পাকা ধানের গন্ধ-বিধুর হেমন্তের এই দিন-শেষে (paka dhaner gondho-bidhur hemonter)
একি বেদনার উঠিয়াছে ঢেউ দূর সিন্ধুর ‘পারে, নিশীথ-অন্ধকারে।
পূরবের রবি ডুবিল গভীর বাদল-অশ্রু-ধারে, নিশীথ-অন্ধকারে॥
ঘিরিয়াছে দিক ঘেন ঘোর মেঘে
পূবালী বাতাস বহিতেছে বেগে,
বন্দিনী মাতা একাকিনী জেগে’ কাঁদিতেছে কারাগারে –
শিয়রের দীপ যত সে-জ্বলায় নিভে যায় বারে বারে॥
মুয়াজ্জিনের কণ্ঠ নীরব আজিকে মিনার-চূড়ে,
বহে না শিরাজ বাগের নহর, বুলবুল গেছে উড়ে’।
ছিল শুধু চাঁদ, গেছে তরবার
সে-চাঁদও আঁধারে ডুবিল এবার,
শিরতাজ-হারা কাঁদে মুসলিম অস্ত-তোরণ-দ্বারে –
উঠিতেছে সুর বিদায়-বিধুর পারাবার-পরপারে॥
ছিল না সে-রাজা কেঁপেছে বিশ্ব তবু গো প্রতাপে তার,
শত্রু-দুর্গে বন্দী থাকিয়া খোলনি সে-তরবার।
ছিল এ ভারত তারি পথ চাহি’
বুকে বুকে ছিল তারি বাদশাহী,
ছিল তার তরে ধূলার তখ্ত্ মানুষের দরবারে –
আজি বরষায় তারি তরবার ঝলসিয়ে বারে বারে॥
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর দিলীপকুমার রায়, ইউরোপ ভ্রমণ শেষে কলকাতায় ফিরে আসেন। ২৮ ডিসেম্বর (২৯ অগ্রহায়ণ ১৩৩৪) কলকাতা ইউনিভার্সিটি ইন্স্টিটিউট হলে তাঁকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। এই অনুষ্ঠানে দিলীপকুমার রায়ের উদ্দেশ্যে নজরুল তাঁর স্বরচিত কবিতা 'সুরের দুলাল' পাঠ করেন। পরে এই কবিতাটিতে সুররোপ করে গানে পরিণত করেন। কল্লোল পত্রিকার মাঘ ১৩৩৪ সংখ্যায় এই রচনাটি গান হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২৮ বৎসর ৭ মাস।
- গ্রন্থ:
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইন্সটিটিউট। ফেব্রুয়ারি ২০১২)। ১৫৩৫ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ২৯৬-২৯৭।
- সন্ধ্যা
- প্রথম সংস্করণ [১৩৩৬ বঙ্গাব্দের ভাদ্র (আগষ্ট ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ।
- নজরুল-রচনাবলী─ চতুর্থ খণ্ড [বাংলা একাডেমী। ২৫ মে, ২০০৭। সন্ধ্যা। শিরোনাম 'সুরের দুলাল্'। পৃষ্ঠা: ৭৭-৭৮]
- পত্রিকা: কল্লোল, মাঘ ১৩৩৪ সংখ্যা। গান।