ঈদ মোবারক হো (eid mobarok ho)
ঈদ মোবারক হো ─
ঈদ মোবারক ঈদ মোবারক ঈদ, ঈদ মোবারক হো ─
রাহেলিল্লাহ্কে আপনাকে বিলিয়ে দিল, কে হলো শহীদ॥
যে কোরবানি আজ দিল খোদায় দৌলৎ ও হাশমত্,
যার নিজের ব’লে রইলো শুধু আল্লা ও হজরত,
যে রিক্ত হয়ে পেল আজি অমৃত-তৌহিদ॥
যে খোদার রাহে ছেড়ে দিল পুত্র ও কন্যায়
যে আমি নয়, আমিনা ব'লে মিশলো আমিনায়।
ওরে তারি কোলে আসার লাগি' নাই নবীজীর নিদ॥
যে আপন পুত্র আল্লারে দেয় শহীদ হওয়ার তরে
ক্বাবাতে সে যায় না রে ভাই নিজেই ক্বাবা গড়ে
সে যেখানে যায় ─ জাগে সেথা ক্বাবার উম্মিদ॥
- ভাবসন্ধান: ইসলাম ধর্মের দুটি আনন্দময় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদ। এই গানটি রচিত হয়েছিল ঈদ প্রীতি সম্মেলন উপলক্ষে। পরে গানটি ব্যবহৃত হয়েছিল বেতারে ঈদজ্জোহা গীতিআলেখ্যে। তাই এ গানটিকে ঈদজ্জাহার গান হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
এই ঈদ কাদের জন্য যথার্থ আনন্দময় এবং তাৎপর্যমণ্ডিত হতে পারে তারই ইঙ্গিত পাওয়া যায় এই গানে। গানটির স্থায়ীতে বিষয়টি উপস্থাপিত হয়ে হয়েছে প্রশ্নাকারে। প্রশ্নটি হলো- রাহে লিল্লাহকে (আল্লাহর পথকে) তথা আল্লাহকে পরম আরাধ্য সত্তা ভেবে নিজেকে বিসর্জন দেয়, আল্লাহর পথে কে নিজের জীবন উৎসর্গ করে শহীদ হয়, যেন তারই জন্য ঈদ মোবারক (ঈদের আনন্দ উদযাপন কল্যাণময় হোক) ধ্বনি। এই গানের বারবার 'ঈদ মোবারক'
ধ্বনি হয়ে উঠেছে শ্লোগানধর্মী, আর তা উপস্থাপিত হয়েছে ইউরোপী অর্কেষ্ট্রা ধর্মী সম্মিলিত উদ্দীপনামূলক গানের মতো করে।
স্থায়ীতে প্রশ্ন রাখা হয়েছে- 'ঈদ মোবারক' কেন এবং কাদের জন্য? এরই উত্তর গানের প্রতিটি তুকে উপস্থাপিত হয়েছে নানা ভাবে। প্রথম অন্তারতে বলা হয়েছে- আল্লাহর পথে সম্পদ ও হাশমত (গৌরব) কোরাবনি (বিসর্জন) দেব যারা। যাঁদের কাছে আল্লা ও রসুল ছাড়া নিজের জন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। তারাই হয়ে উঠেন 'ঈদ মোবারক' ধ্বনির যোগ্য।
দ্বিতীয় অন্তরাতে বলা হয়েছে,যিনি খোদার রাহে (খোদার পথে) ত্যাগ করেছেন তার পুত্র ও কন্যাকে । যিনি তাঁর আমিত্বকে বিসর্জন দিয়েছেন, নিজেকে আমিনা (বিশ্বাসযোগ্য) বলে পরিচয় দিয়েছেনে এবং আমিনাতে (একেশ্বর দশা) মিশে গিয়ে যে নিজকে রিক্ত করেছেন, ঈদের দিনে তাঁরাই লাভ করেন অমৃত-তৌহিদকে (অমৃতময় একেশ্বর)। মা আমিনার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন নবি। এখানে আমিন ব্যবহার করা হয়েছে ভিন্নার্থে। এখানে আমিনা হলো 'একশ্বরের দর্শন'। এই দর্শনে আশ্রয় পাওয়ার জন্য নবির চোখে ঘুম ছিল না। তিনি বহু বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছেন আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য। এমনি ভাবে যাঁরা অমৃত-তৌহিদকে গ্রহণ করেছেন, তাদের জন্য 'ঈদ মোবারক'।
তৃতীয় অন্তরাতে বলা হয়েছে, যে আপন পুত্রকে উৎসর্গ করেছিলেন শহিদ হওয়ার জন্য। এখানে হজরত ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর পুত্র ইসমাইলকে স্বহস্তে কুরবানীর দেওয়ার উদ্যোগের বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। যিনি কাবাগৃহ তৈরি করেছিলেন। তাই বলা হয়েছে 'ক্বাবাতে সে যায় না রে ভাই নিজেই ক্বাবা গড়ে'। তিনি সেখানেই যান, যেখানে জেগে থাকে তাঁর কাবা দর্শনের গৌরবর উম্মিদ (আশা, আকাঙ্ক্ষা)। শেষের এই অন্তরা উপস্থাপন করা হয়েছে পরমত্যাগের মহিমাকে উদাহরণ হিসেবে। যিনি এরূপ আল্লার পথে পরম আনুগত্যে নিজকে বিসর্জন দিতে পারবেন, তাঁর জন্য 'ঈদ মোবারক' ধ্বনি।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি (পৌষ-মাঘ ১৩৫০) মাসে, রিগ্যাল রেকর্ড কোম্পানি থেকে এই গানটির একটি রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪৪ বৎসর ৫ মাস।
- রেকর্ড: রিগ্যাল। জানুয়ারি ১৯৪৪ (পৌষ-মাঘ ১৩৫০) । আরএল ১২২১। শিল্পী: আব্বাস উদ্দিন। সুর: দেলওয়ার হোসেন। [শ্রবণ নমুনা]
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ৭২৫]
- বেতার: ঈদজ্জোহা। গীতিআলেখ্য। কলকাতা বেতারকেন্দ্র। [৯ জানুয়ারি ১৯৪১ (বৃহস্পতিবার ২৫ পৌষ ১৩৪৭)।
রাত ৮.০৫ -৮.৩৯ মিনিট।
সূত্র: বেতার জগৎ। ১২বর্ষ ১ম সংখ্যা। ১ জানুয়ারি, ১৯৪১। পৃষ্ঠা: ৪২
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: রশিদুন্ নবী। নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (বিংশ খণ্ড)। [কবি নজরুল ইন্সটিটিউট] চতুর্থ গান [নমুনা]
- সুরকার: দেলওয়ার হোসেন (চিত্ত রায়)
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। ইসলামী গান। অনুষ্ঠান। ঈদজ্জাহা।
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য
- তাল: কাহারবা
- গ্রহস্বর: পা