একাদশীর চাঁদ রে ওই রাঙা মেঘের পাশে (ekadoshir chad re oi)
একাদশীর চাঁদ রে ওই রাঙা মেঘের পাশে
যেন কাহার ভাঙা কলস আকাশ-গাঙে ভাসে॥
সেই কল্সি হতে ধরার ‘পরে
অঝোর ধারায় মধু ঝরে রে
দলে দলে তাই কি তারার মৌমাছিরা আসে॥
সেই মধু পিয়ে ঘুমের নেশায় ঝিমায় নিশীথ রাতি
বন-বধূ সেই মধু ধরে ফুলের পাত্র পাতি’।
সেই মধু এক বিন্দু পিয়ে
সিন্ধু ওঠে ঝিল্মিলিয়ে রে
সেই চাঁদেরই আধখানা কি তোমার মুখে হাসে॥
- ভাবসন্ধান:এই গানে মূলত একাদশী চাঁদের জ্যোৎস্নার রূপকে নানা রূপকতার মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। শেষ পঙ্ক্তিতে এসে কবি চাঁদ ও তার জ্যোৎস্নাকে তাঁর প্রেয়সীর রূপের সাথে একীভূত করে দিয়েছেন।
কবি তাঁর কল্প-লোকে রাঙা মেঘের পাশে একাদশীর চাঁদকে দেখেছেন- আকাশ-গঙ্গায় ভাসমান মোহময়ী ভাঙা কলসীকে অফুরান মধুস্রাবী হিসেবে। আর এর জ্যোৎস্না যেন সেই ভাঙা কলস থেকে ঝরে পড়া মধুরধারা। জ্যোৎস্নার স্নিদ্ধ ও মধুর প্রভা যখন পৃথিবীর বুকে নেমে আসে, তখন আকাশের অগণন তারা যেন তার আস্বাদ নিতে উন্মুখ হয়ে ওঠে।
একাদশীর চাঁদের জ্যোৎস্নায় রয়েছে সৌন্দর্যের মাদকতা। এর প্রভাবে চরাচর এক মধুর নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। রাত্রি যেন এই জ্যোৎস্না-মধু পান করে নেশায় ঝিমিয়ে পড়ে, আর বনবধূ (বনদেবী) যেন সে মধু সংগ্রহের জন্য পাত্র পেতে রাখে। এই মধুর এক বিন্দু পান করেই সাগর যেন জোয়ারে ভাসে।
শেষ পঙ্ক্তিতে এসে কবি বলেন- সেই চাঁদেরই আধখানা কি তার প্রিয়তমার মুখের হাসে। কবি মনে করেন তাঁর প্রেয়সীর মুখ যেন একাদশীর চাঁদের মতই সৌন্দর্যের আধার। তার মধুস্রাবী মুখের হাসি যেন জ্যোৎস্নার মতই মধুময়ী, মোহময়ী। এই পঙ্ক্তিটি গানটিকে শৃঙ্গার রসে সিক্ত করে দেয়।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪৯) মাসে এইচএমভি থেকে এই গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪৩ বৎসর ৬ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১২৮]
- রেকর্ড: এইচএমভি। [ডিসেম্বর ১৯৪২ (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪৯)। এন ২৭৩৪০। শিল্পী: সত্য চৌধুরী [শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- নীলিমা দাস। [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, ঊনত্রিশতম খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা। শ্রাবণ ১৪১৩/আগষ্ট ২০০৬] চতুর্থ গান। [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: মহাজাগতিক, চন্দ্র, শৃঙ্গার
- সুরাঙ্গ: ভজন
- তাল: দাদরা
- গ্রহস্বর: পা