এ দেবদাসীর পূজা লহ হে ঠাকুর (e debdashir puja loho)
এ দেবদাসীর পূজা লহ হে ঠাকুর।
দয়া কর, কথা কও, হ’য়ো না নিঠুর॥
লহ মান অভিমান, দেহ প্রাণ মন
মম প্রেম-ধূপ নাও রূপচন্দন,
এই লহ আভরণ, চুড়ি-কঙ্কন ─
চোখের দৃষ্টি নাও কণ্ঠের সুর॥
আজ, শেষ ক’রে আপনারে দিব তব পায়,
চাও চাও মোর কাছে যাহা সাধ যায়।
কহিবে না কথা কি গো তুমি কিছুতেই?
আরতির থালা তবে ফেলে দিনু এই,
নাচিব না, বাজুক না মৃদঙ্গ তাল ─
খুলিয়া রাখিনু এই পায়ের নূপুর॥
- ভাবসন্ধান: এই গানে আরাধ্য দেবতার সাথে দেব-অনুরাগিণীর মান-অভিমানের লীলা উপস্থাপিত হয়েছে। এই গানের অনুরাগিণী শুধুই নিবেদিতা প্রাণা নয়। তার চেয়ে বেশী যেন সে দেবতার প্রেমিকা। তাই সে দেবতাকে পূজা করে ঊর্ধে না রেখে, পাশে চেয়েছে- পূজার ছলে দয়িতের মতো। নিজেকে সে দেবতার ভক্তরে দাসী পরিচয় দিলে, গানের ভাষায় সে হয়ে উঠেছে প্রেমদাসী।
এই অনুরাগিণীর সকাতর অনুনয় তার ঠাকুরের (আরাধ্য দেবতা) কাছে, তিনি যেন দয়া করে তার পূজা গ্রহণ করেন। তিনি যেন বাঙ্ময় হয়ে ওঠেন তার সাথে সহচরের মতো। বিনিময়ে অনুরাগিণী নিবেদন করতে চায় তার সকল মান-অভিমান, দেহ-প্রাণ-মন, অঙ্গের আভরণ ও অলঙ্কার, চোখের দৃষ্টি, কণ্ঠের সুর, সব সব কিছু। তার এই সবকিছুর বিনিয়ে অনুরাগিণী চায় শুধু তার দেবতার দয়া, যেন তিনি ধরা দেন তার কাছে।
তার কাছে দেবতার যা কিছু চাওয়ার আছে, তার সবকিছু নিবেদনের জন্য দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ এই অনুরাগিণী। তবু সাড়া দেবতা দেয় না। তাই অভিমান জাগে অনুরাগিণীর মনে। বলে, সে আরতির থালা ফেলে দেবে, যতই বাজুক মৃদঙ্গের নৃত্যের ছন্দ সে নাচবে না। সে খুলে রাখবে তার পায়ের নূপুর।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪৬) মাসে, এইচএমভি রেকরড কোম্পানি থেকে গানটি প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ৩ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১১৬০]
- রেক্র্ড: এইচএমভি । সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ (ভাদ্র- আশ্বিন ১৩৪৬)। এন ১৭৩৪৪। শিল্পী: পদ্মরাণী চট্টোপাধ্যায় [শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপি: নিতাই ঘটক
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:
- আহসান মুর্শেদ। [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, তেপান্নতম খণ্ড, কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, আশ্বিন ১৪২৮। সেপ্টেম্বর ২০২১] গান সংখ্যা ৬। পৃষ্ঠা: ৩১-৩৪ [নমুনা]
- পর্যায়: