এ কি অপরূপ রূপের কুমার হেরিলাম সখি যমুনা কূলে (eki oporup ruper kumar herilam)
এ কি অপরূপ রূপের কুমার হেরিলাম সখি যমুনা কূলে,
তার এ সুনীল লাবনি গলিয়া গলিয়া ঢালিয়া পড়িছে গগন-মূলে॥
যেন কমল ফুটেছে সখি, সহস্র দল রূপে-কমল ফুটেছে,
রূপের সাগর মন্থন করি’ সখি চাঁদ যেন উঠেছে। সখি গো —
কালো সে রূপের মাঝে হয়ে যায় হারা
কোটি আলো-রাধিকা-রবি, শশী, তারা,
প্রেম-যমুনার তীরে সই আমি নিরবধি দেখি তারে,
দেখি আর চেয়ে রই
আমি এই রূপ চেয়ে থাকি
সখি জনমে জনমে জীবনে মরণে এই রূপ চেয়ে থাকি।
ঐ মোহন কালোর গহন কাননে হারাইয়া যাক আঁখি॥
- ভাবসন্ধান: শ্রীকষ্ণের অতুলনীয় রূপকে ভক্তিরসে উপস্থাপন করা হয়েছে এই গানে। কল্প-বাস্তবের ভাবদর্শনে মোহিত কবি শ্রীকৃষ্ণকে অনুভব করেছেন তাঁর মনোলোকে। এ শুধুই কৃষ্ণের রূপে মুগ্ধ কবির কল্পলোকের অনুভব। কবি সে রূপ-মোহিত দর্শনে আত্মহারা। এই গানের অপরূপ রূপকল্পের বাণী-বিন্যাসে রচিত হয়েছে অপূর্ব সৌন্দর্য-চিত্র।
কবির মনোলোকের দেখা শ্রীকৃষ্ণ, তাঁর অতুল সৌন্দর্য বৈভবে হয়ে উঠেছেন- যমুনা কূলে অপরূপ রূপের কুমার। তাঁর সুনীল বরন লাবণ্য যেন বিগলিত ধারায় দিকচক্রবালকে (গগন-মূল) বর্ণিল করে তুলেছে। এই রূপকুমার রূপদর্শনে মুগ্ধ বিস্মিত কবি অনুভব করেন, যেন কৃষ্ণের রূপকমল সহস্র দল মেলে বিকশিত হয়েছে, যেন রূপসাগরের মন্থন শেষে চিদাকাশে উদ্ভাসিত হয়েছে চন্দ্ররূপী কৃষ্ণ। কবি আত্মহারা হয়ে যান- অগণন আলকময়ী রাধিকার আলো প্রদায়ী সূর্বরূপী কৃষ্ণের কালো রূপের সৌন্দর্য বিভায়। কবি কল্পলোকে এ রূপ প্রতিনিয়ত অনুভব করেন প্রেমযমুনার তীরে বসে। কবি জনমে জনমে জীবন-মরণে বিভোর হয়ে থাকেন কৃষ্ণের রূপে। কৃষ্ণের এই মোহিত করা কালো রূপ দর্শনের গভীর অরণ্যে হারিয়ে যেতে চান আত্মহারা কবি।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার ২৬ অগ্রহায়ণ ১৩৪২), নজরুলের সাথে রেকর্ড কোম্পানির চুক্তিপত্রে গানটির উল্লেখ ছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৬ বৎসর ৬ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ৬৬৩]
- রেকর্ড:
- ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার ২৬ অগ্রহায়ণ ১৩৪২), টুইন রেকর্ড নজরুলের সাথে রেকর্ড কোম্পানির চুক্তিপত্রে গানটির উল্লেখ ছিল।
- টুইন। জানুয়ারি ১৯৩৬ (পৌষ-মাঘ ১৩৪২) এফটি ৪২১২। শিল্পী: রেণু বসু [শ্রবণ নমুনা]
- বেতার: রূপানুরাগ। পালা-কীর্তন। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারি (১০ ফাল্গুন ১৩৪৭), কলকাতা-ক এর তৃতীয় অধিবেশনে রাত ৮ টা থেকে ৮.৩৯ পর্যন্ত প্রচারিত হয়েছিল।
সূত্র: বেতার জগৎ। ১২শ বর্ষ ৪র্থ সংখ্যার [পৃষ্ঠা ১৭২, ২১০]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: আহসান মুর্শেদ [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, পঁয়তাল্লিশতম খণ্ড, কবি নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট। জুন ২০১৮] গান সংখ্যা ৫। পৃষ্ঠা: ২৭-৩০ [নমুনা]
- পর্যায়: