আল্লাহ্ রসুল বোল্ রে মন আল্লাহ্ রসুল বোল্ (allah rasul bol re mon)

 আল্লাহ্ রসুল বল্ রে মন আল্লাহ্ রসুল বোল্।
         দিনে দিনে দিন গেল তোর দুনিয়াদারি ভোল্॥
রোজ   কেয়ামতের নিয়ামত এই আল্লাহ্-রসুল বাণী
          তোর আখেরের ভুখের খোরাক পিয়াসের ঐ পানি
তোর   দিল্ দরিয়ায় আল্লাহ্-রসুল জপের লহর তোল্॥
তোর   স্ত্রী-পুত্র ভাই-বেরাদর কেউ হবে না সাথি
         আঁধার গোরে রইবি প'ড়ে জ্বালবে না কেউ বাতি।
   যে   নামে হেসে পার হবি তুই পুল-সেরাতের পোল্॥
(ওরে)  হাড়-ভাঙা খাটুনি খেটে ঘুরে ঘুরে পথে
          আনিস যা তুই লাগবে না তা তোর কাজে আকবতে।
    যে  যে নাম জ'পে পাবি রে তুই মোস্তফারই কোল্॥

  • ভাবার্থ: এই গানের 'আল্লাহ-রসুল বোল', জপমন্ত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই জপমন্ত্র শুধুই নাম-মন্ত্র নয়। এই জপমন্ত্র হলো- আল্লাহ-রসুলের বাণী। কবি এই নামের মহিমা উপলব্ধি করে- নিজেকে এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই বোল্  জপ করার জন্য আহ্বান করেছেন। নানা রকম ভোলবাজিতে জীবন অতিবাহিত হয়েছে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কবি সে সব অলীক মায়া ত্যাগ করে, 'আল্লাহ-রসুল বোল' বাণী উচ্চারণই মুক্তির একমাত্র উপায় হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

    কবি মনে করেন এই বোলই রোজ কিয়ামতে সৌভাগ্য বা অনুগ্রহের বাণী হয়ে উঠবে। জীবনের অন্তিম লগ্নে এই বাণীই ক্ষুধার্ত আত্মার খাদ্য এবং পিপাসিত চিত্তের তৃষ্ণা নিবারণী পানি হয়ে দেখা দেবে। তাই কবি তাঁর জীবন-নদীতে এই মন্ত্র-জপের তরঙ্গ উদ্বেলিত করার তাগিদ অনুভব করেছেন।

    মৃত্যুকালে স্ত্রী-পুত্র, ভাই বা জ্ঞাতিগোষ্ঠীর কেউ সাথে যাবে না। অন্ধকার কবরে একলা পড়ে রইবে প্রাণহীন দেহ, সেখানে বাতি জ্বালানোর জন্য কেউ পাশে থাকবে না। থাকবে শুধুই এই জপমন্ত্র। যে মন্ত্রের গুণে আত্মা পার হবে- পুল-সেরাত নামক জীবন-মরনের সংযোগ সেতু।

    হাড়-ভাঙা খাটুনি খেটে, জীবিকার অন্বেষণে পথে পথে ঘুরে যা কিছু অর্জিত হবে, তার কোন কিছুই আকবতে (ভবিষ্যতে, তথা পরকালে) কাজে লাগবে না। কিন্তু এই আল্লাহ-রসুলের বাণী ও নাম জপের গুণেই পাওয়া যাবে রাসুলের সস্নেহ আশ্রয়।
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে জানা যায় না। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে টুইন রেকর্ড কোম্পানি গানটি প্রথম রেকর্ড করে। সেই অনুযায়ী, ধারণা করা যায় যে, গানটি নজরুল ইসলামের ৪০ বৎসর বয়সে রচিত হয়েছিল।
     
  • রেকর্ড: টুইন। ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯ (১৮ মাঘ-১৬ ফাল্গুন ১৩৪৫)। এফটি ১২৭১৬। আব্দুল লতিফ [শ্রবণ নমুনা]
  • স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: রশিদুন্ নবী। [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, ষোড়শ খণ্ড। প্রথম সংস্করণ। নজরুল ইন্সটিটিউট আশ্বিন ১৪০৪/অক্টোবর ১৯৯৩। দ্বিতীয় গান।] [নমুনা]
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত, ইসলাম, বন্দনা (আল্লাহ-রসুল নাম)
    • সুরাঙ্গ: ভাটিয়ালি
  • তাল: কাহারবা
  • গ্রহস্বর: সা

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।