এ কোন্ মধুর শরাব দিলে আল আরাবি সাকি (e kon modhur sorab dile )
এ কোন্ মধুর শরাব দিলে আল আরাবি সাকি,
নেশায় হলাম দিওয়ানা যে রঙিন হল আঁখি॥
তৌহিদের শিরাজি নিয়ে
ডাকলে সবায় যারে পিয়ে,
নিখিল জগৎ ছুটে এলো রইল না কেউ বাকি॥
বসলো তোমার মহ্ফিল দূর মক্কা মদিনাতে,
আল্-কোরানের গাইলে গজল শবে কদর রাতে।
নরনারী বাদশা ফকির
তোমার রূপে হয়ে অধীর
যা ছিল নজ্রানা দিল রাঙা পায়ে রাখি'॥
- ভাবসন্ধান: এই গান প্রথাগতভাবে শরিয়তি নাত-এ-রসুল হলেও উপস্থাপন করা হয়েছে সুফিবাদী রহস্যময় বাণীতে। এই গানের 'আল আরাবি সাকি'র আক্ষরিক অর্থ হলো- আরব দেশের মদ পরিবেশনকারিণী। কিন্তু সুফি দর্শনে এর অর্থ হলো- ইসলাম ধর্মের মধুর শরাব (মাদকীয় দর্শন) পরিবেশনকারী হজরত মুহম্মদ (সাঃ)। এই মধুর শরাব পান করে, কবি দেওয়ানা (উদাসী, পাগল, বিবাগী) হয়েছেন। তাঁর ধর্মদর্শনের বর্ণাঢ্য অনুভবে দৃষ্টি হয়ে গেছে রঙিন।
এই শরাবকে কবি তুলনা করেছেন পারশ্যের শিরাজ নগরীর মদের সাথে। এই গানের তৌহিদের শিরাজি হলো একেশ্বরবাদী দর্শন। এই মোহনীয় দর্শন গ্রহণ করার জন্য নবি সবাইকে ডাক দিয়েছিলেন। আর তাঁর ডাকে নিখিল জগতের সবাই ছুটে এসেছিল এই শরাব পান করার জন্য। ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায়, নবির ইসলাম ধর্মের প্রচার শুরু হয়েছিল মক্কা থেকে। পরে হিজরতে মাধ্যমে মদিনায় গেলে, মক্কা বিজয়ের পূর্ব-কাল পর্যন্ত সেখান থেকে ইসলাম ধর্ম প্রচার প্রচার করেছিলেন। কবি সেই ইতিহাস অনুসরণে উল্লেখ করেছেন- 'বসলো তোমার মহ্ফিল দূর মক্কা মদিনাতে'। তিনি শবেরাতের রাতে পরিবেশন করলেন আল কোরআনের গজল (প্রেমের গান)। সে আসরে নরনারী, বাদশা ফকির সবাই ছুটে এসেছিলেন- সাকিরূপী নবির কাছে তাঁরা সব কিছু উজার করে নজরানা (দর্শনী) দিলেন।
- রচনাকাল : গানটির রচনাকাল সম্পর্কে জানা যায় না। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের জুন (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় ১৩৪৪) মাসে টুইন রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশ হয়েছিল। সেই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩৮ বৎসর।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, (নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২)-এর ৬০১ সংখ্যক গান।
- রেকর্ড: টুইন। জুন ১৯৩৭ (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪৪)। এফটি ৪৯২৭। শিল্পী: আব্বাসউদ্দীন আহমদ।[শ্রবন নমুনা]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: আহসান মুর্শেদ [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, সাতাশ খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা। কার্তিক, ১৪১২/অক্টোবর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ] সপ্তম গান [নমুনা]
- সুরকার: কমল দাশগুপ্ত
- পর্যায়: