার পাই না চরণ-মূল॥

  • ভাবসন্ধান: মহাবিশ্বের সকল উপকরণ নিয়ে বিস্তৃত যে প্রকৃতি, সন্ধ্যাতারা (শুক্রগ্রহ) তার একটি উপাদান। এই গানে কবি সন্ধ্যাতারার কথাই নিজের জবানিতে ব্যক্ত করেছেন, অত্যন্ত চমৎকার ভাবে।

    আকাশের অসংখ্য গ্রহ-নক্ষত্রের বাগানের (গগন গহন) ভিতরে, সন্ধ্যাতারা যেন ফুটে উঠা কনক গাঁদার মতো উজ্জ্বল ফুল। দিনের শেষে সন্ধ্যাকাশে তার উপস্থিতি যেন এক নিমিষের ভুল করা দ্যুতিময় এক ঝলক হাসির মতো ক্ষণিকা। যার অতি সামান্য উপস্থিতি আছে মাত্র কিন্তু স্থায়িত্ব নেই। প্রকৃতির বিধানে সন্ধ্যাকাশে সন্ধ্যা-তারার এই উদয় হয়, সেটা প্রকৃতির ভুল নয়। কিন্তু কবি মনে করেন, গগন গহনের অসংখ্য নক্ষত্রের মাঝে সন্ধ্যাতারার উদয় হয়েছে যেন প্রকৃতির ভুলেই।

    মহাকালের বিচারে সন্ধ্যাতারার এই উদয়টা ক্ষণকালের লীলার মতো। তবু মূল্যহীন নয়। সে যেনো ক্ষণকালের ভিতরে সন্ধ্যার সহাস্য নিষ্প্রভ অধরের কোণে জেগে উঠা আনন্দের ছটা, যেন কোনো অভিমানিনীর ফেলে দেওয়া উজ্জ্বল রত্ন। কিম্বা অতি আদরে ধারণ করা দেবকুমারীর দুলের মতো।

    সঞ্চারী এবং আভোগে সন্ধ্যাতারার সৌন্দর্য নানাভাবে প্রকাশ পেয়েছে কবি-কল্পনায়। যেন আধখানা চাঁদের আলতা রাখার ভাঙা পাত্র, সেখান থেকে গড়িয়ে পড়া রঙ অস্তাকাশে তৈরি করে অনির্বচনীয় রঙের খেলা। সন্ধ্যায় চরাচরেরর সবকিছু যখন ধীরে ধীরে অন্ধকারে ডুবতে থাকে, আলো বলতে কিছু থাকে না, তখন তার মধ্যে একমাত্র সন্ধ্যাতারা এক মুঠো আলো হয়ে দ্যুতি ছড়ায়। কবি মনে করেন, সন্ধ্যাতারা যেন কোনো এক অজ্ঞাত দেবতার পায়ে নিজেকে নিবেদিত করার জন্য আকাশ-গঙ্গায় ভেসে বেড়ায়। কিন্তু তাঁর চরণমূলের সন্ধান সে পায় না। তার এই অন্তহীন চলা হয়ে ওঠে নিস্ফল।

     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি (পৌষ-মাঘ ১৩৪৮) মাসে এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে এই গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪২ বৎসর ৭ মাস।
     গ্রন্থ:
  • অগ্রন্থিত গান। নজরুল-রচনাবলী─দশম খণ্ড [নজরুল জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। বাংলা একাডেমী, জ্যৈষ্ঠ ১৪১৬। মে ২০০৯। ২৪৭ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ৩২৭]
  • নজরুল গীতি, অখণ্ড
    • প্রথম সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ৬ আশ্বিন ১৩৮৫। ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮
    • দ্বিতীয় সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ১ শ্রাবণ ১৩৮৮। ১৭ জুলাই ১৯৮১]
    • তৃতীয় সংস্করণ [ব্রহ্মমোহন ঠাকুর সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ৮ মাঘ ১৪১০। ২৩ জানুয়ারি ২০০৪। কাব্য-গীতি। ৬৯ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ১৯-২০]
    • পরিবর্ধিত সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। বৈশাখ শ্রাবণ ১৪১৩। এপ্রিল-মে ২০০৬] ৭৮ সংখ্যাক গান। পৃষ্ঠা: ১৬-১৭।
  • নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্‌ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান ১৮। পৃষ্ঠা ৬]
  •  নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (প্রথম খণ্ড)। স্বরলিপিকার: সুধীন দাশ। প্রথম প্রকাশ, তৃতীয় মুদ্রণ [কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। অগ্রহায়ণ ১৪০২। নভেম্বর ১৯৯৫। ১৮ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ৯২-৯৫]
  • রেকর্ড: এইচএমভি [১৯৪২ জানুয়ারি (পৌষ-মাঘ ১৩৪৮) । এন ২৭২৩৩। শিল্পী: ইলা ঘোষ।] [শ্রবন নমুনা]
  • সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম
  • স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: সুধীন দাশ নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (প্রথম খণ্ড)। প্রথম প্রকাশ, তৃতীয় মুদ্রণ [কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। অগ্রহায়ণ ১৪০২। নভেম্বর ১৯৯৫। ১৮ সংখ্যক গান] [নমুনা]
     
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি
    • সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের সুর।
      • রাগ: রাগের উল্লেখ নেই।
      • তাল: দাদরা
      • গ্রহস্বর: গা

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।